চীনে বাংলাদেশের রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা

1305

ঢাকা, ৯ জুন,২০২১ (বাসস) : বিপুল জনসংখ্যার কারণে রফতানির পাশাপাশি পণ্য আমদানিরও শীর্ষ দেশ চীন। গত বছর চীন ২ দশমিক ৪৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করেছে। অথচ এই বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব মাত্র ০.০৫ শতাংশ।
সম্প্রতি বাংলাদেশকে দেওয়া শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং দেশটি থেকে অগ্রাধিকামূলক বাণিজ্য সুবিধা (এফটিএ) নিতে পারলে বাংলাদেশের জন্য চীনের বাজারে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চীনের আমদানি বাজারের কেবল ১ শতাংশ দখল করতে পারলেই বাংলাদেশ বছরে ২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করতে পারবে। দেশটিতে বর্তমানে ১ বিলিয়ন ডলারের কম মূল্যের পণ্য ও সেবা রফতানি করে বাংলাদেশ।
বুধবার ‘বাংলাদেশ-চায়না ইকোনমিক এন্ড ট্রেড রিলেশনস ইন দি আফটারমাথ অফ দি কোভিড-১৯ গ্লোবাল পেন্ডামিক’ বিষয়ক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (বিসিসিসিআই) যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনসী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম ও চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান।
আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বিসিসিসিআই সভাপতি গাজী গোলাম মর্তুজা, ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী, বিসিসিসিআই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা ও সিনিয়র সহসভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) শাহ মো. সুলতান উদ্দীন ইকবাল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
মূল প্রবন্ধে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছে ২০২৮ সালে চীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ হবে। অন্যদিকে চীন এখনই বিশ্বের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক দেশ। দেশটি বর্তমান বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যের এক তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। রফতানির পাশাপাশি চীনের আমদানি বাজারও বেশ বড়। সর্বশেষ বছরে দেশটি ২ দশমিক ৬৯ ট্রিলিয়ন ডলার রফতানির বিপরীতে ২ দশমিক ৪৮ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। বিপুল ভোক্তা বাজারে বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, চীন বৈশ্বিক বাজার থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করছে বাংলাদেশ এখন তার মাত্র ০.০৫ শতাংশ সরবরাহ করছে। এটি যদি ১ শতাংশে উন্নীত করা যায় তবে চীনের বাজারে অতিরিক্ত ২৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি সম্ভব।
এ ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে ড. রাজ্জাক বলেন, তৈরি পোশাকের বাজারের জন্য চীন একটি বড় আমদানি কেন্দ্র হিসাবে রুপান্তরিত হচ্ছে। চীনের পোশাক বাজারের ৭ শতাংশ বতর্মানে বাংলাদেশের দখলে। যেখানে ভিয়েতনামের দখলে ১৯ শতাংশের বেশি। এখানে একটু নজর দিলেই বড় বাজার খুজে পাবে বাংলাদেশ।”
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দেশটিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিপুল সুযোগ রয়েছে। চীন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বড় অংশীদার। গত বছর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে মোট বাণিজ্য ছিল ১২ দশমিক শুণ্য ৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানি ছিল ১১ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন এবং চীন থেকে বাংলাদেশের রফতানি ৬০ মিলিয়ন। উভয় দেশের বর্তমান বাণিজ্য সম্পর্ক চীনের পক্ষে। ২০২০ সালে চীন আমাদের জন্য ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশও বাণিজ্যে সুবিধা নিতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।
টিপু মুনশি বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় উ আমরা এফটিএ নিয়ে কথা বলেছি। এর কিছু অগ্রগতিও রয়েছে। তবে এটি দ্রুত বাস্তবায়নে আমাদের আরও জোরালো প্রচেস্টা চালাতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশের উত্তোরণের আগেই এটি হবে এবং বাংলাদেশ এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, বাংলাদেশে চীনের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। অপরদিকে বার্ংলাদেশের জন্যও চীনের বাজারে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীর সম্পর্ক বহুদিনের। গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশকে ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করেছে চীন। তাই সেখানকার বাজারে বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তিনি জানান, গত বছর বাংলাদেশ থেকে চীনের পণ্য আমদানি ২৮ শতাংশ বেড়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি আরও বাড়বে। তখন দুই দেশের বানিজ্যে সমতা তৈরি হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, উভয় দেশের বাণিজ্য বাড়াতে বিদ্যমান শুল্কমুক্ত সুবিধা ছাড়াও এফটিএর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে এর জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আরও বেশি কাজ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
লি জিমিং আরও বলেন, এই মুহুর্তে চীনের অভ্যন্তরে করোনা টিকার বিপুল চাহিদা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সরবরাহও খুব সীমিত। এর মধ্যেও বন্ধুত্বের কারণে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে চীন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে সিনোফার্মের ৫ লাখ টিকা উপহার দেওয়া হয়েছে। সিনোভ্যাকের উপহারের আরো ৬ লাখ টিকা আসার অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন চীনের টিকা ক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে অপেক্ষা করছি। বাংলাদেশ-চীন যৌথ উৎপাদনের আলোচনার অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক’।
অনুষ্ঠানে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, চীন-বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রাচীণকাল থেকেই। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের অবকাঠামো, টেলি যোগাযোগ, বিদ্যুৎ-জ্বালানীসহ প্রায় সব খাতেই চীনের বিনিয়োগ এসেছে বলে তিনি জানান।