বাসস দেশ-১
গৃহহীনের স্বপ্ন পূরণ
যশোরে ২৬২ গৃহহীনের স্বপ্নপূরণ
যশোর, ২৬ মে, ২০২১ (বাসস) : ট্রাক শ্রমিক আসাদ সরদার (৬৫) স্ত্রী রাহিমা বেগম ও তিন সন্তান নিয়ে জীবনের বেশিরভাগ সময় বসবাস করেছেন অন্যের বাড়িতে। ট্রাকের হেলপারি করে যে রোজগার তা দিয়ে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে তার মাথার উপর একটি ছাউনী পেয়ে বেজায় খুশি তিনি। সম্প্রতি সরকারের দেয়া একটি বাড়ি পেয়েছেন হাকোবা গ্রামে। পরিজন নিয়ে এখন বসবাস করছেন সে বাড়িতে।
বাড়ি পেয়ে আসাদ সরদার বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঋণ আমি কখনই পরিশোধ করতে পারবো না। কখন ভাবতেও পারিনি আমি এমন একটি বাড়ির মালিক হবো। সেলিমপুর গ্রামের বৃদ্ধা শাহিদা বেগমের ভিক্ষা করেই দিন চলে। বিধবা মেয়ে বিউটি ও তাদের এক শিশু ছেলেকে নিয়ে জীবন চলতো ভিক্ষা করে। নিজের বলতে কিছুই নেই তার।
এ বৃদ্ধা শাহিদা বেগম একটি সরকারের দেয়া বাড়ি পেয়েছেন মাছনা-বেগমপুর গ্রামে। ১৫ রমজানে নতুন বাড়িতে উঠেছেন বৃদ্ধা শাহিদা বেগম। বাড়ি পেয়ে তিনিও বেজায় খুশি। কখরও নিজ বাড়িতে একটু ঘুমাতে পারবেন এমন কল্পনাও ছিল না তার। বাড়ি পেয়ে এমনই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন গাংড়া গ্রামের হযরত আলী (৮৫), জয়পুর গ্রামের বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম (৬৫) এবং মনিরুল ইসলাম বাবু। কেবল ট্রাক শ্রমিক আসাদ কিংবা বৃদ্ধা শাহিদা নন। মণিরামপুরের ভূমিহীন এবং গৃহহীন এমন ২৬২ পরিবার সরকারের দেয়া নতুন ঘর উপহার পেয়েছেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু আব্দুল্লাহ বায়োজিদ জানিয়েছেন, ভূমি এবং গৃহহীন ২৬২ পরিবারকে ৪ কোটি ৪৮ লাখ ২০০ টাকা ব্যয়ে বসতবাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে এগুলোকে গত জানুয়ারি থেকে ঘর নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে এগুলো সম্পন্ন করে একটি পরিবারকে একটি করে বাড়ি বুঝে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৩০টি বাড়ি নির্মাণে অর্থ পেয়ে সেগুলোও বাস্তবায়ন করার কার্যক্রম চলমান।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, নির্মাণাধীন বাড়িগুলো করা হয়েছে উপজেলার হাজেরাইল গ্রামে ৬৪টি, মাছনা-বেগমপুর গ্রামে ৬৩টি, শিরালী মদনপুর গ্রামে ৪৬টি, মধুপুর গ্রামে ৩৭টি পৌরসভাধীন হাকোবা গ্রামে ৩৭টি, কালারহাট গ্রামে ৫টি, চাকলা গ্রামে ২৮টি ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নির্মাণাধীন এ বাড়ির সংখ্যা ২৬২টি। এসব বাড়ি নির্মাণ করতে জমি ছাড়াও বাড়িতে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রতিটি বাড়ির বসতঘরের দুটি রুমের সঙ্গে সংযুক্ত টয়লেট এবং রান্নাঘর পেয়েছেন সুবিধাভোগীরা। ভূমি এবং গৃহহীন পরিবারগুলোর এসব বাড়িগুলো পেয়ে আনন্দের কমতি নেই। সুবিধাভোগী এ পরিবারগুলো সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, সরকার ভূমি এবং গৃহহীনদের প্রতি নজর রেখেছেন এবং তাদের প্রতিটি পরিবারকে বাড়িঘর দেয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তা আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করেছি। এছাড়া তিনি আরও বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ভূমি এবং গৃহহীন পরিবারের মাঝে সরকারের দেওয়া এ বাড়িগুলো বন্টন করা হয়েছে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগের আহ্বায়ক উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশের একমাত্র উন্নয়নশীল সরকার। তিনি সুদক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনার কারণে আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে রূপ নিয়েছে। ভূমি এবং গৃহহীনদের থাকার সুবন্দবস্তর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার জনবান্ধব। এ সরকার নির্বাচনের আগে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ এবং ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে বাড়ি দেয়ার নির্বাচনী যে ইস্তেহার দিয়েছিল সেটা বাস্তবায়ন করে চলেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশে কোন ব্যক্তি গৃহহীন থাকবে না। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকে।
বাসস/এনডি/সংবাদদাতা/১০৩০/নূসী