বাড়ির উঠোনে শাক-সবজি চাষে স্বাবলম্বী দুমকির রাজিয়া

1983

ঢাকা, ৪ জুন, ২০২১ (বাসস): ‘এক সময় সংসারে খুব কষ্ট করেছি। আয়ের কোন পথ ছিল না। স্বামীর একার আয়ে সংসারের সব খরচ চালানো ছিল দূরুহ বিষয়। কিন্তু কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। সংসারে আয় নেই। কিন্তু দিন দিন খরচ বেড়ে যাচ্ছিল, বলছিলেন পটুয়াখালির দুমকির জামলা গ্রামের রাজিয়া আক্তার।
তিনি বলেন, স্বামীও সব সময় কাজ করতে পারতেন না। দুই/তিন দিন কাজ করলে এক/দু’দিন বিশ্রাম নিতে হত। আর তাই সংসারেও সব সময় টানাপোড়েন লেগে থাকত। মাসের অনেক দিনই ঘরে কোন খাবার থাকত না। আর তাই সংসারে সব সময় অশান্তি লেগেই থাকত।
কিন্তু এখন দিন পাল্টেছে। এখন কিছুটা অর্থ কষ্ট থাকলেও খাবারের কষ্ট আর নেই। বাড়ির উঠোনেই করেছি বিভিন্ন শাক-সবজির চাষ, বলেন রাজিয়া।
রাজিয়া এবং তার স্বামী আনোয়ার মৃধার বাড়ির চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন শাক-সবজির চাষ। প্রায় সব ধরনের সবজির চাষই করেছেন এই দম্পতি। রয়েছে টমেটো, বেগুন, লাউ, বিভিন্ন শাক। এছাড়াও রয়েছে পেয়ারা, ড্রাগন এবং আম গাছ।
এখানেই শেষ নয়, আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বাড়ির পুকুরে চাষ হচ্ছে পাবদা, শিং, কই এর মত দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। আগে জাত চিহ্নিত না করে হাঁস মুরগী পালন করলেও এখন উন্নত জাতের হাঁস মুরগী পালন করছেন তারা। এমনকি ঘরের বারান্দার বাইরে ছোট ছোট খুপরি ঘর তৈরি করে সেখানেই বিভিন্ন জাতের কবুতর পালন করা হচ্ছে।
এই গ্রামের অন্যসব পরিবারের থেকে আনোয়ার-রাজিয়া দম্পতির আয়ের উৎস একেবারেই ভিন্ন। নিজেদের সম্পদ গুলোকেই তারা সর্বোত্তম ব্যবহার করছেন। আর তাদের এই কাজে সহযোগীতা করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট এর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ। সরকারের এই সংস্থাটি কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদেও প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন উপাদান দিয়ে সহযোগীতা করছে।
ফলে আনোয়ার- রাজিয়া দম্পতির মতো স্থানীয় বেশ কিছু পরিবার এখন নিজেরাই তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় শাক, সবজী থেকে শুরু করে মাছ, মাংসের চাহিদা মিটিয়ে তা আবার স্থানীয় বাজারে বিক্রিও করছেন। এ কারণে আধুনিক কৃষি, মৎস্য, পশু-পাখি পালনসহ আধুনিক বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কৃষকদের ধারণা থাকায় প্রতিটি কৃষকের বাড়ি এখন এক একটি আদর্শ খামারে পরিণত হয়েছে।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর আওতাধীন যতগুলো গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে তাদের সকলের সর্বশেষ উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
যেমন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত মাছ এবং এর চাষাবাদ পদ্বতি, প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে হাঁস, মুরগী, গরু-ছাগল পালন সম্পর্কে আধুনিক চাষাবাদ এবং উন্নত জাত সরবরাহ করা হচ্ছে।
এর সাথে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উদ্ভাবিত শাক সবজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফলমূল চাষাবাদেও তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ ছাড়া কোন সময়ে কোন ফসলটি উৎপাদন করলে কৃষক বেশি লাভবান হবেন সে জন্য বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বলে জানান এই কৃষি বিজ্ঞানী।