চাঁদপুরের কৃষকরা এ্যাপের মাধ্যমে ধান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন

1951

চাঁদপুর,৮ জুন, ২০২১(বাসস) জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের এ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত কৃষকরা ধান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। ৭ জুন পর্যন্ত জেলার ৩ টি উপজেলা থেকে এ্যাপের মাধ্যমে ১ হাজার ৭ মেট্রিক টনসহ সরাসরি আরো ৩হাজার ৩৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট৪ হাজার ৪০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হলো।
অন্য বছরের তুলনায় বোরো ধানের ফলন এবছর ভালো হওয়ায় কৃষকরাও সরকারের নিকট ধান বিক্রি করতে আগ্রহী। বাজারের চেয়ে মূল্য বেশী পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন জেলার প্রান্তিক কৃষকরা।
চাঁদপুর জেলা ধান ও চাল সংগ্রহে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্র অর্জনে এখন পর্যন্ত অনেক জেলার তুলনায় এগিয়ে রয়েছে । এদিকে ধান ও চাল ক্রয় প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে আরো আড়াই মাস বলে জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে।
চাঁদপুর জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানাযায়, পদ্মা মেঘনা ডাকাতিয়া নদী বেষ্টিত চাঁদপুরের ৮ উপজেলায়ই কম বেশী বোরো ধানের আবাদ রয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে সরকার আভ্যান্তরীন খাদ্য শস্য সংগ্রহের জন্য জেলায় ৮হাজার ৮৬ মেট্টিক টন বোরো ধান ও ৭ হাজার ১০১ মেট্টিক টন সিদ্ধ চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২৭ টাকা এবং সিদ্ধ চালের মূল্য নির্ধারণ হয় ৪০টাকা। ৯ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ধান ৫৩% সংগ্রহ করা হয়েছে । আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে লক্ষ্যমাত্র অর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জেলা খাদ্য বিভাগ জানিয়েছেন।
জেলার শাহরা¯িস্ত উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এ বছরই প্রথম ‘কৃষকের এ্যাপস’র ব্যবহার করে পাইলট প্রকল্প হিসেবে কচুয়া, শাহরাস্তি, সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার নিবন্ধিত কৃষকরা সরাসরি খাদ্য গুদামে এনে ধান বিক্রি করছেন। বাকী মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, হাজীগঞ্জ ও হাইমচর উপজেলায় কৃষি বিভাগ থেকে দেয়া তালিকা অনুযায়ী সরাসরি খাদ্য গুদামে এসে ধান বিক্রি করেন কৃষকরা। আমার গুদামে গতকাল পর্যন্ত এ্যাপে ৫ হাজার৫.১৬ মেট্রিক টন ও সরাসরি ৪১হাজার .৩৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ছালেহ জানান, বিক্রি প্রক্রিয়ায় কোন ধরণের মধ্যসত্বভোগী না থাকায় সঠিক মূল্য ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে কৃষককে তার টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। পূর্বেই কৃষকদেরকে মাইকিং করে ধান বিক্রি করার জন্য সরাসরি আসার অনুরোধ করা হয়েছে। যার জন্য কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জেগেছে এবং প্রতিদিন অফিস চলাকালীন সময়ে সরাসরি খাদ্য গুদামে এসে ধান বিক্রি করে যাচ্ছেন। এ গুদামে গতকাল পর্যন্ত ৭হাজার ৪.২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করেছি।
চাঁদপুর সদরের বিষ্ণুপুর উনিয়নের কৃষক মান্নান গাজী ও মজিবুর রহমান জানান, তারা ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রে এ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন। এরপর তাদেরকে উপজেলা খাদ্য বিভাগ থেকে ফোন করে ধান বিক্রির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর মধ্যে মান্নান গাজী ২.৬ মেট্রিক টন এবং মজিবুর রহমান ১.৮ মেট্রিকটন ধান বিক্রি করেছেন ২৭ টাকা কেজি দরে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার তালিকাভুক্ত কৃষকরা সরাসরি গুদামে এনে ধান বিক্রি করছেন। কৃষকদের মধ্যে সারোয়ার হোসেন বিক্রি করছেন ১.৮৪ টন এবং মো. বাবুল বিক্রি করেছেন ১.৭৬ মেট্রিক টন। তারা বলেন, এখন আর খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে এসে কোন ধরণের হয়রানি হয় না। বিক্রির পরে রশিদ দেয়া হয়। সরাসরি ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে হয়।
শাহরাস্তি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের বানিয়াচোঁ গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন জানান, তিনি মাইকে ধান বিক্রির প্রচারণা জানতে পেরে এ বছর প্রথম ২.২০ মে: টন মণ ধান বিক্রি করেছেন। প্রচারণা করায় অনেক কৃষকই ধান বিক্রির জন্য আসছেন। কোন ধরণের হয়রানির অভিযোগ নেই বলে জানান তিনি।
একই উপজেলার রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের কৃষক আবু তাহের জানান, তিনি গত কয়েকবছরই খাদ্য গুদামে সরাসরি ধান বিক্রি করেন। এ বছর বাজার মূল্যের চেয়ে বেশী ১০৮০ টাকায় ধান বিক্রি করে তিনি লাভবান হয়েছেন। সরকার যেন এ ধরণের নিয়ম অব্যাহত রাখেন।
চাঁদপুর খাদ্য গুদামের ইনচার্জ তামিম হাসান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য সংগ্রহের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমরা তা শতভাগ বাস্তবায়নে সরকারের নিয়ম মেনে কাজ করছি। আশা করি কৃষক ও মিল মালিকরা আমাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।
চাঁদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) নিত্যানন্দ কুন্ডু জানান, চাঁদপুর জেলা ৭ জুন পর্যন্ত সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ধান ৫৩% ও চাল ৫০% সংগ্রহ করেছে। সরকারের নির্দেশনা রয়েছে জুনের মধ্যে ৭৫% লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা। আশা করা হচ্ছে তা সফল হবে। এছাড়াও জেলার ১৭টি অটো এবং ২টি হাস্কিং রাইস মিলস সিদ্ধ চাল সরবরাহ শুরু করেছেন।