বাসস দেশ-৪৪ : প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানই ভবিষ্যতের জ¦ালানি নিরাপত্তার অন্যতম উপায়

143

বাসস দেশ-৪৪
ডিসিসিআই-সেমিনার
প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানই ভবিষ্যতের জ¦ালানি নিরাপত্তার অন্যতম উপায়
ঢাকা, ১৯ জুন, ২০২১ (বাসস) : বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণের জন্য শিল্পখাতের প্রয়োজন অনুযায়ী জ¦ালানি সরবরাহ ও সেই সাথে পরিকল্পিত উপায়ে জ¦ালানির পরিবেশবান্ধব ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। তবে এর জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান বৃদ্ধির পাশাপাশি বিকল্প জ¦ালানি হিসেবে এলপিজি ও এলএনজি আমদানি এবং উৎপাদনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শিল্পখাতের জ¦ালানি উৎসের ভবিষ্যৎ : এলপিজি এবং এলএনজি’ বিষয়ক ভার্চ্যুয়াল সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্প প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী,বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফেকচার্স এসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান আমের আলী হোসেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডীন অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির সহকারী অধ্যাপক মো. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এন কে এ মবিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
পেট্রোবাংলার গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক পরিচালক (অপারেশন) ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার সালেক সুফী ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, গত ৫ দশকে শিল্পখাতের গতিধারাকে চলমান রাখতে প্রাকৃতিক গ্যাস জ¦ালানির অন্যতম যোগদান হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে, তবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সম্প্রসারণের ফলে জ¦ালানির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায়ই শিল্পখাতে জ¦ালানি সংকট দেখা যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে শিল্পখাতের চাহিদামত জ¦ালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই, সেই সাথে এখাতে পরিকল্পিত উপায়ে পরিবেশবান্ধব ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পখাতে চাহিদামাফিক জ¦ালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণে প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান বৃদ্ধির পাশাপাশি বিকল্প জ¦ালানি হিসেবে এলপিজি ও এলএনজি আমদানির উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, দেশের আভ্যন্তরীন চাহিদার ২ শতাংশ মেটানো হয় এলপিজির মাধ্যমে। প্রান্তিক পর্যায়ে গৃহস্থালী ও শিল্পখাতে এলপিজি এবং এলএনজির চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টানরশিপের মাধ্যমে স্টোরেজ সুবিধা নিশ্চিতকরনের আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি দ্রুততার সাথে এলপিজি ও এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান, পাশাপাশি এখাতের সার্বিক উন্নয়নে একটি সমন্বিত টেকসই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জোরারোপ করেন।
জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন,সরকার গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং জকিগঞ্জে সর্বশেষ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, সেখান থেকে দীর্ঘসময় ধরে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে, এর জন্য প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। তিনি বলেন, করোনা মহামারীকালীন সময়েও ১০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, অনশোরে সক্ষমতা থাকায় বাপেক্সের মাধ্যমে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো অব্যাহত রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন,এলএনজি ব্যবসায় ঝুঁকি কম থাকায় বর্তমানে সকলেই এর দিকে ঝুঁকছে, এলপিজির বাজার প্রায় ১২ লাখ টন এবং ২৯টি কোম্পানী স্থানীয় বাজারে এলপিজি অপারেটর হিসেবে কাজ করছে, তবে ৫৬টি কোম্পানীকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।তিনি জানান, ছোট ছোট জাহাজে এলপিজি আমদানি করায় খরচ বাড়ছে। তবে মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হলে, এ খরচ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আনিছুর রহমান বলেন, দেশীয় শিল্পখাতে এলপিজির ব্যবহার এখনও অনেক কম, তবে এলপিজি ও এলএনজির টার্মিনাল স্থাপন এবং স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দাম কমানো সম্ভব। তিনি জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন এলপিজি আমদানী হয়েছিল, যার মধ্যে ১ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে শিল্পখাতে এবং সিরামিক, মটর সাইকেল, বাইকসাইকেল, স্টিল ও চা শিল্পেই বেশি ব্যবহার করা হয়। ইতোমধ্যে এলপিজি খাতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার মত বিনিয়োগ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গ্যাস সংযোগ নিতে তিতাসে সংষ্কার কাজ চালানো হচ্ছে, বর্তমানে শিল্পখাতে গ্যাস সংযোগ নিতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয় না এবং পরিকল্পিত শিল্প অঞ্চলে শিল্প-কারখান স্থাপনে উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন,বর্তমানে আমাদের গ্যাসের রিজার্ভ ৬ টিসিএফ এবং সারাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যে ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। তিনি জানান, বর্তমানে ৩৩’শ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাসের মধ্যে নিজস্ব উৎপাদিত গ্যাসের ৭৪ শতাংশ আসে নিজস্ব খাত থেকে বাকী ২৬ শতাংশ আসে এলএনজি থেকে এবং এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালে দেশীয় উৎপাদন হবে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আমদানিখাত থেকে আসবে ৮৩ শতাংশ, সেক্ষেত্রে শিল্পখাতসহ সকল খাতে ব্যয় বাড়বে। এমন বাস্তবতায় অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন এবং এক্ষেত্রে সরকারের সাথে বেসরকারিখাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
এছাড়াও অনুসন্ধানের জন্য দীর্ঘময়োদী পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত আবশ্যক এবং একাজে একটা মানসম্মত ডাটা সেন্টার উন্মুক্ত করা খুবই জরুরী তিনি অভিহিত করেন।
ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার সালেক সুফী মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, শিল্পখাতে প্রাথমিক জ¦ালানী সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে আমাদেরকে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবাহরের যৌক্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, গ্যাস অনুসন্ধানে বর্তমানে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যুগোপযোগী নয় এবং অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের ৩০তম স্থানে রয়েছে। সহনশীল দামে এলপিজি এবং এলএনজি সরবরাহের লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের উপর তিনি জোরারোপ করেন।
বাসস/এএসজি/আরআই/২০৩৫/অমি