পরিকল্পিত পরিবার গঠনে সচেতনতা বেড়েছে

2144

ঢাকা, ২ জুন, ২০২১ (বাসস) : ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’- এমন স্লোগান এখনও চোখে পড়ে হরহামেশাই। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই এ স্লোগানে দেশজুড়ে পরিকল্পিত পরিবার গঠনে পদক্ষেপ নেয় সরকার। যার ফলও মিলেছে বেশ আশাব্যঞ্জকভাবেই। গ্রাম থেকে শহর- প্রায় সব জায়গাতেই এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে উঠেছে। যার ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠছে পরিকল্পিত পরিবার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা ও পারিবারিক সচেতনতা, সরকারের উদ্যোগ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় এ পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। কিছু সীমাব্ধতা থাকলেও পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটেছে ব্যাপক। আর এই অগ্রগতি ধরে রাখতে পারলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় যে ২ শতাংশের নিচে প্রজনন হার কমিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবিলা করা সহজ হবে।
তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকে দেশে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহীতার হার কমপক্ষে ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৮ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ছিলো ৭ দশমিক ৭ শতাংশের নিচে। ২০১৭ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশেরও বেশিতে।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, দেশের প্রায় পৌনে ৭ লাখ নারী-পুরুষ স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫ জন নারী-পুরুষ স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।
বাকি পাঁচ লাখ ৪২ হাজার ৪৩ জন নারী ও পুরুষ দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। এ সংখ্যা এখন আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বাণু বলেন, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বাড়াতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের মধ্যেও এ বিষয়ে সচেতনতাবোধ তৈরি হচ্ছে। যা খুবই ভালো দিক।
তিনি বলেন, বর্তমানে জেলা পর্যায়ে ১৪টি মা ও শিশুকেন্দ্র এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ২৩০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করা হয়। সরকারের গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে আরও অনেক মানুষকে পরিবার পরিকল্পনার আওতায় আনা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে দেশে গড় প্রজনন হার ছিলো ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। সেই হার ২০১১ সালে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশে। বর্তমানে প্রজনন হার বা মহিলা প্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
বর্তমানে প্রজননক্ষম সকল দম্পতি পরিবার পরিকল্পনার কোনো না কোনো পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্য-বিষয়ক এক গ্লোবাল সামিটের প্রতিশ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
এদিকে নারী-পুরুষকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বছর দুয়েক আগে বিয়েপূর্ব কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সভা-সেমিনার, পথনাট্য, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, দেশের তৈরি পোশাক খাতে বড় ভূমিকা রাখছেন দেশের অদম্য নারীরা। তাদের মধ্যে সচেতনতা গড়তে পরিকল্পিতভাবে কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন মহানগরে বস্তিকে বসবাসকারীদের পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বর্তমান সরকারের নানামুখী সচেতনতামূলক কর্মসূচির কারণে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। একই সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের হারও বেড়েছে।’
তার মতে, ‘বর্তমান সরকারের আমলে দক্ষ সেবাদানকারীর মাধ্যমে নিরাপদ প্রসবের হার ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৭ শতাংশ ও গর্ভ, প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী সেবা গ্রহণের হার ১৯ শতাংশ থেকে ৪৩ শতাংশ হয়েছে।’
‘দেশে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের হার ৬২ শতাংশ হয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার আগের তুলনায় কমেছে ৫০ শতাংশ,’ যোগ করেন তিনি।