অনলাইন দেখে এখন নিজেই সফল অনলাইন উদ্যোক্তা কুষ্টিয়ার গৃহবধূ লিজা

597

কুষ্টিয়া, ১৭ জুন, ২০২১ (বাসস) : অনলাইন দেখে দেখে সফলতার মুখ খুঁজে পেয়েছেন কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার এক গৃহবধূ। মহামারি করোনা ভাইরাসে থমকে গেছে মানুষের জীবন। কেউ হয়েছেন ঘরবন্দী কেউবা হয়েছেন কর্মহীন। তবে জীবন ধারনে জীবিকার্জনের বিকল্প নেই মানুষের। তাইতো মহামারিতেই দমেনি মানুষের জীবিকার্জন। সময়, পরিবেশ ও পরিস্থিতি ভেদে মানুষ সৃষ্টি করছে তার নিত্যনতুন কর্ম। বিশেষ করে করোনায় বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছে অনলাইন। ঘরে বসেই মানুষ এ অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। তাই করোনাকালীন সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে ক্রেতা বিক্রেতার কাছে। ঝুঁকি থাকলেও অনলাইন ব্যবসায় সফল হয়েছেন অনেকই। তবে তরূণ ও তরুণরা সাধারণত অনলাইন ব্যবসায় ঝুঁকছেন। বেকারত্ব ও অবসর কাটিয়ে তাদের অনেকেই নিজেকে মিলে ধরছেন সফল ব্যক্তিদের কাতারে। হয়ে উঠছেন সফল উদ্যোক্তা। তেমনই এক সফল নারী অনলাইন উদ্যোক্তা আরিফিন পারভীন লিজা। তিনি কুষ্টিয়া কুমারখালী পৌরসভার কুন্ডুপাড়ার বাসিন্দা।করোনাকালী সময়ে নারী হয়েই চুপটি মেরে ঘরে বসে নেই তিনি, স্বাবলম্বী হতে বেছে নিয়েছেন অনলাইন ব্যবসা। লিজার পরিবার সুত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কুমারখালী পৌরশহরে কুন্ডু পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন আরিফিন পারভীন লিজা। বাবা তোফাজ্জেল হোসেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। মা আফরোজা খাতুন এক জন গৃহিণী। স্বামীর বাড়ি কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। স্বামী আকরামুল ইসলাম সোহাগ কুমারখালী পৌরসভায় চাকুরি করেন।
আরিফিন পারভীন লিজা ২০০১ সালে এইচএসসি পড়ার সময় বিয়ের করেন। কিন্তু থেমে ছিলনা তার শিক্ষাজীবন। পরবর্তীতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন। এরপর ২০১৬ সালে কুমারখালী সরকারি কলেজে অনার্সে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। পরিবারে স্বামী, এক সন্তান আর শ্বশুর-শাশুড়ি রয়েছে। এরপর ২০২০ মহামারি করোনায় থমকে যায় মানুষের জীবন ও জীবিকা। ধীওে ধীরে গৃহবন্দী ও কর্মহীন হয়ে পড়ে অনেকে। ঘরে বসে বসে অলস সময় কাটছিল তার। এমন পরিস্থিতিতে জীবন ও জীবিকার তাগিদে কিছু একটা করতে হবে। এমন ধারণা থেকেই ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট স্বামী আকরামুল ইসলাম সোহাগ, বাবা তোফাজ্জল হোসেন, ছোট ভাই মুরছালিন আহমেদ ও তার বোন লায়লা তানজিনের সহযোগিতায় ফেসবুকে একটি “আরিফিন’স ড্রিম” পেজ খুলে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন তিনি। আরিফিন পারভীন লিজা ফেসবুক পেজে “আরিফিন’স ড্রিম” ভোক্তাদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী পণ্য এনে থাকেন। পণ্যর মধ্যে রয়েছে কুমারখালীর বিখ্যাত শাড়ি ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত বেডসিট, থ্রিপিস,বেডসিট, পিলোকভার, শোপিস। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, খাঁটি ঘি বিভিন্ন ধরনের ডাল, কাঠের তৈরি শোপিস, দেশী পোশাক ফরমালিনমুক্ত আম ইত্যাদি বিক্রি করেন তিনি। এগুলোর দাম ও মানের কারণে তিনি সাধারণের কাছে অল্প সময়ে ভালো অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এমন উদ্যোগ সম্পর্কে আরিফিন পারভীন লিজা বলেন, শুরুটা অনেক সহজ ছিলোনা। পরিবার এবং বন্ধুদের সহযোগিতায় এগিয়ে চলতে সাহস পেয়েছি। পড়াশুনা শেষ করে চাকরি ও সংসার করার পাশাপাশি নিজে কিছু একটা করার দৃঢ় ইচ্ছে ছিল। করোনায় ঘরে বসে বেকার কাটছিল সময়। অনলাইন দেখে দেখেই করোনাকালী সময় মাথায় আসে অনলাইন ব্যবসার প্লান। একাজে সবসময় তার স্বামী ও বাবা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সেই সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির সাপোর্টের কথাও জানান তিনি। বর্তমান ব্যবসার অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ভালো কেনাবেচা চলছে। ধীরে ধীরে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তার অনলাইন পেজ “আরিফিন’স ড্রিম”। ভবিষ্যতে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান। লিজা বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল একজন উদ্যোক্তা হওয়ার। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি সঙ্গে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বলতে গেলে অনেকটাই শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। তাই অন্য নারীদেরও উচিত হবে শুধু শুধু ঘরে বসে না থেকে, সংসারের পাশাপাশি কিছু একটা করা। স্বপ্ন, সামান্য পুঁজি আর পরিশ্রম থাকলেই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, Womer & e-commerce forum বাংলাদেশের সব থেকে বড় অনলাইন বিজনেস গ্রুপ। আমি এ গ্রুপের কুষ্টিয়া জেলা সহকারী প্রতিনিধি। গ্রুপকে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা নিয়ে আজ আমি সফল উদ্যোক্তা। আমার কাজ কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে যে সকল উদ্যোক্তা আছেন, তাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাদের সুযোগ সুবিধা ব্যবস্থা করা। মূলত কুষ্টিয়া জেলার উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করছি আমি। তিনি আরো বলেন, গতকাল বুধবার পর্যন্ত সেল আপডেট ১৫ লক্ষ এক হাজার ৯৪৫ টাকা। যা কুষ্টিয়া জেলায় অনলাইন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রথম। ৬২টি জেলা এবং পাঁচটি বিভিন্ন দেশে আমার পণ্য পৌঁছেছে। মাত্র ২৯১দিনে আমি এ অর্জন পেয়েছি। এবিষয়ে তার স্বামী আকরামুল ইসলাম সোহাগ বলেন, করোনায় ঘরে বসে বসে অবসর কাটছিল। হঠাৎ ওর মাথায় অনলাইন ব্যবসার চিন্তা ভাবনার আসে। আমি সমর্থন করি। এখন বেশ ভালই লাগে। আমি ওকে নিয়ে গর্ববোধ করি। তিনি আরো বলেন, সকল নারীদেরই কিছু একটা করা উচিৎ।