বাসস দেশ-৩৪ : রেমিটেন্স, রপ্তানি ও কৃষির উপর ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভাল করেছে

134

বাসস দেশ-৩৪
করোনা-অর্থনীতি-পুনরুদ্ধার
রেমিটেন্স, রপ্তানি ও কৃষির উপর ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভাল করেছে
ঢাকা, ২ জুন,২০২১ (বাসস): চলমান করোনাভাইরাস অতিমারি বিশ^ব্যাপী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির পাাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন বদলে দিয়েছে। এর প্রভাবে বৈশি^ক অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে স্থবিরতা। তবে এই অতিমারির দুঃসময়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছে। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড সচল রাখতে পেরেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, যেখানে বৈশি^ক অর্থনীতির অধিকাংশ সূচক সংকোচন হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকে ভাল করেছে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সরকার করোনার প্রথম ধাক্কা সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করতে পেরেছে। এখন চলমান দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় আগামী বাজেটে করোনা প্রতিরোধক টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার পরিধি সম্প্রসারণ করতে হবে।
বাংলাদেশ পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ চলতি অর্থবছরের অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, বছরের পুরো সময় জুড়ে করোনার কালো থাবা আমাদের সাথে ছিল। তাই এ সময়ে সরকারের বড় চ্যালেঞ্চ ছিল করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করা। তিনি বলেন, প্রথম ধাক্কাটা ভালভাবে মোকাবেলা করতে করা গেছে। এ সময়ে সরকার সাহস ও দৃঢ়তার সাথে কারখানা খুলে দেয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় যে ঢেউ চলছে, সেটা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি আগামী বাজেটে টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন,অতিমারির সময়েও রপ্তানি, কৃষি ও রেমিটেন্সে আমরা ভাল করেছি। তবে এই সময়ে দারিদ্রতা ও বেকারত্ব বেড়ে গেছে। তাই আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসুচি সম্প্রসারণের সুপারিশ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনিিতর বড় চালিকা শক্তি হলো সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা ১ কোটি অতি ক্ষুদ্র ও কটেজ প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ থেকে আড়াই কোটি মানুষ সম্পৃক্ত। এরা প্রণোদনা সুবিধা পায়নি। কর্মসংস্থান তৈরিতে এদের প্রণোদনা দিতে হবে। তিনি এই খাতে বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা রাখার সুপারিশ করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বাসসকে বলেন, চলমান করোনা অতিমারির মধ্যে কেবল দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পুরো এশিয়ায় যারা অর্থনীতিতে ভাল করেছে বাংলাদেশ তার অন্যতম। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান তিনটি স্তম্ভ কৃষি, রেমিটেন্স ও রপ্তানি। এই তিনখাতেই বাংলাদেশে অত্যন্ত ভাল করেছে। করোনার কালো থাবা আমাদেরকে কাবু করতে পারেনি। তিনি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে অর্থ্যাৎ চলতি অর্থবছর শুরু হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতির সকল খাতকে লক্ষ্য করে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। পোশাক কারখানা তিন মাসের বেতন দিয়ে চালু রাখার ব্যবস্থা করেন। তিনি মনে করেন এই প্রণোদনার সুফল হচ্ছে আজ আবার রপ্তানি স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, অনেকে বলছে-এসএমইখাতে প্রণোদনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। আমি বলব ৩০ শতাংশ হয়নি, তবে ৭০ শতাংশ তো বাস্তবায়ন হয়েছে। বড় শিল্প-কারখানায় প্রণোদনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। তাদের জন্য এটি খুব জরুরি ছিল। এখন রপ্তানিতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তাই এখন এসব দেশ থেকে পোশাক রপ্তানির আদেশ বেড়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আতিউর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরে বাজেটে সরকার করোনা মোকাবেলায় গুরুত্ব দিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকার আলাদা বরাদ্দ রেখেছিল। স্বাস্থ্যখাতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন আসন্ন বাজেটে আলাদা তহবিল রেখে যত দ্রুত সম্ভব টিকাদান কর্মসূচি শেষ করতে হবে। তিনি মনে করেন টিকা ক্রয়ে যে টাকা ব্যয় হবে সেই অর্থ সংস্থানে সমস্যা হবে না। তিনি আগামী বাজেটে অপ্রাতিষ্ঠানিকখাত বিশেষ করে পর্যটন খাতে বিশেষ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ মনে করেন বাংলাদেশের অর্থনীতির যে প্রাণচাঞ্জল্য সেটা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আমরা দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারব। রপ্তানি ও রেমিটেন্সে আমরা ভাল করছি। তিনি বলেন,পর্যটন ও হোটেল রেস্টুরেন্টের মত সেবাখাতের কর্মীরা বেকার হয়েছে, তাদের দিকে নজর দিতে হবে।
বাসস/এসপিএল/আরআই/২০৩০/কেএমকে