খুলনায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম

2190

॥ জাহিদ হোসেন ॥
খুলনা, ২০ জুন, ২০২১ (বাসস): এই মুহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত শব্দ ‘করোনা’। মহামারি করোনার কারণে পুরো বিশ্বের চেহারাই বদলে গেছে। এই মহামারির ঢেউ বাংলাদেশে লেগেছে ২০২০ সালের মার্চ মাসে। এরপর থেকে সরকারকে নিতে হয়েছে নানা পদক্ষেপ। বিশেষ করে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতি। মহামারির শুরু থেকেই স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সরকার কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশে প্রথমবারের মত সরকার প্রচলন করেছে ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতি। অর্থাৎ ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রচলিত শিক্ষা প্রদানের ধারনাটি বাস্তবায়ন করছে। যার মাধ্যমে সকল বয়সের শিক্ষার্থীরা দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে মোবাইল এবং ল্যাপটপের মাধ্যমে ক্লাশে পাঠদান শিখতে পারে।
এই করোনা মহামারির(কোভিড-১৯) মধ্যেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরে খুশি সরকারী খুলনা জেলা স্কুলের শারীরিক প্রতিবন্ধী এসএসসি পরীক্ষার্থী শাওন দাস(১৬)।
স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পড়াশোনার বিষয়ে হতাশার কথা জানিয়ে,বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে(বাসস) শাওন বলেন,‘করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমার বাবা-মা খুবই উদ্বিগ্ন পড়েন’। তিনি বলেন,‘ তবে গত বছর খুলনা জেলা প্রশাসকের দেয়া ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোনের সাহায্যে আমি এখন বিভিন্ন ডিজিটাল এ্যাপের মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারছি।’
শহরের বাগমারা এলাকার বাসিন্দা শাওনের বাবা অগ্রনী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শান্তি রঞ্জন দাস বলেন,‘ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতিতে আমার ছেলে মোবাইল ফোন এবং শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন এ্যাপ ব্যাবহার করে অনলাইনে ক্লাশ চালিয়ে যেতে পারায় আমরা আনন্দিত।’
শাওন দাসের মত এই এলাকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, উচ্চমাধ্যমিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী নতুন চালু হওয়া ডিজিটাল শিক্ষার সুবিধা পাচ্ছে।
যোগাযোগ করা, জেলা শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন বাসসকে জানান, ৫৫৫ টি বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি মাদ্রাসা ও স্কুল শিক্ষার্থী কার্যত আইসিটি ব্যবহার করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। সাত হাজার শিক্ষক জুম অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাশ নিচ্ছেন। করোনাভাইরাস জনিত মহামারির কারণে ভার্চুয়াল পাঠ দানে গত বছর থেকেই কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মামুন আলীম বাসসকে বলেন, ‘ইউটিউব চ্যানেলে ৮০০ টিরও বেশি ক্লাস আপলোড করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োাজনীয় অনলাইন পাঠ গ্রহণ করতে পারে’।
‘গুগল থেকে সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করার পরে প্রাথমিক শিক্ষকরা গত মাস থেকে ক্লাস্টার ভিত্তিক ক্লাস নিচ্ছেন’। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা সংসদ টেলিভিশন চ্যানেল এবং এফএম ব্যান্ড বেতার থেকে পাঠও নিতে পারে।
তিনি আরো বলেন,“ ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষকরা নিয়মিত প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে পারেন। তারা ন্যাশনাল প্রাইমারি এডুকেশন একাডেমী গৃহীত বার্ষিক সিলেবাসটিও অনুসরণ করছেন।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি এবং শিক্ষা) মোঃ সাদেকুর রহমান ভার্চুয়াল ক্লাস সম্পর্কে বাসসকে বলেন, জেলায় মোট ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭১ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন।
কমপক্ষে ৬ হাজার ৩৯৯ জন শিক্ষক বিভিন্ন অনলাইন প্লাটাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইন পাঠ দিচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন কোভিড মহামারির কারণে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা উপভোগ করছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হেলাল হোসেন বাসসকে বলেন, খুলনায় প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী জুম অ্যাপ, ফেসবুক এবং ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে ডিজিটালভাবে শিক্ষা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, “ডিজিটাল সেকেন্ডারি স্কুল, সুন্দরবন অনলাইন স্কুল, খুলনা অনলাইন স্কুল, সংসদ টেলিভিশনের আমার ঘর আমার স্কুল, এটুআই এর কিশোর বাতায়ন অনলাইন স্কুল এবং খুলনার কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল এবং ওয়েবসাইট পাঠদানের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
তিনি জানান, সরকার সুবিধাবঞ্চিত ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপ,মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন আইসিটি ভিত্তিক সরঞ্জাম দিয়েছে। যাতে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো ডিজিটালাইজের সুবিধা উপভোগ করতে পারে।