এবারের ইউরোতে যাদের খেলা হচ্ছেনা

207

লন্ডন, ৯ জুন ২০২১ (বাসস) : আসন্ন ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে বেশ কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতি স্বাভাবিক ভাবেই টুর্নামেন্টের আবহকে কিছুটা হলেও ম্লান করে দিয়েছে।
ইউরো ২০২০ যাদেরকে মিস করবে :
সার্জিও রামোস :
অবশ্যই এবারের আসরে অনুপস্থিত থাকা সবচেয়ে বড় নাম হচ্ছে সার্জিও রামোস। ২০০৬ সালের পর টানা নয়টি বড় টুর্নামেন্ট খেলার পর এবারই প্রথম স্প্যানিশ এই অধিনায়ক আন্তর্জাতিক কোন আসরে খেলতে পারছেন না। ইনজুরি আক্রান্ত একটি মৌসুম কাটানোর পর ইউরোর আগে অন্তত রিয়াল মাদ্রিদের এই সেন্টার-ব্যাকের সুস্থ হয়ে ওঠার আশা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এবারের মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে তিনি মাত্র তিনটি ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিট মাঠে ছিলেন এবং লা লিগায় মাত্র একটি ম্যাচে মূল একাদশে খেলেছেন। ইনজুরির পাশাপাশি কোভিড-১৯’এও আক্রান্ত হয়েছিলেন রামোস।
স্প্যানিশ বস লুইস এনরিকে জানিয়েছেন ১৮০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ৩৫ বছরের অভিজ্ঞ একজন খেলোয়াড়কে দল থেকে বাদ দেয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তার সাথে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এনরিকে আরো বলেন, ‘তার জন্য আমার অবশ্যই খুব খারাপ লাগছে। জাতীয় দলের হয়ে সে সব সময়ই শীর্ষ পর্যায়ের পারফরমেন্স উপহার দিয়েছে। তাকে অবশ্যই আমরা মিস করবো।’
২০১২ সালের ইউরোর পর প্রথম বড় কোন শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে স্পেন। আর এই যাত্রায় রামোসের অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব ও বড় ম্যাচ খেলার মানসিকতা অবশ্যই মিস করবে স্প্যানিশরা। তার অনুপস্থিতিতে লা রোজারা চারজন সেন্টার-ব্যাক দলে ডেকেছে যাদের একসাথে ২১টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
ভার্জিল ফন ডিক :
গত গ্রীষ্মে ইউরো বাতিল হয়ে যাওয়ায় সম্ভবত সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নেদারল্যান্ড। কারন সেই সুযোগে আগস্টে নেদারল্যান্ডের বদলে যাবার মূল নায়ক কোচ রোনাল্ড কোম্যান জাতীয় দল ছেড়ে বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছিলেন। এরপর অধিনায়ক ও দলের নির্ভরযোগ্য সেন্টার-ব্যাক ভার্জিল ফন ডিক অক্টোবরে গুরুতর লিগামেন্ট ইনজুরিতে পড়ে লিভারপুলের হয়ে বাকি মৌসুমটা আর মাঠে নামতেত পারেননি। মে মাসে পুনর্বাসনের শেষ পর্যায়টি ভালভাবে সম্পন্ন করতে না পারায় ইউরো থেকে নিজেই নাম প্রত্যাহার করে নেন। এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করলেও এটাই সঠিক ছিল বলে ফন ডিক স্বীকার করেছেন।
গত তিন বছর যাবত লিভারপুল ও নেদারল্যান্ডের সাফল্যে মূল ভূমিকা পালনের পাশাপাশি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ফন ডিক। তার অনুপস্থিতিতে লিভারপুল এবারের মৌসুমে ব্যর্থ হয়েছে।
জøাটান ইব্রাহিমোভিচ :
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারো নিজেকে প্রমানের প্রায় দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিলেন এসি মিলান তারকা জøাটান ইব্রাহিমোভিচ। কিন্তু সিরি-এ মৌসুমের শেষভাগে এসে গুরুতর হাঁটুর ইনজুরি তার সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে। ৩৯ বছর বয়সী এই সুইডিশ তারকতা পাঁচ বছরের আন্তর্জাতিক অবসর ভেঙ্গে মার্চে পুনরায় দলে ফিরেছিলেন। এসি মিলানের হয়ে ১৬ গোল ও ২৬ এসিস্টই তাকে জাতীয় দলে ফিরিয়ে এনেছিল। তার সুবাদে গত আট মৌসুম পরে এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফিরেছে এসি মিলান।
মার্চে সুইডিশ দলে ফিরেই তিনি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দুই ম্যাচে দুটি এসিস্ট করেছেন। ইউরোর গ্রুপ পর্ব থেকে সামনে এগিয়ে যাবার জন্য ড্রেসিং রুমে তার অভিজ্ঞতা ও উপস্থিতি খুব বেশী প্রয়োজন ছিল।
আর্লিং হালান্ড :
নরওয়ের এই তরুনের মধ্যে অনেকেই ইব্রাহিমোভিচের নতুন সংষ্করন দেখতে পান। পাওয়ার প্যাক পারফরেমেন্সর পাশাপাশি দুর্দান্ত ফিটনেস ও গোল করার দক্ষতা সবকিছুতেই তার সাথে ইব্রার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আগামী দুই দশকে ইউরোপীয়ান ফুটবলে বিশ্বের সব শীর্ষ ক্লাবগুলোকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাত্র ২০ বছর বয়সেই হালান্ড তার প্রমান দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক আসরে বড় টুর্নামেন্টে খেলার অভিজ্ঞতা হালান্ডের আরো বিলম্বিত হলো।
সর্বশেষ নরওয়ে যখন বড় কোন টুর্ণামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জণ করেছিল তখন হালান্ডের জন্মই হয়নি। আর এখন ২০ বছর বয়সী এই তারকা দলের মূল নায়কে পরিনত হয়েছেন। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এই স্ট্রাইকার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ ১০ গোল করার পাশাপাশি বুন্দেসলিগায় করেছেন ২৭ গোল।
আনতু ফাতি :
এবারের ইউরোতে আরো একজন তরুণের খেলা দেখা থেকে ফুটবল বিশ্ব বঞ্চিত হবে, তিনি হচ্ছেন স্পেনের আনসু ফাতি। ১৮ বছর বয়সেই তিনি স্পেনের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। গত বছর হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ায় তার আর ইউরোতে খেলা হচ্ছেনা।
শুধুমাত্র জাতীয় দলের জার্সি গায়ে নয় নিজ ক্লাব বার্সেলোনার হয়েও তিনি বেশ কিছু রেকর্ড কনে ফেলেছেন। ২০২০ ইউরোর ফাইনালে স্পেন দলের এক্স-ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারতেন ফাতি।