শহরের চেয়ে গ্রামে করোনার প্রকোপ বাড়ছে

195

চট্টগ্রাম, ৫ জুন, ২০২১ (বাসস) : চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের প্রকোপ গ্রামে দিনদিন বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রথমবারের মতো শহরের তুলনায় গ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি শনাক্ত হয়েছে। তবে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো জেলায় করোনায় আক্রান্ত কারো মৃত্যু হয়নি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে বলা হয়, নগরীর ছয়টি ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের ৯৯১ জনের নমুনা পরীক্ষা করলে নতুন ৯৭ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। সংক্রমণ হার ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এর মধ্যে শহরের ৪৫ জন ও এগারো উপজেলার ৫২ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ হাটহাজারীতে ১৩, ফটিকছড়িতে ১১, সীতাকু-ে ৬, রাঙ্গুনিয়ায় ৫, আনোয়ারায় ৪, মিরসরাই, রাউজান ও বাঁশখালীতে ৩ জন করে, বোয়ালখালীতে ২ জন এবং সন্দ্বীপ ও পটিয়ায় ১ জন করে রয়েছেন। জেলায় করোনাভাইরাসে মোট শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ৫৩ হাজার ৯৬০ জন। এর মধ্যে শহরের ৪২ হাজার ৮৭৬ জন ও গ্রামের ১১ হাজার ৮৫ জন।
গতকাল করোনায় কোনো রোগী মারা যাননি। ফলে মৃতের সংখ্যা ৬২৬ জনই রয়েছে। এতে শহরের ৪৪৭ ও গ্রামের ১৭৯ জন। সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছেন নতুন ৪০১ জন। ফলে মোট আরোগ্যলাভকারীর সংখ্যা ৪২ হাজার ২২৮ জনে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ হাজার ৮৯৯ জন এবং বাসায় থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হন ৩৬ হাজার ৩২৯ জন। হোম কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে নতুন যুক্ত হন ২৮ জন। ছাড়পত্র নেন ৫৪ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১ হাজার ৯৭ জন।
উল্লেখ্য, গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে গ্রামে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আনুপাতিক হারে বাড়ছে। গতকাল প্রথমবারের মতো শহরের চেয়ে গ্রামে আক্রান্ত বেশি শনাক্ত হয়। তবে, গতকাল আক্রান্তের চার গুণেরও বেশি মানুষ করোনা থেকে সেরে ওঠেছেন। নতুন আইসোলেশনের প্রায় দ্বিগুণ রোগি করোনামুক্তির ছাড়পত্র নেন। এ মাসের প্রথম দিন ৩ জন ও দ্বিতীয় দিন ১ জন মারা গেলেও গত দু’দিন কোনো করোনা রোগির মৃত্যু হয়নি।
গ্রামে করোনা রোগী বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি আজ বাসস’কে বলেন, ‘গত ঈদুল ফিতরের সময় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক লোক গ্রামের বাড়ি গিয়েছেন। এদের মাধ্যমে প্রথমে পরিবারে ও পরে অন্যান্য লোকজনের মাঝে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা বেশি।’
তিনি বলেন, ‘শহরের তুলনায় গ্রামে লোকজনদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কম। লোকজন মাস্ক বলতে গেলে পরেনই না। তবে, গ্রামেও এখন পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ ব্যাপারে নিজেদের সচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসনকেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।’
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ল্যাবে ৩শ’ জনের নমুনা পরীক্ষায় শহরের ১২ ও গ্রামের ১২ জন জীবাণুবাহক পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ২৪৮ জনের নমুনার মধ্যে শহরের ১০ ও গ্রামের ৩ জন করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে নগরীর ১০ জন ও গ্রামের ৩২ জনের দেহে ভাইরাস থাকার প্রমাণ মিলে।
বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাব শেভরনে ১৬৪টি নমুনায় শহরের ৯টি, মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ২৫টি নমুনা পরীক্ষায় গ্রামের ২টিসহ ৬টির রিপোর্ট পজিটিভ আসে। মেডিকেল সেন্টারে ৯টি নমুনার একটিতেও করোনার জীবাণু পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামের ৫০ জনের নমুনা কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় সবগুলোরই ফলাফল নেগেটিভ আসে।
এদিন ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএল, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ও পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে বিআইটিআইডি’তে ৮ শতাংশ, চমেকে ৫ দশমিক ২৪, চবি’তে ২১ দশমিক ৫৪, শেভরনে ৫ দশমিক ৪৯, মা ও শিশু হাসপাতালে ২৩ দশমিক ০৭ এবং মেডিকেল সেন্টার ও কক্সবাজার মেডিকেল ল্যাবে শূন্য শতাংশ সংক্রমণ রেকর্ড হয়।
এদিকে, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে আজ থেকে বিদেশগামী ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ডা. আরিফ উদ্দিন আহমেদ আজ বাসস’কে জানান, ‘সরকার বিদেশগামীদের পরীক্ষার জন্য আমাদের অনুমতি দিয়েছে। আমরা আজ থেকে পূর্ণমাত্রায় এ কার্যক্রম শুরু করেছি।’