বাসস দেশ-২৫ : ফেনীতে সূর্যমুখী বীজ বাজারজাতে নেই পরিকল্পনা

88

বাসস দেশ-২৫
সূর্যমুখী-বাজারজাত
ফেনীতে সূর্যমুখী বীজ বাজারজাতে নেই পরিকল্পনা
// আরিফুল আমীন রিজভী //
ফেনী, ১০ জুন, ২০২১ (বাসস) : তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে সূর্যমুখী আবাদে সরকার ব্যাপক প্রণোদনা দিলেও বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণে সীমাবদ্ধতার ফলে সুফল পাচ্ছে না ফেনীর সূর্যমুখী চাষীরা।
কৃষকদের দেয়া তথ্যমতে, ভালো ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা। স্থানীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট শিল্প গড়ে না ওঠায় বাণিজ্যিক চাহিদা নেই বলে দাবি করছেন চাষীরা। সরেজমিনে লক্ষ্য করা গেছে, তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে সূর্যমুখী চাষ করলেও বিপরীতে এখন বীজগুলো অনেকে বিক্রি করছেন পাখির খাদ্য হিসেবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনী হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জেলায় এবার প্রায় সাড়ে ১৮শ’ কৃষক ২৩৯ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ৫৫ হেক্টর, দাগনভূঞায় ৩৭ হেক্টর, সোনাগাজী ৬৮ হেক্টর, ফুলগাজী ৩০ হেক্টর, পরশুরাম ১৭ হেক্টর, ছাগলনাইয়ায় ৩২ হেক্টর আবাদ হয়েছে। এতে গড় ফলন হয়েছে ৪৮৫ টন। সূর্যমুখী চাষে কৃষক পুনর্বাসনের আওতায় ১ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
ফেনী পৌরসভার পশ্চিম রামপুর এলাকার কৃষক আইয়ুব নবী বলেন, ৪৫ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে সূর্যমুখী বীজ বিক্রয়ে বাজার সৃষ্টি না হওয়ার চাষ করেও এখন বিপদে আছি।
তিনি বলেন, বাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দামে গ্লোব নামীয় একটি প্রতিষ্ঠান বীজ সংগ্রহ করছে যা খরচের অনুপাতে অনেক কম। তাই বীজ প্রক্রিয়াজাত করে পরিবারের চাহিদা মেটানো হচ্ছে।
বীজ হতে তেল পেতে সরিষার ঘানিতে ভাঙানোর পরামর্শ দেয়া হলেও ঘানির মালিকরা সূর্যমুখী বীজ ভাঙতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। একজন কৃষক জানান, সরিষার তুলনায় এ বীজ বড় হওয়ায় ঘানির ক্ষতি হতে পারে বলে অনেক সময় ফিরিয়ে দেন ঘানি মালিকরা।
সদর উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল করিম জানান, সদরে ৫৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছিল। ফলন হয়েছে ২ দশমিক ৩ টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ফলন বেশি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন প্রদর্শনী, প্রণোদনা এবং কৃষি বিভাগের তদারকির ফলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ফলন বেশি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কান্তি সেন বলেন, সূর্যমুখী থেকে অনেক কৃষক তেল উৎপাদন করে নিজেরা ব্যবহার করছে। তবে বাজারজাত করার মতো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা গেলে আগামীতে সূর্যমুখী আবাদে কৃষকের আগ্রহ আরও বাড়বে।
পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সামছুল হুদা বলেন, মির্জানগরে ১০ জন কৃষক সূর্যমুখী আবাদ করেছিল। ফলন ভালো হলেও নতুন ফসল বিধায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষক বাজারজাত করতে পারেনি।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, সরকারের নানা প্রণোদনা, প্রদর্শনী ও কৃষকদের আগ্রহ বাড়ার কারণে সূর্যমুখীর আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক হয়েছে। সদর উপজেলায় গত বছর আবাদ হয়েছে ৬ হেক্টর যা বেড়ে এবছর ৫৫ হেক্টর হয়েছে। গতবার কৃষকরা ন্যায্য মূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও তেল বিক্রি করতে পেরেছেন। সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার বাড়ানো গেলে আবাদের সার্থকতা ধরে রাখা যাবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. শফি উদ্দিন জানান, সূর্যমুখী দেশে নতুন একটি ফসল। এজন্য এখনও বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাতকরণে কিছুটা সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তবে ধীরে-ধীরে মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে এটি অনেক লাভজনক হবে।
কৃষি বিভাগ কর্তৃক কৃষকদের সহায়তা দেয়ার কথা উল্লেখ করে এ কৃষিবিদ বলেন, সরিষা বীজের মতো সূর্যমুখীও শুকিয়ে ঘানির মাধ্যমে তেল উৎপাদন করতে পারে। এটি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এ বিষয়ে কৃষকদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তবে সমস্যা সমাধনে এবং কৃষকদের কল্যাণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আগামীতে আরও তৎপর হবে বলে জানান তিনি।
বাসস/এনডি/বি.প্র./সংবাদদাতা/১৯২৫/কেজিএ