বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : বাংলাদেশ জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

120

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বিশ্বশান্তি রক্ষী দিবস
বাংলাদেশ জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ যেখানে হিমসিম খাচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশে সবাই যাতে নিরাপদ থাকতে পারে এবং করোনাভাইরাসের কারণে যাতে বেশি প্রানহাণি না হয় বা প্রাদুর্ভাব বেশি না ছড়ায় তারজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, আর্থসামাজিক কর্মকান্ড যেন স্থবির না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং সফলতার সাথে তা এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছে, বলেন তিনি।
উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, খাদ্যের সঙ্গে জনগণের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে। করোনার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে যে সমস্যা চলছে তা দূর করতেও তাঁর সরকার পদক্ষেপ নেবে।
শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ এবং উন্নত সরঞ্জামাদীর পাশাপাশি তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাটাও যাতে সথাযথভাবে নেওয়া হয় সেজন্য তাঁর সরকার সচেষ্ট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানেই আমরা দেখছি নিরাপত্তার কোন সমস্যা রয়েছে সেখানে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবার মত উপযুক্ত যা যা প্রয়োজন আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেটা সরবরাহ করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যারা নিয়োজিত তারা যেন নিজ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে ইতোমধ্যেই সে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘দুর্গম এলাকাতেও ভি-স্যাটের মাধ্যমে ব্যয়বহুল ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের অধিকতর নিরাপত্তা প্রদানের জন্য কন্টিনজেন্টসমূহে এলএভি অ্যাম্বুলেন্স, আইইডি জ্যামারসহ মাইন রেজিস্ট্যান্ট অ্যাম্বুশ প্রোটেকটেড ভেহিক্যাল (এমআরএপি) সংযোজন করা হয়েছে। কারণ, যারা নিরাপত্তায় কর্মরত রয়েছেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখা আমাদের একান্তভাবে দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ও আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা ১ নম্বর শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ’ হিসেবে গৌরবের ৩৩ বছর উদ্যাপন করছি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বিগত ৩৩ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রতিটি শান্তিরক্ষী ত্যাগ-তীতিক্ষা এবং গর্বের সঙ্গে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করে বিশ^ শান্তি রক্ষায় অনেক গৌরবময় অবদান রেখে যাচ্ছেন।
বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কেবল বাঙালি জাতিরই নন, তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তির বার্তাবাহক ও শান্তির দূত। বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্বশান্তি কাউন্সিল জাতির পিতাকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পুরস্কার প্রদান করে। জাতির পিতার বিশ্বশান্তির দর্শন প্রতিফলিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণে। ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়’-ঘোষণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করেন। অতি সম্প্রতি ভারত সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ‘গান্ধী শান্তি’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা চাই আরো উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং আমি তাই মনে করি, সেজন্য বাংলাদেশকে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেই চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি করা, দারিদ্র দূর করা, বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তাঁদের শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে করা। তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাটাই আমাদের কাজ।
শেখ হাাসিনা বলেন, সেক্ষেত্রে আমি বলবো যারা বিশ^শান্তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন তারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বই করছেন একভাবে এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আপনারা উজ্জ্বল করছেন।
পরিবার পরিজন ফেলে বিদেশে বৈরি পরিবেশে বিশ^শাস্তি রক্ষায় কাজ করে যাওয়াকে অন্যতম চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জ নেওয়াতেও একটা সাহস প্রয়োজন, আন্তরিকতা প্রয়োজন। সেটাও আপনারা অত্যন্ত সফলভাবে করে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি অনেক জটিল অবস্থায় অনেক দেশ যেতে চায় না। কিন্তু, যখন আমাদের কাছে বলা হয়েছে, তখন আমি বলেছি, হ্যাঁ, আমরা বাঙালিরা যেকোন জটিল অবস্থা, যেকোন বৈরি পরিবেশ মোকাবেলা করবার মত সাহস রাখি। কাজেই, আমাদের শান্তিরক্ষীরা পারবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মনে হয়, সবথেকে সংঘাতপূর্ণ জায়গা, সবথেকে জটিল জায়গাগুলোতেই আজকে আমাদের শান্তিরক্ষীবাহিনী বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেন। সেজন্য আপনাদেরকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬১০/আরজি