তিন হাফ-সেঞ্চুরিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের রান ২৫৭

242

ঢাকা, ২৩ মে ২০২১ (বাসস) : অধিনায়ক তামিম ইকবাল-উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাফ-সেঞ্চুরিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ২৫৭ রান করেছে বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৫৭ রান করে বাংলাদেশ। তামিম ৫২, মুশফিক ৮৪ ও মাহমুদুল্লাহ ৫৪ রান করেন।
শ্রীলংকা শিবিরে করোনার থাবায় প্রথম ওয়ানডে মাঠে গড়ানো নিয়ে জল্পনা-কল্পনা হয়েছিলো। কিন্তু নির্ধারিত সময়েই নিয়ে শুরু হয় সিরিজের প্রথম ওয়ানডে। সেখানে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। লিটন দাসকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন তামিম। তবে শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি টাইগারদের।
প্রথম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি হাকান তামিম। তবে দ্বিতীয় ওভারেই লিটনকে হারানোর ধাক্কা সইতে হয় বাংলাদেশকে। মাত্র ৩ বল খেলে শ্রীলংকার পেসার দুসমন্ত চামিরার বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হন লিটন।
এরপর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টা করেন তামিম। চামিরার করা দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খোলেন সাকিব।
তামিমের সাথে উইকেটে সেট হতে সাবলীল ঢঙে ব্যাট করছিলেন সাকিব। রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন অধিনায়ক তামিম। এতে ১০ ওভার শেষে স্কোর বোর্ডে ৪০ রান পায় বাংলাদেশ।
তবে ১৩তম ওভারে নিজের উইকেটটি বিলিয়ে দেন সাকিব। লংকান স্পিনার দানুস্কা গুনাতিলকাকে ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অনে ক্যাচ দেয়া সাকিব ৩৪ বলে ২টি চারে ১৫ রান করেন । তামিমের সাথে ৬৪ বলে ৩৮ রান যোগ করেন তিনি।
৪৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হিসেবে সাকিবের বিদায়ে ক্রিজে তামিমের সঙ্গী হন মুশফিকুর রহিম। দু’জনে ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেছিলেন। দলের স্কোরও বাড়ছিলো তামিম-মুশফিকের ব্যাটে।
২২তম ওভারে ২১৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫১তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। ৬৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পাবার পরের ওভারেই বিদায়ের ঘন্টা বাজে তামিমের।
শ্রীলংকার অফ-স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ডেলিভারির লাইন মিস করে লেগ বিফোর ফাঁদে পড়ে তামিম। নন-স্ট্রাইকে থাকা আম্পায়ারের দেয়া আউটের সিদ্বান্তকে ভুল প্রমান করতে রিভিউ নেন তামিম। কিন্তু রিভিউও বাঁচাতে পারেননি তামিমকে।
তামিমের বিদায়ে উইকেটে আসেন মোহাম্মদ মিঠুন। প্রথম বলেই ডি সিলভাকে উইকেট উপহার দেন মিঠুন। প্যাডেল সুইপ করতে দিয়ে লেগ বিফোর হন তিনি। তামিমের মত রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি মিঠুন। ফলে পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোর পাশাপাশি দু’টি রিভিউও হারায় টাইগাররা।
২৩ ওভারে ৯৯ রানের ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপ দূর করতে বড় জুটির প্রয়োজন ছিলো। এই অবস্থায় ক্রিজে মুশফিক, সাথে পেয়ে যান বহু ম্যাচে এমন পরিস্থিতি সামাল দেয়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় সাবধানে খেলতে থাকেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। রানের গতি ধরে রাখার দিকেও মনোযোগি ছিলেন তারা। এ অবস্থায় ৩২তম ওভারে ২২৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪০তম অর্ধশতকের দেখা পান মুশফিক। এজন্য ৫৩ বল খেলেন তিনি।
মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর ব্যাটে ৪৩তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ২শ স্পর্শ করে। আর ৪৪তম ওভারের প্রথম বলে মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ জুটি ভাঙ্গেন শ্রীলংকার বাঁ-হাতি স্পিনার লক্ষন সান্দাকান। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হওয়া মুশফিক করেন ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৭ বলে ৮৪ রান । পঞ্চম উইকেটে মাহমুদুল্লাহর সাথে ১২২ বলে ১০৯ রান যোগ করেন। জুটিতে মুশফিক ৫৬ বলে ৫৭ ও মাহমুদুল্লাহ ৬৬ বলে ৪৭ রান করেছিলেন।
মুশফিকের আউট হবার পরের ওভারে ৭০ বলে ১৯৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৪তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদুল্লাহ। হাফ-সেঞ্চুরির পর ইনিংসের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার লক্ষ্য ছিলো মাহমুদুল্লাহর। কিন্তু সেটি হতে দেননি ডি সিলভা। ৪৮তম ওভারের প্রথম বলে মাহমুদুল্লাহর উইকেট উপড়ে ফেলেন তিনি। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭৬ বলে ৫৪ রান করেন মাহমুদুল্লাহ।
মাহমুদুল্লাহ যখন আউট হন তখন বাংলাদেশের রান ২৩০। ইনিংসের বল বাকী ছিলো ১৭টি। শেষদিকে আফিফ হোসেনের ২২ বলে ৩টি চারে অপরাজিত ২৭ রান এবং মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের ৯ বলে ২টি চারে অপরাজিত ১৩ রানের সুবাদে লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শ্রীলংকার ডি সিলভা ৪৫ রানে ৩ উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড (টস- বাংলাদেশ) :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল এলবিডব্লু ব ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ৫২
লিটন দাস ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ব চামিরা ০
সাকিব আল হাসান ক নিশাঙ্কা ব গুনাতিলকা ১৫
মুশফিকুর রহিম ক উদানা ব সান্দাকান ৮৪
মোহাম্মদ মিঠুন এলবিডব্লু ব ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ০
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বোল্ড ব ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ৫৪
আফিফ হোসেন অপরাজিত ২৭
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন অপরাজিত ১৩
অতিরিক্ত (লে বা-১, নো-২, ও-৯) ১২
মোট (৫০ ওভার, ৬ উইকেট) ২৫৭
উইকেট পতন : ১/৫ (লিটন), ২/৪৩ (সাকিব), ৩/৯৯ (তামিম), ৪/৯৯ (মিঠুন), ৫/২০৮ (মুশফিক), ৬/২৩০ (মাহমুদুল্লাহ)।
শ্রীলংকা বোলিং :
উদানা : ১০-১-৬৪-০ (ও-৪),
চামিরা : ৮-০-৩৯-১ (ও-১),
ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা : ১০-০-৪৫-৩ (ও-৪, নো-১),
গুনাতিলকা : ২-০-৫-১,
হাসারাঙ্গা ডি সিলভা : ১০-০-৪৮-০ (ও-১),
লক্ষণ সান্দাকান : ১০-০-৫৫-১ (ও-১, নো-১)।