বাসস ক্রীড়া-৫ : রোনাল্ডোর রেকর্ডের দিনে হাঙ্গেরিকে ধরাশায়ী করলো পর্তুগাল

92

বাসস ক্রীড়া-৫
ফুটবল-ইউরো ২০২০
রোনাল্ডোর রেকর্ডের দিনে হাঙ্গেরিকে ধরাশায়ী করলো পর্তুগাল
বুদাপেস্ট, ১৬ জুন ২০২১ (বাসস) : ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর জোড়া গোলে হাঙ্গেরিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের শুভ সূচনা করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল। দর্শকে ঠাসা বুদাপেস্টের পুসকাস এরিনাতে কাল ম্যাচ শেষের আট মিনিট আগে তিন গোল দিয়েছে পর্তুগাল। জেদী হাঙ্গেরির জালে দুই গোল দিয়ে রোনাল্ডো ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন।
পাঁচ বছর আগে বড় কোন টুর্নামেন্টের প্রথম শিরোপা জয়ের পর পর্তুগাল ইউরো আসরে নিজেদের যোগ্যতার জানান দেয়। তারপর থেকেই বড় দলগুলোর পাশে পর্তুগালকেও ফেবারিট হিসেবে মানা হচ্ছে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়, যার প্রমান তারা প্রথম ম্যাচেই দিয়ে দিল। যদিও গোল আদায় করতে তাদের ৮৪ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। রাফায়েল গুয়েরেইরোর গোলে ডেডলক ভাঙ্গার পর রোনাল্ডো প্রথম পেনাল্টি থেকে ব্যবধান দ্বিগুন করেন। এরপর ইনজুরি টাইমে দিয়েছেন আরো এক গোল।
জুভেন্টাসের এই সুপারস্টার এনিয়ে ইউরোতে সর্বোচ্চ ১১টি গোল করলেন যা তাকে ফরাসী কিংবদন্তী মিশেল প্লাতিনির থেকে দুই গোল এগিয়ে দিয়েছে। ১৯৮৪ সালে ইউরো বিজয়ী ফ্রান্স দলের অধিনায়ক হিসেবে প্লাতিনি ৯ গোল করেছিলেন।
এছাড়া আন্তর্জাতিক আসরে ইরানের আল দেইয়ের করা সর্বকালের সর্বোচ্চ ১০৯ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করতে ৩৬ বছর বয়সী রোনাল্ডো আর মাত্র তিন গোল দুরে রয়েছেন।
ইউরো ২০২০’র একমাত্র ভেন্যু হিসেবে কাল বুদাপেস্টে ছিলনা কোন কোভিড-১৯ সীমাবদ্ধতা। যে কারনে দর্শকে পরিপূর্ণ এই স্টেডিয়ামে কাল রোনাল্ডো স্বাগতিক সমর্থকদেরও আস্থা আদায় করে নিয়েছেন। পুসকাস এরিনার দর্শক ধারণ ক্ষমতা ৬৮ হাজার।
আগামী শনিবার মিউনিখের আলিয়াঁজ এরিনাতে পরবর্তী ম্যাচে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানীর মুখোমুখি হবে বর্তমান ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নরা।
পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোস হুয়াও ফেলিক্সের পরিবর্তে কাল মূল একাদশে রোনাল্ডোর সাথে আক্রমনভাগে মাঠে নামিয়েছিলেন লিভারপুল ফরোয়ার্ড দিয়োগো জোতা ও বার্নান্ডো সিলভাকে। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই জোতার বাম পায়ের জোড়ালো শট কোনমতে আটকে দেন হাঙ্গেরির গোলরক্ষক পিটার গুলাসকি। যদিও এই শটের আগে অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়ানো রোানল্ডোকে তিনি বল বাড়িয়ে দিতে পারতেন। পাঁচ মিনিট পর ব্রুনো ফার্নান্দেসের ফ্রি-কিক থেকে জোতার ভলি ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। মৌসুমের শেষ ভাগে ইনজুরির কারনে লিভারপুল দলের বাইরে থাকলেও জাতীয় দলে নিজেকে প্রমানের জন্য শতভাগ প্রস্তুত হয়েই মাঠে নেমেছেন জোতা। ২৮ মিনিটে রোনাল্ডো বার্নান্ডো সিলভাকে দারুন একটি বল বাড়িয়ে দিলেও ম্যানচেস্টার সিটির এই উইঙ্গারের শট পোস্টের অনেকটাই উপর দিয়ে চলে যায়। তার আগে অবশ্য হাঙ্গেরির সেন্টর-ব্যাক উইল ওরবানের ট্যাকেলের মুখে পড়তে হয়েছে সিলভাকে।
প্রথমার্ধে হাঙ্গেরি খুব একটা সুযোগ তৈরী করতে পারেনি। বিরতির কিছুক্ষন আগে একটি ফ্রি-কিক থেকে এ্যাডাম সালাইয়ের হেড কোনমতে রুখে দেন পর্তুগীজ গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও। পর্তুগালের সবচেয়ে বিপদজনক খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রমান করতে থাকেন জোতা। ৪৪ মিনিটে পর্তুগাল ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি হাতছাড়া করে। গুয়েরেইরোর লো ক্রস থেকে মাত্র ৬ গজ দুর থেকে পর্তুগীজ অধিনায়ক রোনাল্ডো জালের ঠিকানা খুঁজে পাননি।
বিরতির পর পর্তুগাল দ্রুতই ম্যাচে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করে। বিশেষ করে ডেথ গ্রুপ হিসেবে পরিচিত এফ-গ্রুপে প্রথম ম্যাচেই জিততে না পারলে তা পরবর্তী ম্যাচগুলোতে জার্মানী ও ফ্রান্সের বিপক্ষে টুর্ণামেন্টকে কঠিন করে তুলবে, এটা খুব ভালভাবেই উপলব্ধি করেছিল পর্তুগাল। তারই ধারাবাহিকতায় সান্তোনের শিষ্যরা বারবার আঘাত হানলেও তা কাজে আসেনি। এই সুযোগে হাঙ্গেরি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেয়।
ফেলিক্স ছাড়াও এইনট্র্যাক ফ্র্যাংকফুর্টেও ইন-ফর্ম স্ট্রাইকার আন্দ্রে সিলভা ও গত মৌসুমে পর্তুগীজ প্রিমিয়ার লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা পেড্রো গনকালভেসকে বদলী বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিলেন সান্তোস। প্রথম পরিবর্তন করতে ৭১ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করেন পর্তুগীজ বস। এসময় তিনি সিলভার পরিবর্তে মাঠে নামান রাফা সিলভাকে। কিন্তু শেষ ২৫ মিনিটে পর্তুগাল শিবিরে হতাশা ঘনীভূত হতে থাকে। আটিলা ফিওলোর বিপক্ষে পেনাল্টির আবেদন করেও সফল হতে পারেননি রোনাল্ডো। বদলী খেলোয়াড় সাকাবোলকস সোয়েনের কল্যানে হাঙ্গেরি এক গোল দিলেও লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা উঠালে হতাশ হতে হয় স্বাগতিক দর্শকদের। ৮৪ মিনিটে রাফায়েল সিলভার ডিফ্লেকটেন ক্রসে গুয়েরেইরো গোল করে পর্তুগালকে এগিয়ে দেন। তিন মিনিট পর ওরবান ডি বক্সের ভিতর রাফা সিলভাকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় পর্তুগাল। স্পট কিক থেকে রোনাল্ডো কোন ভুল করেননি। গুলাকসিকে উল্টো দিকে পাঠিয়ে তিনি ব্যবধান দ্বিগুন করেন। এর মাধ্যমে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডের পাশাপাশি ইউরোর ইতিহাসে পাঁচটি টুর্নামেন্ট খেলার রেকর্ডও গড়েছেন রোনাল্ডো। রাফা সিলভার সাথে বল আদান প্রদান করে ইনজুরি টাইমে দ্বিতীয় মিনিটে ঠান্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে রোনাল্ডো নিজের দ্বিতীয় গোল করলে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
বাসস/এএসজি/নীহা/১৬৫১/স্বব