বাসস ক্রীড়া-২ : ভায়াদোলিদকে পরাজিত করে লা লিগা শিরোপা জিতলো এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ

110

বাসস ক্রীড়া-২
ফুটবল-লা লিগা
ভায়াদোলিদকে পরাজিত করে লা লিগা শিরোপা জিতলো এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ
মাদ্রিদ, ২৩ মে ২০২১ (বাসস) : লুইস সুয়ারেজের গোলে রিয়াল ভায়াদোলিদকে পরাজিত করে ২০২০-২১ মৌসুমের লা লিগা শিরোপা ঘরে তুলেছে এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। লিগের নির্ধারিত ৩৮ ম্যাচে ২৬টি জয়সহ সর্বমোট ৮৬ পয়েন্ট অর্জন করে এ্যাথলেটিকো শিরোপা নিশ্চিত করেছে।
তাদের থেকে দুই পয়েন্ট পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থান নিয়েই শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে আগের মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে। কাল লিগের শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে ভিয়ারিয়ালের সাথে পিছিয়ে পড়েও ৮৭ মিনিটে করিম বেনজেমার গোলে সমতায় ফিরে রিয়াল। এরপর ইনজুরি টাইমে লুকা মড্রিচের গোলে রিয়ালের জয় নিশ্চিত হলেও শিরোপা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।
এদিকে এইবারকে ১-০ গোলে পরাজিত করে জয় দিয়ে মৌসুম শেষ করলেও এ্যাথলেটিকোর থেকে ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে থেকেই এবারের লিগে বিদায় নিতে হয়েছে আরেক জায়ান্ট বার্সেলোনাকে। এইবারের মাঠে ৮১ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করেছেন ফরাসি তারকা আঁতোয়াইন গ্রীজম্যান।
গত মৌসুমের শেষে অনেকটা জোড় করেই বার্সেলোনা তাদের উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার সুয়ারেজকে দল থেকে বিদায় করে দিয়েছিল। সেই সুয়ারেজই কাল এ্যাথলেটিকোকে ২০১৪ সালের পর প্রথম লা লিগার শিরোপা উপহার দেন। এবারের লিগে তিনি গোল করেছেন ২১টি।
রিয়ালের মাঠে ফলাফল যাই হোক না কেন এ্যাথলেটিকো জানতো এই ম্যাচে জয়ী হতে পারলে শিরোপা তাদের ঘরেই আসবে। কিন্তু ভায়াদোলিদও ছেড়ে কথা বলেনি। ১৮ মিনিটে অস্কার প্লানোর গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ৫৭ মিনিটে এ্যাঞ্জেল কোরেয়ার গোলে সমতা ফেরানোর পর সুয়ারেজ ৬৭ মিনিটে দিয়েগো সিমিওনেকে শিরোপা উপহার দেন। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে এ্যাথলেটিকোর খেলোয়াড়রা উল্লাসে ফেটে পড়ে, আর এরই সাথে ইউরোপের সবচেয়ে নার্ভাস ও অনিশ্চিত লিগের সমাপ্তি হয়।
মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে এ্যাথলেটিকো কোচ সিমিওনে বলেছিলেন এটি ‘সুয়ারেজ জোন’, এখন অপেক্ষা শুধু প্রমানের। গত সপ্তাহে ওসাসুনার বিপক্ষেও জয়সূচক গোলটি করেছিলেন সুয়ারেজ। আর ঐ জয়েই শিরোপা মোটামুটিভাবে এ্যাথলেটিকোর হাতে চলে এসেছিল। আর এরপর শেষ দিনে শিরোপাতে এ্যাথলেটিকো তাদের নাম লেখাতে সক্ষম হয়।
গত ১৭ বছরে এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বারের মত বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের বাইরে অন্য কোন দল লা লিগার শিরোপা দখল কররো। ২০১৪ সালে প্রথমবারের ঐ শিরোপাটিও ছিল সিমিওনের দলের।
ডিসেম্বরের পর থেকে লিগ টেবিলের শীর্ষ দল হিসেবেই কাল শেষ ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমেছিল এ্যাথলেটিকো। আগের ম্যাচে ৭৫ মিনিটে পিছিয়ে পড়েও শেষ আট মিনিটে দুই গোল দিয়ে ওসাসুনাকে পরাস্ত করার স্মৃতিই যেন কাল ফিরে এসেছিল, খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। শিরোপা জয়ে এ্যাথলেটিকোর এবারের পথটা মোটেই মসৃন ছিলনা। ফেব্রুয়ারিতে ১০ পয়েন্টের ব্যবধানে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনাকে পিছনে ফেলার পরেও মে মাসের শুরুতে এসে তা দাঁড়া মাত্র দুইয়ে। আর তখনই তাদের নিজেদের ফলাফলের বাইরে প্রতিদিনই অপেক্ষা করতে হয়েছে রিয়াল ও বার্সেলোনার পরাজয়ের কিংবা ড্রয়ের। টেবিলের ১৯তম স্থানে থাকা ভায়াদোলিদের বিপক্ষে তাই শেষ ম্যাচে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাসী ছিল সিমিওনের শিষ্যরা। ভায়াদোলিদ প্লাজা মেয়রে ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘন্টা আগেই বেশ কিছু এ্যাথলেটিকো সমর্থক জড়ো হয়ে উল্লাস করতে শুরু করে। স্টেডিয়ামের বাইরেও একই দৃশ্য দেখা গেছে।
ম্যাচের শুরুতেই সুয়ারেজ দুটি সুযোগ হাতছাড়া করেন। কিন্তু এ্যাথলেটিকোর কর্ণার থেকে বেলজিয়ান মিডফিল্ডার ইয়ানিক কারাসকো বলের পজিশন হারালে ভায়াদোলিদ আক্রমনের সুযোগ পায়। মধ্যমাঠ থেকে বল পেয়ে রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক তরুন প্রতিভা ওস্কার প্লানো এ্যাথলেটিকো গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাককে পরাস্ত করলে ১৮ মিনিটে এগিয়ে যায় ভায়াদোলিদ। এরপর এ্যাথলেটিকো অনেক সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি। সুয়ারেজের একটি কার্লিং শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ফিলিপের হেড সরাসরি ভায়াদোলিদ গোলরক্ষক জোর্দি মাসিপের হাতে ধরা পড়ে।
এদিকে একইসাথে আরেক মাঠে চলতে থাকা ম্যাচেও প্রথমার্ধে রিয়াল মাদ্রিদ পিছিয়ে পড়েছিল। ২০ মিনিটে ইয়েরেমি পিনোর গোলে লিড পায় ভিয়ারিয়াল। বিরতির পর শিরোপা প্রত্যাশী দুই দলই পিছিয়ে পড়েও ম্যাচ শুরু করে। কিন্তু এই লড়াইয়ে প্রথম চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে এ্যাথলেটিকো। যদিও প্রথম গোল পেয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কাসেমিরোর ক্রস থেকে বেনজেমার হেডে রিয়াল এগিয়ে গেলেও ভিএআর ফরাসি তারকার হ্যান্ডবলে সেটি বাতিল করে দেয়। এর আগে এ্যাঞ্জেল কোরেয়া এ্যাথলেটিকোর হয়ে ৫৭ মিনিটে সমতা ফিরিয়েছিলেন। শন উইসম্যানের হেড জালের ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ায় আরো একবার ভায়াদোলিদের এগিয়ে যাওয়া হয়নি। এই সুযোগে ৬৭ মিনিটে সুয়ারেজ জয়সূচক গোলটি উপহার দেন। অন্যদিকে ৮৭ মিনিটে কোনাকুনি শটে বেনজেমা রিয়ালের হয়ে সমতা ফেরান। এরপর ইনজুরি টাইমে মড্রিচের গোলে রিয়াল সান্তুনার জয় পায়।
বাসস/নীহা/১৪৩৮/স্বব