বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২ : ভুট্টা চাষে স্বাবলম্বী লালমনিরহাটের রাশেদা

132

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২
ভুট্টা-রাশেদা
ভুট্টা চাষে স্বাবলম্বী লালমনিরহাটের রাশেদা
ঢাকা, ৫ জুন, ২০২১ (বাসস) : বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। বর্তমান সময়ে অবশ্য কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটা কমে গেলেও কৃষির অবদান এখনো কম নয়। কৃষি প্রধান দেশ হওয়াতে দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কোন না কোন ধরনের ফসল উৎপাদিত হয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা অন্যতম দেশ হওয়ায় কৃষি ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও আছে। অর্থাৎ ঝড়, বন্যা, তুফানের কারণে মাটির চরিত্র বদলিয়ে যাওয়ায় একেক অঞ্চলে একেক ধরনের ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। তবে সব কিছু বিবেচনা করে সব অঞ্চলেই যুতসই ফসল উৎপদান সম্ভব। যার মাধ্যমে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনাও সম্ভব। পরিশ্রম, একাগ্রতার পাশাপাশি হাতে থাকা সম্বলেল মাধ্যমে শত প্রতিকুলতাকে দূরে ঠেলে দিয়েও ভাগ্যের পরিবর্তন আনা সম্ভব। দারিদ্র্যতাকে জয় করা সম্ভব। তারই এক অনন্য উদাহরণ এক সময়ের দরিদ্র রাশেদা খানম। লালমনিরহাটের চল্লিশোর্ধ রাশেদা খানমের গত তিন বছর আগেও নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা ছিল। স্বামী ঢাকায় রিকশা চালাতো। প্রতি মাসে যা পাঠাতো তা দিনে কোন রকম দশ/বার দিন চলত। এরপর থেকে অবস্থা খুবই করুণ। এর-ওর কাছ থেকে চেয়ে-চিন্তে বাকী মাস পার করতে হত। এভাবেই চলছিল তাদের পাঁচ জনের সংসার। প্রায়ই সময় টাকা নিয়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া হত। কিন্তু অন্য কোন আয়ও ছিলনা।
কিন্তু গত তিন বছরে পুরো ভাগ্যই পরিবর্তন করে ফেলেছেন রাশেদা। স্বামীর পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া অল্প কৃষি জমিতে চাষাবাদ করেন ভুট্টা। এখন এই ভুট্টা বিক্রীর টাকা দিয়েই চলে তাদের পুরো সংসার। স্বামীও ঢাকা থেকে ফিরে এসে এখন রাশেদার সাথে ভুট্টা চাষে সহযোগীতা করছেন।
মূলত নব্বই এর দশকে লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলে এক ভয়াবহ বন্যা হয়। সেই বন্যায় অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যে ক্ষতিটি হয় তা হল জমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় বেলে মাটি চলে আসা। যার কারনে এসব অঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে তেমন কোন ফসল হত না। এমনকি ধানও খুব বেশী হত না। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। এলাকার অনেকেই এখন অনেকটা সচ্ছল।
রাশেদা জানান, প্রায় প্রতি বছরই স্বামী ঢাকা থেকে এসে জমিতে ধান চাষ করত। কিন্তু কোনবারই লাভের দেখা পাইনি। এমনকি আমাদের নিজেদের খাবার চালও হতো না। পরে অন্যান্যদের মত আমিও ভুট্টা চাষ শুরু করি। এখন প্রতি মৌসুমে ভালো আয় হয়।
এমনটি শুধু রাশেদার পরিবারে নয়। রাশেদার মত ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন অনেক কৃষক-কৃষানী।
আরেক কৃষানী জোবেদা বলেন, অতিরিক্ত বেলে মাটির কারনে এখানে ধান চাষ তেমন ভালো হয় না। তাই অন্যদের মতো আমিও ভুট্টা চাষ শুরু করেছি। এখন আমরা অনেক ভালো আছি। আমার সন্তানেরাও স্কুলে পড়ে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রমিজ উদ্দিন বলেন, বেলে মাটিতে ভুট্টা ছাড়া অন্য কোন ফসলেই এত মুনাফা তোলা সম্ভব নয়। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের ১,১,৩০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়। সরকারি তথ্যমতে, এখান থেকে দেশের ভুট্টা চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ পূরণ হয়। বর্তমান অর্থবছরে রেকর্ড ১০ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে এসব জমিতে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহফুজুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে ঘন-ঘন বন্যা দেখা দেয়। এমন অবস্থায় চাষিদের জীবনমান উন্নয়নে ভুট্টাই বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আঞ্চলিক উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পানি কম প্রয়োজন এমন জমিতে ভুট্টা চাষে উৎসাহ, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে সরকার।
প্রতি বছর সারা দেশে গড়ে ৩৮ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হলেও আরও ২০ লাখ টন আমদানি করতে হয় অন্য দেশ থেকে।
উত্তরাঞ্চলে সাফল্য আসায় সেখানে যেমন এর চাষাবাদ প্রচুর হচ্ছে, তেমনি অত্র এলাকার কৃষকরাও আরো বেশি ঝুঁকছে ভুট্টা চাষে। সরকারী সহযোগিতা পেলে আরো বেশি ভুট্টা উৎপদান সম্ভব এবং আমদানীর পরিমাণও সম্ভব।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/সুঘো/মহ/০৯১২/স্বব