চাঁদপুরে ডিজিটাল কৃষক অ্যাপ ব্যবহারে ধান বিক্রি করছে প্রান্তিক কৃষক

1859

চাঁদপুর , ২৭ মে, ২০২১ (বাসস) : জেলার প্রান্তিক কৃষকরা ডিজিটাল কৃষক অ্যাপ ব্যবহার করে নায্য মূল্য ধান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন আগের থেকে অনেক বেশি।
জেলায় এবছর পাইলট প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার কৃষক ডিজিটাল কৃষক অ্যাপ ব্যবহার করে নিবন্ধন করেছেন। এখন তারা কোন রকম দালালের মাধ্যম ছাড়া নিজেরাই নিজেদের উৎপাদিত জমির সোনালী ধান বিক্রি করছেন সরকারের কাছে। আর এতে খুশি জেলার কৃষক কৃষাণীরা।
কৃষকের অ্যাপে চার উপজেলা থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে ৯৩৯ মেট্রিক টন এবং সারা জেলায় মোট ধান সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭৬৬ মেট্রিক টন।
সরকরের পাইলট প্রকল্পের আওতায় চারটি উপজেলায় এপ্রিল২০২১ থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলা ,কচুয়া,ফরিদগঞ্জ ও শাহরাস্তি এ চার উপজেলায় কৃষক অ্যাপের মাধ্যমে ধান বিক্রিতে আগ্রহীদের নিবন্ধন শুরু হয়। নিবন্ধনের শেষ দিন ১০ মে পর্যন্ত ৩ হাজার জন কৃষক এ অ্যাপে নিবন্ধন করেন। সরকারের কাছে ধান বিক্রি প্রসঙ্গে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৯ নং গোবিন্দপুর ইউনিয়ন এর ধানুয়া গ্রামের কৃষক আ:খালেক মিজি (৫৫) জানান, তিনি ২.৬০ মেট্রিক টন বা ২হাজার ৬০০ কেজি ধান বিক্রি করেছেন। এখানে কাউকে কোন প্রকার দালালি বা ঘুষ দিতে হয়নি। নায্য মূল্য পাওয়াতে আমি সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।
১০ নং গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষাণী পারভিন বেগম (৪৮) নিজেই ট্রলি ট্রাকে করে বস্তা ভরে উপজেলা খাদ্য গুদামে নিয়ে এসেছেন ৩ মেট্রিক টন ধান। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা আদ্রতা মেপে ঠিক থাকায় তার ধান গ্রহণ করেন । ধান সরাসরি সরকারের গুদামে বিক্রি করতে পেরে তিনি খুব খুশি। তিনি জানান আমি গত বছরে ও ধান বিক্রি করেছি তাই এবার আগেই কৃষক অ্যাপে কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতায় নিবন্ধন করেছি। এবছর আমাদের ফলন ভালো হয়েছে, তাই এবছর ও ধান বিক্রি করলাম, এখন আর কাউর সুপারিশ লাগেনা বলে ও জানান তিনি।
এ দিন গুদামে বিক্রি করতে ধান নিয়ে এসেছেন ৫০/৬০ জন কৃষক, সেখানে আরো কথা হয় উপজেলা সদরের নাসরিন সুলতানা লিপি, গোবিন্দপুরের মনির হোসেন ও মজু গাজী তারা সবাই ২ মেট্রিক টন করে ধান বিক্রি করেন গুদামে। তারা জানান, সরকারি অ্যাপে নিবন্ধন করেছি এখন সরাসরি কথা বলে ধান বিক্রি করলাম এতে আমরা লাভবান হচ্ছি। সেই জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
এসময় কথা হয় উপজেলা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার সাথে, তিনি জানান উপজেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে আমরা কৃষকদের সচেতন করতে নিজেরা উপস্থিত থেকে কৃষকের অ্যাপে নিবন্ধন করতে মাইকিং করা, লিফলেট বিতরণ, ও সাইনবোর্ড ঝুুলানো হয়েছে এবং পেপারে নিউজ করা হয়েছে। তারপর কৃষি বিভাগের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এর মাধ্যমে নিবন্ধন কারীদের লটারি করে সিরিয়াল করা হয়েছে। এখন সেই তালিকায় নাম থাকা কৃষকদের কাছ থেকে ধানের আদ্রতা মেপে সঠিক ওজন দিয়ে বস্তা ভরে গুদামে রাখা হচ্ছে। এরপর এ ধান মিলারদের দিয়ে চাল তৈরি করে আবার গুদামজাত করা হবে।
আমার উপজেলায় অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন ১৮৮৫ জন কৃষক, কৃষি বিভাগের থেকে নিবন্ধনের জন্য বলা হয়েছে ১৮৬৬ জনকে, অ্যাপের লটারিতে নির্বাচিত হয়েছেন ৭৪৪ জন কৃষক এরমধ্যে ১৭৪ জন তাদের নামে বরাদ্দ কৃত ৪৯৬.৫৬০ মেটিক টন ধান। আমাদের ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা রয়েছে ১৩ শত ১৩ মেট্রিক টন।
একইদিন দুপুরে জেলার সদর উপজেলা খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখাযায় সেখানে ও অ্যাপে নিবন্ধন করা কৃষকরা গুদামে সরাসরি ধান বিক্রি করছেন।
এখানে কথা হয় সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়ন এর কৃষক আব্দুর রহমান বেপারী (৬৫)তিনি জানান, এ বছর তাদের এলাকার সকল কৃষকের জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকের অ্যাপে ডিজিটাল নিবন্ধন করেছেন এখন তিনি ৩ মে:টন ধান বিক্রি করছেন ২৭ টাকা কেজি ধরে ৮১ হাজার টাকা । আগামীকাল চেক পাবো ।
উপজেলার বালিয়া ইউনিয়ন এর কৃষক কাদির গাজি(৬২) জানান ,তিনি একজন বর্গা চাষি, তিনি ৬ একর জায়গায় বোরো ধানের চাষ করছেন। এখন ধারদেনা শোধ করতে অবশ্যই তাকে ধান বিক্রি করতে হবে। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকের অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন এখন ধান নিয়ে এসেছেন গুদামে। নায্য দাম পেয়ে তিনি খুব খুশি, কারণ বর্তমানে বাজারে দাম আরেকটু কম চলছে। তাই সরকারের কাছে ১০৮০ টাকায় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছি। আমি আড়াই টন ধান বিক্রি করলাম।
একই দিন উপজেলার বালিয়ার মনুফা বেগম, লক্ষীপুরের মতিন মিজি, ও তরপচন্ডির মুরাদ মিয়া ও গুদামে ধান বিক্রি করছেন।
জেলার ৪ উপজেলায় কৃষক অ্যাপে নিবন্ধনকারীদের মধ্যে সদরে ৪০০ জন কৃষক , কচুযায ২৩৯ জন কৃষক, শাহরাস্তি ৪৭০ জন কৃষক ও ফরিদগঞ্জে ১ হাজার ৮৮৩ জন কৃষক রয়েছেন। এ কৃষক অ্যাপের মাধ্যমে চারটি উপজেলা থেকে এখন পর্যন্ত ১৮০ মেট্রিক. টন ধান সংগ্রহ করা হয়ে ছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায় ,এ জেলায় বর্তমানে বড় কৃষক রয়েছে ১ হাজার ৬৪৭ জন,মাঝারি কৃষক ২৩ হাজার ২৮৪ জন,ক্ষুদ্র ৯৮ হাজার ৬৬৬ জন,প্রান্তিক ১ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৭ জন,এবং ভূমিহীন কৃষক রয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ২৮৭ জন।
কৃষক অ্যাপে নিবন্ধনের জন্যে জনসচেতনতা বাড়াতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার স্থাপন করা হয়েছে এবং আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ধান ক্রয় করা হবে বলে জানান চাঁদপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা নিত্যানন্দ কুন্ডু। তিনি আরো জানান এ বছর জেলায় ৮ হাজার ৮৬ মেট্রি:টন ধান সংগ্রহ করা হবে, আমরা ইতিমধ্যে ৩৫% ধান সংগ্রহ করেছি, যা আগামী ৩০ মে পযন্ত ৫০-৬০% এ উন্নিত হবে। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও একজন কৃষক সর্বোচ্চ ৩ টন ধান বিক্রি করতে পারছে। এ পর্যন্ত চাঁদপুরে অ্যাপের মাধ্যমে ৯৩৯.৫৬০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর গুদামে ১৬১ মেটিক টন, শাহারা¯ি Íগুদামে ১৯৫ মেট্রিকটন, ফরিদগঞ্জ গুদামে ৪৯৬.৫৬০ মেট্রিক টন, কচুয়া উপজেলা ৮৭ মেট্রিক টন ধান।
এর বাইরে ও আরো ৪টি গুদামে ধান ক্রয় করা হয়েছে হাজীগঞ্জ গুদামে ৩০৯ মেট্রিক টন, মতলব উত্তর গুদামে ৩১৩ মেট্রিক টন, মতলব দক্ষিণ উপজেলার গুদামে ১৭৩ মেট্রিক টন ও নায়েরগাও খাদ্য গুদামে ৩৩ মেট্রিক টনসহ জেলায় মোট ১৭৬৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি জানান, মূলত প্রযুক্তিতে যেসব কৃষক এগিয়ে তারাই নিবন্ধন করতে পেরেছে।’নিবন্ধনের জন্যে জেলা খাদ্য বিভাগ থেকে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়েও লিফলেট বিতরণ, ও মাইকিং করে সচেতনতা করা হয়েছিলো। চাঁদপুরের কৃষকরা ডিজিটাল কৃষক অ্যাপ ব্যবহার করে নায্য মূল্য ধান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।