নারী জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে সরকারের নানা উদ্যোগ

1882

ঢাকা, ১৫ জুন, ২০২১ (বাসস) : দেশের নারী জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। করোনা মহামারী মোকাবিলায় দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে নারী জনগোষ্ঠীকে মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে প্রণোদনার পাশাপাশি স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সরকার শিশু কল্যাণ নিশ্চিত করতে শিশু দিবাযতœ আইন-২০২১ খসড়া প্রস্তুত করেছে, যা জাতীয় সংসদে উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার শ্রমজীবী মহিলাদের শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
আগামী ২০২১-’২২ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। যা প্রস্তাবিত বাজেটের ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। ২০২০-’২১ অর্থবছরে তুলনায় প্রায় ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহফুজা আখতার সামাজিক বিষয়ে নিরাপত্তা বাসস’কে বলেন, আগামী অর্থ বছরে দেশের আরো ১৫০টি উপজেলার সকল বয়স্ক নারীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে ১২২টি উপজেলায় এই ভাতা চালু রয়েছে। বিশেষ করে অসহায়, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এছাড়া অসহায় মায়েদের জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি (ভিজিডি) প্রোগ্রাম চালু রাখা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ল্যাকটেটিং ও কর্মজীবী মায়েদের জন্য ভাতা প্রদান, নারীদের আত্ম কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান চালু রাখার উপর বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২৫ মিলিয়ন লোক সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দারিদ্র ও চরম দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ১২ দশমিক ৩ ও ৪ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। সরকার শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে শিশু দিবাযতœ আইন-২০২১ খসড়া প্রস্তুত করেছে। ইতোমধ্যে সরকার শ্রমজীবী মহিলাদের শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। জুন মাসের মধ্যে সকল ভাতা ভোগীদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনার জন্য বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। চলতি অর্থ বছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা।
করোনা সংক্রমণ প্রাদুর্ভাবের কারণে জীবন রক্ষার্থে দেশের সকল জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হচ্ছে। ফলে নি¤œ আয়ের শ্রমজীবী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাসজনিক কারণে কর্মহীনতা ও আয়ের সুযোগ হ্রাসের কবল থেকে দেশের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিগত ২০২০ সালে করোনা অতিমারির কারণে যে সব নি¤œ আয়ের মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং কর্মহীন হয়ে পড়েছে তাদের সহায়তার জন্য ‘নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান’ কর্মসূচি চালু করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ নি¤œ আয়ের পরিবারকে পরিবার প্রতি ২ হাজার পাঁচশ টাকা করে মোট ৮৮০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। নি¤œ আয়ের শ্রমজীবী মানুষ যাতে আর্থিকভাবে কষ্ট না পায় ,সেজন্য চলতি বছরের ঈদুল ফিতরের আগে একইভাবে ৩৫ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে নগদ ২ হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক প্রণোদনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কাজ করছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থাসহ (বিসিক) বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা। বিসিক ৯ হাজার ৬৫৫ জন নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশেষ স্বাবলম্বী করে তুলেছে। ২০২০-’২১ অর্থ বছরে করোনাকালীন সময়েও ৩০১ জন নারী উদ্যোক্তা বিসিক থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে। বিসিক নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য চলতি বছর ৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে।
বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসান আরো জানান, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থানের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে আগামী অর্থ বছরে নানা কর্মসূচি চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক প্রণোদনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ও ১ কোটি নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে বিসিক কর্তৃপক্ষ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।
ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ২০ হাজার টাকা হতে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। চলতি জুন মাসের মধ্যে ৫০ কোটি টাকা বিতরণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।