ইউরো ২০২০: পিছিয়ে পড়েও ডেনমার্ককে পরাজিত করে নক আউট পর্বে বেলজিয়াম

1761

কোপেনহেগেন, ১৮ জুন ২০২১ (বাসস) : কেভিন ডি ব্রুইনার দুর্দান্ত পারফরমেন্সে পিছিয়ে পড়েও ডেনমার্ককে ২-১ গোলে পরাজিত করে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের শেষ ১৬ নিশ্চিত করেছে বেলজিয়াম। কোপেনহেগের পারকেন মাঠে কাল পুরো ম্যাচ জুড়েই ছিল ড্যানিশ মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের দ্রুত সুস্থতার জন্য আবেদনের সুর।
ইউসুফ পলসেনের দ্বিতীয় মিনিটের গোলেই এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিক ডেনমার্ক। কিন্তু সেই লিড ধরে রাখা সম্ভব হযনি। বিরতির পর বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে এসেই বেলজিয়ান অধিনায়ক কেভিন ডি ব্রুইনা নিজেকে আরো একবার দলের প্রাণভোমরা হিসেবে প্রমান করতে ভুল করেননি। ইনজুরির জন্য প্রথম ম্যাচে অনুপস্থিত থাকার পর কালই প্রথমবারের মত এবারের ইউরোতে মাঠে নেমেছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির এই তারকা। থ্রোগান হ্যাজার্ডকে দিয়ে সমতায় ফেরানোর পর দলের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেছে ডি ব্রুইনা।
ম্যাচের ঠিক ১০ মিনিটের সময় এক মিনিটের জন্য এরিকসেনের জন্য ম্যাচটি বন্ধ রাখা হয়। ১০ নম্বর জার্সিধারী এরিকসেন ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ডেনমার্কের প্রথম ম্যাচটিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাঠেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার থাকলে ডেনমার্ককে হয়তবা দুই ম্যাচে টানা পরাজয় বরণ করতে হতো না, এমনটাই বিশ্বাস করেন সতীর্থরা। দুই ম্যাচে পরাজয়ে টেবিলের তলানিতে থাকা ড্যানিশদের জন্য এখন পরের রাউন্ডে ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠে উপস্থিত প্রায় ২৫ হাজার সমর্থক ম্যাচটি যখন বন্ধের সময় বড় একটি ব্যানার উঠিয়ে এরিকসেনকে শুভকামনা জানিয়েছে, যেখানে লেখা ছিল, ‘পুরো ডেনমার্ক তোমার সাথে আছে।’
ড্যানিশ কোচ কাসপার হালমান্ড বলেছেন, ‘এই ফলাফলে আমি সত্যিই হতাশ। এই ম্যাচটি থেকে আমি খুব বেশী কিছু আশা করিনি। কিন্তু এই দলের প্রতি আমার যে শ্রদ্ধা আছে তা বলে বোঝাতে পারবোনা। চারদিন আগে পুরো দল তাদের সেরা বন্ধুকে মাঠ থেকে হারিয়েছে, এরপর পুরো দল উঠে দাঁড়িয়ে দারুনভাবে পারফর্ম করেছে।
ডেনসরা যদি এরিকসেনের অসুস্থতা মুষড়ে পড়তো অথবা বিশ্বসেরা র‌্যাঙ্কধারী দলের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে দু:শ্চিন্তায় পড়তো তবে এ ধরনের পারফরমেন্স দেখাতে পারতোনা।’
ম্যাচ শুরুর দুই মিনিটের মধ্যে পিয়েরে-এমিলে হোলবার্গের বাড়ানো পাসে পলসেন বল পেয়ে কোনাকুনি শটে বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবাট কুর্তোয়াকে পরাস্ত করলে এগিয়ে যায় ডেনমার্ক। এক মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের এই গোলে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম গোলের রেকর্ড গড়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে গ্রীসের বিপক্ষে মাত্র ৬৭ সেকেন্ডে গোল করে এই তালিকার শীর্ষে এখনো নিজেকে ধরে রেখেছেন রাশিয়ান ফরোয়ার্ড দিমিত্রি কিরিচেনকো।
বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মনিচিনি বলেছেন পুরো পরিবেশে তার দলও বেশ আবেগপ্রবন হয়ে পড়েছিল। স্প্যানিশ এই কোচ বলেন, ‘প্রথমে এগিয়ে গিয়ে সমর্থকরা যেভাবে ডেনমার্ককে সমর্থন যুগিয়েছে তার সাথে আমরা মানিয়ে নিতে পারিনি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আমরা নিজেদের প্রমান করেছি।’
ডি ব্রুইনা, এডেন হ্যাজার্ড ও এ্যাক্সেল উইটসেলকে বদলী বেঞ্চে নিয়ে ম্যাচ শুরু করেছিল বেলজিয়াম। কিন্তু বিরতির পর একে একে তাদেরকে মাঠে নামিয়ে পুরো ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেন মার্টিনেজ। বেলজিয়ান কোচ বলেন, ‘এটা ৩০০রও বেশী ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতার ফল, সে কারনেই সবাই পার্থক্যটা দেখতে পেয়েছে। প্রচন্ড চাপের মধ্যে থেকেও কিভাবে ম্যাচকে সামলে উঠতে হয় আজ আমরা সেটাই দেখিয়েছি।’
৫৪ মিনিটে এরিকসেনের ইন্টার মিলান সতর্থী রোমেলু লুকাকু বক্সের দিকে এগিয়ে গিয়ে ডি ব্রুইনাকে বল বাড়িয়ে দেন। বেলজিয়ান অধিনায়কের দারুন এক এসিস্টে থ্রোগান ড্যানিশ রক্ষনভাগকে ফাঁকি দিয়ে সমতা ফেরান। গ্রুপ-বি’র প্রথম ম্যাচে রাশিয়ার বিপক্ষে দুই গোল করেছিলেন লুকাকু। থ্রোগানের সাথে ম্যাচের শুরু থেকেই বল আদান প্রদানে বেশ দক্ষতা দেখিয়েছেন লুকাকু। তার ফল পেলেন ৫৪ মিনিটে। ৭০ মিনিটে ডি ব্রুইনার লো শট আটকানোর সাধ্য ছিলনা ড্যানিশ গোলরক্ষক কাসপার শিমিচেলের। এই গোলের পর এরিকসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কোন ধরনের গোল উৎসব করেননি সিটি তারকা।