বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : পল্লী কর্মসংস্থান প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দিনে দিনে স্বাবলম্বী হচ্ছে নারী

91

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
নারী-কর্মসংস্থান
পল্লী কর্মসংস্থান প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দিনে দিনে স্বাবলম্বী হচ্ছে নারী
ঢাকা, ৩১ মে, ২০২১ (বাসস) : স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ যেমন এগিয়েছে, তেমনি এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের নারীরা। তারা পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঘুরিয়ে চলেছেন অর্থনীতির চাকা। বর্তমান সরকার সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে নারীর উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেয়া এসব উদ্যোগ বেশ প্রশংসিতও হয়েছে। এমনই সব উদ্যোগের একটি পল্লী কর্মসংস্থান প্রকল্প।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে, তৃণমূলে দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিষ্পেষিত নারীদের কল্যাণ নিশ্চিত হবে এবং তারা স্বাবলম্বী হিসেবে পরিবারে অর্থনৈতিক অবদানও রাখছেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এবার প্রকল্পটি আরও বিস্তৃত করা হয়েছে।
জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তাপ্রাপ্ত সুফলভোগী সদস্যদের বার্ষিক গড় মাথাপিছু আয় ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
সুফলভোগী নারী সদস্যদের ২০২৫ সালের মধ্যে গড় মাথাপিছু ৩ হাজার টাকা এবং স্কুলগামী কিশোরীদের গড় মাথাপিছু ৫ হাজার টাকার নিজস্ব সঞ্চয় তহবিল সৃষ্টি করা হবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঋণের জালে আটকা পড়ে দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্রতর হচ্ছেন তৃণমূলের নি¤œ আয়ের মানুষ। তাদের যাতে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয় সেজন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্রপীড়িত নারীদের জন্য সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এবার তা বর্ধিত করা হবে। এতে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীর পাশাপাশি সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ তৈরি হবে।
এ বিষয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক (পরিকল্পনা) এস এম মাসুদুর রহমান বলেন, প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক মূল্যায়ন করা হয়। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে এটি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি দ্বিতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে যশোর সফরকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই অঞ্চলের নারীদের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ক্ষমতায়নের জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘বৃহত্তর যশোরের চার জেলার ২১ উপজেলায় দরিদ্রপীড়িত নারীদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। যার মেয়াদ ছিল ১৯৯৮ সালের জুলাই থেকে ২০০৩ সালের জুন পর্যন্ত।
এ প্রকল্পের উপকারভোগী যশোরের চৌগাছা উপজেলার বাসিন্দা সেনুয়ারা বেগম বলেন, ২০২০ সালের দিকে আমার মা সরকারি প্রশিক্ষণ নেন। পরে মেশিন কিনে বাড়িতে কাপড় সেলাই করতেন। তার কাছে আমি কাজ শিখেছি। এখন আমাদের বড় টেইলার্স রয়েছে, যেখানে ১০ জন নারী-পুরুষ কাজ করেন।
‘এই দিক থেকে বলতে গেলে দরিদ্রপীড়িত নারীদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচি আমাদের জন্য শুভ দিন নিয়ে এসেছে। যার জন্যে আমাদের পাঁচ ভাই-বোনকে আমার মায়ের মতো কষ্ট করতে হয়নি। আমরা এখন সবাই স্বাবলম্বী। মায়েরও দেখাশোনা করি,’ যোগ করেন তিনি।
পরবর্তীতে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ৫৯ উপজেলায় ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে মোট ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বিআরডিবি দরিদ্রপীড়িত নারীদের সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রকল্পের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়িত হয়। যার মূল্যায়ন প্রতিবেদন করেছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প পরিচালক মো. রশিদ উদ্দিন বলেন, প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে, অনেকে দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। প্রথম পর্যায়ের সাফল্যের উপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা গেছে, দারিদ্র্যের শিকার গ্রামীণ মানুষে বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে দাদন ব্যবসায়ী কিংবা বিভিন্ন বেসরকারি ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী সংস্থা থেকে টাকা নিয়ে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন। ঋণ নিয়ে না দিতে পেরে অনেক সময় আত্মহত্যার মতো হৃদয়বিদারক ঘটনাও ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারটি অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়ে। এভাবে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয় না।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে চলতি বছরই শুরু হবে এর কাজ। যা ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)। যা খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের ১৭ জেলার ৫৯ উপজেলার ৪৭২ ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্প অনুযায়ী, প্রথমে জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে উপকারভোগী নির্বাচন করা হবে। এরপর নারী উপকারভোগীদের সমন্বয়ে নারী সমিতি গঠন এবং স্কুলগামী কিশোরীদের সমন্বয়ে কিশোরী সংঘ গঠন করে কার্যক্রম চালানো হবে।
এছাড়া, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে পুঁজি গঠন এবং এর যথাযথ ব্যবহার, কিশোরীদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ, সঞ্চয় প্রণোদনা, নারী উপকারভোগী এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাসে এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
বাসস/ইউনিসেফফিচার/মাআ/মহ/১৯০৫/আরজি