বাসস ক্রীড়া-১ : রোমাঞ্চকর ম্যাচে ইউক্রেনকে ৩-২ গোলে পরাজিত করেছে নেদারল্যান্ডস

92

বাসস ক্রীড়া-১
ফুটবল-ইউরো ২০২০
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ইউক্রেনকে ৩-২ গোলে পরাজিত করেছে নেদারল্যান্ডস
আমস্টারডাম, ১৪ জুন ২০২১ (বাসস) : দারুন উত্তেজনাকর এক ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে নেদারল্যান্ডস। রোববার ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে গ্রুপ-সি’র নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইউক্রেনকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে শুভ সূচনা করেছে ডাচরা। একইসাথে ইউরোর মূল মঞ্চে অন্যতম এক স্মরণীয় ম্যাচের জন্ম দিয়েছে ফ্রাংক ডি বোয়েরের দল।
আমস্টারডামের ইয়োহান ক্রুইফ স্টেডিয়ামে কমলা সমর্থকরা তাই দীর্ঘদিন পরে জাতীয় দলের মাঠে ফেরার আনন্দ দারুনভাবে উপভোগ করেছে। পিএসভি আইদোভেনের ফুল-ব্যাক ডেনজেল ডামফ্রাইসের দারুন এক গোলে ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে জয়সূচক গোলটি উপহার পায় স্বাগতিকরা। বদলী খেলোয়াড় নাথান এ্যাকের ক্রসে ডামফ্রাইসের হেড আটকানোর সাধ্য ছিলনা ইউক্রেন গোলরক্ষক হিওরি বুশানের। তার আগে নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও তা ধরে রাখতে পারেনি ডি বোয়েরের শিষ্যরা। অধিনায়ক গিওর্গিও উইজনালডাম ও ওট উইঘোর্স্টের গোলে ৫৮ মিনিটে ২-০ গোলের লিড পায় ডাচরা। কিন্তু ৭৯ মিনিটের মধ্যে সেই গোল পরিশোধ করে ইউক্রেনকে সমতায় ফেরায় আন্দ্রি ইয়ারমোলেনকো ও রোমান ইয়েরামচাক।
যদিও শেষ পর্যন্ত কোন অঘটন ঘটতে দেননি ডামফ্রাইস। সাত বছর পর বড় কোন টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচটিতে দারুন এই জয় নি:সন্দেহে নেদারল্যান্ডের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিবে।
ম্যাচ শেষে উচ্ছসিত ডি বোয়ের বলেছেন, ‘আমি মনে করি এবারের ইউরো দলটি বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। পুরো ম্যাচে আমরা যেভাবে আধিপত্য দেখিয়েছি আশা করছি পরের ম্যাচগুলোতেও এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখবো। সকলে অবশ্যই আমাদের নিয়ে গর্ব করবে।’
এর আগে গ্রুপের আরেক ম্যাচে নর্থ মেসিডোনিয়াকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে ইউরোর ইতিহাসে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে অস্ট্রিয়া। এই দলের বিপক্ষে বৃহস্পতিবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে নেদারল্যান্ড।
শনিবার ডেনমার্কের তারকা উইঙ্গার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের অসুস্থতার দু:শ্চিন্তা কালও আয়াক্সের হোম গ্রাউন্ডে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। ১৬ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে আয়োজিত ম্যাচটিতে এরিকসেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পুরো স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেই বিভিন্ন ব্যানার দেখা গেছে। ২০১৩ সালে টটেনহ্যাম হটস্পারের হয়ে খেলতে যাবার আগে এরিকসেন আয়াক্সে খেলেছেন। বর্তমান ডাচ দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় এই মিডফিল্ডারের বেশ ঘনিষ্ট ছিলেন। এর মধ্যে ডিফেন্ডার ডিলে ব্লিন্ড তার সাথে আমাস্টারডামে খেলেছেন। ২০১৯ সালে ব্লিন্ড নিজেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে বদলী হিসেবে খেলতে নামার আগে তাকে বেশ আবেগপ্রবণ হতে দেখা গেছে। ডি বোয়ের বলেন, ‘ডিলে বেশ আবেগী হয়ে পড়েছিলেন। কারন তারও হার্টে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। ক্রিস্টিয়ান তার অন্যতম সেরা একজন বন্ধু। তার জন্য এ ধরনের আবেগ দেখানোটা স্বাভাবিক।’
ইউরো ২০১৬ ও ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলতে ব্যর্থ হবার পর ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের তৃতীয় দল নেদারল্যান্ডস গতকাল প্রথম কোন বড় টুর্নামেন্টে খেলতে মাঠে নেমেছিল। ১৩ বছর আগে ইউরো জয়ী দলটি ২০০৮ সালের ইউরোতে রোমানিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ের পর আর কোন ইউরো ম্যাচে জয়ী হতে পারেনি।
যদিও ম্যাচটির আগে দল বাছাই নিয়ে ডি বোয়েরকে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। জুভেন্টাস ডিফেন্ডার মাথিস ডি লিট কুঁচকির ইনজুরির কারনে ম্যাচটিতে খেলতে পারেননি। ইনজুরির কারনে পুরো টুর্নমেন্ট থেকেই ছিটকে গেছেন লিভারপুলের সেন্টার-ব্যাক ভার্জিল ফন ডিক। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডনি ফন ডি বিক দল থেকে বাদ পড়েছেন। অন্যদিকে কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ায় দলের বাইরে রয়েছেন গোলরক্ষক জাসপার সিলিসেন। যে কারনে বাধ্য হয়ে ডি বোয়েরকে ৩-৫-২ ফর্মেশনে শিষ্যদের খেলাতে হয়েছে। বার্সেলোনা মিডফিল্ডার ফ্রেংকি ডি জং ও মেমফিস ডিপেকে আক্রমনভাগের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে।
এই ফর্মেশনে অবশ্য উপকৃত হয়েছেন উইজনালডাম। মধ্যমাঠ থেকে পিএসজিতে সদ্য যাওয়া এই মিডফিল্ডার বারবার গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। অন্যদিতে ডানদিক থেকে ডামফ্রাইসও বারবার আক্রমন করে গেছেন। প্রথমার্ধের শেষ ভাগে একটি হেডের সুযোগ নষ্ট করেন ডামফ্রাইস। অন্যদিকে উইজনালডামের ভলি দারুন দক্ষতায় রুখে দেন ইউক্রেনিয়ার গোলরক্ষক বুশান।
বিরতির পর ডামফ্রাইসের একটি লো বল আটকাতে গিয়ে হিমশিম খান বুশান। ফিরতি বলে উইজনালডাম ৫২ মিনিটে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন। ছয় মিনিট পর ডামফ্রাইাসের আরো একটি শটে এবার ব্যবধান দ্বিগুন করেন উইঘর্স্ট। সবচেয়ে বেশী বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে বড় কোন টুর্নামেন্টে নেদারল্যান্ডকে প্রতিনিধিত্ব করার রেকর্ড গড়েছেন ৩৮ বছর বয়সী গোলরক্ষক মার্টিন স্টেকেলেনবার্গ। গোলবারে তিনি ভালই খেলছিলেন। কিন্তু ৭৫ মিনিটে ইয়ামোলেনকোর দুর্দান্ত স্ট্রাইক আটকাতে পারেননি স্টেকেলানবার্গ। রুসলাম মালিনোভিস্কির ফ্রি-কিকে ইয়ারেমচাকের হেডও আটকাতে পারেননি ডাচ গোলরক্ষক।
ম্যাচ শেষে ইউক্রেনিয়ান কোচ আন্দ্রি শেভচেনকো বলেছেন, ‘ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল খাওয়াটা সত্যিই হতাশার। এখনো আমাদের হাতে রয়েছে দুটি ম্যাচ।’
বাসস/এএসজি/নীহা/১৪৫২/স্বব