বাসস দেশ-১ : ডোমারে রঙ্গীন ঘরে সুখের ঠিকানা পাচ্ছে ৩০০ পরিবার

103

বাসস দেশ-১
ঘর পাচ্ছে ৩ শত পরিবার
ডোমারে রঙ্গীন ঘরে সুখের ঠিকানা পাচ্ছে ৩০০ পরিবার
নীলফামারী, ৯ জুন, ২০২১ (বাসস) : স্বপ্ন ছিল ভাঙা বাড়ির বদলে একদিন গড়বেন পাকা বাড়ি। সে বাড়িতে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখ-স্বাছন্দে বাস করবেন মাহমুদা আক্তার (২৮)। এজন্য স্বামীকে নিয়ে অতিক্রম করেছেন বিয়ের একযুগ। কিন্তু অভাব-অনটনে তার সে স্বপ্ন ছিল অধরা। মুজিব বর্ষে মাহমুদার সেই পাকা বাড়ির স্বপ্ন পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ঠাঁই হয়েছে রঙিন পাকা ঘরে।
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বোড়াগাড়ী গ্রামে মাহমুদার আক্তারের বাড়ি। ভিটেমাটিহীন স্বামী শেখ ফরিদের (৩২) সামান্য দর্জির দোকানের কর্মচারীর আয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে চলতো তাদের সংসার। টানাপোড়নের সংসারে গড়তে পারেননি নিজের ঠিকানা।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে আনন্দিত মাহমুদা। ঘরের আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর না হলেও নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় বসবাস শুরু করেছেন দৃষ্টিনন্দন ওই রঙিন ঘরে। স্বপ্ন পূরণে হতাশা মুছে এখন তার চোখে মুখে হাসির ঝিলিক। ব্যস্ত সময় পার করছেন স্বপ্নের সেই ঘর সাজানোর কাজে। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে মাহমুদাসহ অনেককে।
এসময় মাহমুদা আক্তার বলেন,‘অন্যের জমিতে বাড়ি ছিল আমাদের। সে ঘরের চালে অসংখ্য ফুটা। রাতে বৃষ্টি হলে ঘুমাতে পারতাম না। সংসারের ঘানি টানতে স্বামীর পাশাপাশি নিজেও সেলাইয়ের কাজ করে স্বপ্ন দেখেছিলাম ভিটেমাটি করে একটি পাকা ঘর নির্মাণের। কিন্তু বিয়ের ১২টি বছর পার হলেও কুলাতে পারিনি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দয়ায় আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। তিনি যতদিন জীবীত থাকবেন ততদিন মানুষের কল্যাণে ক্ষতায় থাকুক।’
শুধু মাহমুদাই নয়, তার ন্যায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন ওই উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নের মধ্য পঙ্গা গ্রামের ভূমিহীন সোহেল রানা (৫০) ও মাজেদা বেগম (৪০) দম্পতি। সোহেল রানা জীবীকা নির্বাহ করেন রিকশা চালানোর আয়ে। দুই ছেলে এক মেয়ে সন্তান নিয়ে তাদের বসবাস ছিল অন্যের জমিতে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে মাজেদা বেগম বলেন,‘২৩ বছর আগোত মোর বিয়াউ (বিয়া) হইছে। সেলা থাকি কবার পারো নাই হামার নিজের বাড়ি আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দয়াত এলা কবার পারিম নিজের বাড়ি আছে।’
তাদের ন্যায় ঘর পেয়েছেন একই ইউনিয়নের মেলাপঙ্গা গ্রামের ভূমিহীন আব্দুল মতিন (৩০), হাবিবা বেগম (৩২), বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বোড়াগাড়ী চেয়্যারম্যানপাড়া গ্রামের বেগম বেওয়াসহ (৫০) উপজেলাটির ১০টি ইউনিয়নের ৩০০ পরিবার। এর মধ্যে ২০০ ঘর নির্মাণ শেষে আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে। প্রধান মন্ত্রীর উপহারের রঙ্গীন ঘর পেয়ে এখন তারা সকলেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বাস্তব সুখের।
সূত্রমতে, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ডোমার উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৩৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়। গত ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই ৩৮টি ঘর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর করেন। একই প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ হওয়া ৩০০টি ঘরের মধ্যে ২০০টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে চলছে রঙের কাজ। চলতি মাসের ২০ তারিখ হস্তান্তনের কথা আছে এসব ঘর। অবশিষ্ট ১০০ ঘর বিতরণের কাজ চলমান আছে।
উপজেলা ত্রাণ কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মোহাইমেনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের ৩৮টি ঘর নির্মাণে প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা করে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ৩০০ ঘরের জন্য প্রতিটির বরাদ্দ পাওয়া গেছে এক লাখ ৮৯ হাজার টাকা করে। ২০০ ঘর নির্মাণসহ রঙের কাজ শেষের পথে।’
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম বলেন,‘আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য কোন দাতা দুই শতাংশ জমি সরকারের নামে লিখে দিলে আমরা সেখানে ঘর নির্মাণ করে ভূমিহীন পরিবারের বসবাসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এভাবে উপজেলায় ৩০০ পরিবারকে ঘর প্রদান করা হচ্ছে। এ কাজে জমি দাতার সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার মানুষের সহযোগিতায় কাজটি নিখুতভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। সকলের সহযোগিতায় উপযুক্ত ব্যক্তিরাই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছেন।’
তিনি জানান, উপজেলায় মোট খাস জমির পরিমান ৯০৪ একর। এর মধ্যে ৮৭৫ একর জমি ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়া আছে। বাকী ২৯ একর জমি আট থেকে ১০ ফিট নীচু হওয়ায় ঘর নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
বাসস/এনডি/সংবাদদাতা/১০৪০/নূসী