বীরাঙ্গণা রমা চৌধুরী আর নেই

324

চট্টগ্রাম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (বাসস) : ‘একাত্তরের জননী’ খ্যাত বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী আজ সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
কোমরের আঘাত, গলব্লাডার স্টোন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান পৃথকভাবে শোক প্রকাশ করেছেন।
আজ সকাল সাড়ে দশটার দিকে রমা চৌধুরীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে নিয়ে আসলে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ মরদেহে ফুলেলশ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। বেলা সোয়া ১২টার দিকে এ সম্মাননা দেয়া হয়।
এর আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একাত্তরের এ বীরাঙ্গনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ, ভারপ্রাপ্ত সিটি মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগরের কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, লেখক ও শহীদজায়া মুশতারি শফী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।
এছাড়াও ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে সম্মিলিত আবৃত্তি জোট, গণজাগরণ মঞ্চ, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও সাহিত্য চর্চা পরিষদ, কৃষ্ণকুমারী সিটি করপোরেশন স্কুল, অর্পণাচরণ সিটি করপোরেশন স্কুল, মিউনিসিপ্যাল সিটি করপোরেশন স্কুল, পাহাড়িকা স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এসময় রমা চৌধুরীর বেঁচে থাকা একমাত্র ছেলে জহর চৌধুরী রমা চৌধুরীর দীর্ঘদিনের সহচর ও তার বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দীন খোকন উপস্থিত ছিলেন।
রমা চৌধুরী ১৯৩৬ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। চার ছেলে সাগর, টগর, জহর এবং দীপংকরকে নিয়ে ছিলো তার সংসার।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে দুই ছেলেকে হারানোর পাশাপাশি নিজের সম্ভ্রমও হারান রমা চৌধুরী। পুড়িয়ে দেয়া হয় তার ঘর-বাড়ি। তবু জীবনযুদ্ধে হার মানেননি এ বীরাঙ্গনা। শুরু করেন নতুনভাবে পথচলা। তাঁর মোট ১৮টি গ্রন্থ রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ ‘একাত্তরের জননী’, ‘এক হাজার এক দিন যাপনের পদ্য’, ‘ভাব বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথ’ প্রভৃতি। এসব বই বিক্রি করেই চলতো তার সংসার।