জাজিরায় মাদ্রাজী ওলকচু ও গাছ আলুর চাষ হচ্ছে

1084

॥ এস এম মজিবুর রহমান ॥
শরীয়তপুর, ২৩ মে, ২০২১ (বাসস) : মানুষের প্রাত্যহিক খাদ্য তালিকায় কন্দ তথা কচু জাতীয় ফসলের সংযোজন ঘটাতে এবং নিরাপদ ফসল উৎপাদন নিশ্চিত করনের পাশাপাশি আমদানি বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন কন্দল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম বারের মত জাজিরাতে ওলকচু ও গাছ আলুর চাষ। ২০২০-২১ অর্থ বছরে উপজেলায় ৫ জন কৃষকের মাধ্যমে মাদাজী ওলকচু এবং দুইজন কৃষকের মাধ্যমে গাছ আলু চাষ করা হয়েছে।
কচু জাতীয় ফসলের উৎপাদন খরচ কম এবং বসত বাড়ির আশাপাশে কম উর্বর জায়গায় ও চাষ করা যায়। চাষে বিষ প্রয়োগ করতে হয় না বললেই চলে। বাজারে এর ভাল চাহিদা রয়েছে। তাই জাজিরাতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে এ বছর ওলকচু, গাছ আলু ছাড়াও পানি কচু, লতি কচু, মুখী কচু, আলু, মিষ্টি আলুসহ নান কন্দ জাতীয় ফসলের উৎপাদন করতে প্রদর্শনী স্থাপনসহ প্রশিক্ষণ এবং মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষক সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের ডুবিসায়বর গ্রামের ওলকচু চাষি কাজি ফারুক বলেন, এ ওল কচু আগে কখনো চাষ করিনাই। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবছরই প্রথম আবাদ করেছি। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। সীমিত খরচে ও কম ঝামেলাযুক্ত ওলকচুতে এবার লাভ পেলে আগামীতে আবাদের পরিমাণ বৃদ্ধি করবো।
বড়কান্দি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: নাসির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, জাজিরাতে কন্দ জাতীয় ফসলের বেশ চাহিদা থাকলেও উৎপাদন তেমন নেই। তাই আমরা এ বছর কৃষকদেরকে ওলকচু, গাছ আলুসহ পানি কচু ও মুখী কচু লতির প্রদর্শনীর মাধ্যমে আবাদ করিয়েছি। ভালো ফলন পেতে কৃষকদেরকে আমরা প্রতিনয়ত বিভিন্ন কারিগরি পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি যাতে কৃষক ভালো ফলন পায়। জাজিরাতে বর্তমানে নানা ধরনের নিত্য নতুন ফসলের জাত ও প্রযুক্তি বিস্তারে উপজেলা কৃষি অফিস দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে।
জাজিরা উপজেলার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জামাল হোসেন বাসস’কে বলেন, দেশে কন্দ জাতীয় ফসলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক কম সে বিষয় নিয়ে সরকার দেশে কন্দ জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আমরা প্রথম বছর ৭টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে ৭বিঘা জমিতে এ ওলকচু, গাছ আলুর মত অপ্রচলিত অথচ উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিতে পেরেছি। এর ফলে এর দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে কোরিয়া, জাপানসহ অন্যান্য দেশে ও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা এ ফসল উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ পরে কম পরায় লাভ বেশি হয়। কারণ এ সব কচু জাতীয় ফসল বাজারে আসে এমন একটা সময়ে যখন অন্যান্য সবজি তেমন একটা থাকে না।
তিনি আরও জানান, ওলকচু ও গাছ আলুতে রয়েছে উপকারী আশ ছাড়াও শর্করা ও প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ লবন। ওললের ডাঁটা ও ওলের কচি শাকের তরকারী বা ঘন্ট শরীরের পক্ষে খুব উপকারী। নিয়মিত ওলের ডাল বা শুধু ওল সিদ্ধ খেলে অর্শ থেকে মুক্তি ঘটবে। মিষ্টি ওল তীক্ষ্ম, উষ্ণ ও কষযুক্ত হওয়ায় শরীরকে গরম করে। ওলে আছে বায়ু ও কফ নাশ করার গুণ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে বুনোওল গোদ, শূলব্যাথা, দাঁতের ব্যাথার মহৌষধ।
(পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে) প্রতি ১০০গ্রাম ওলকচুতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট-১৮.৫ গ্রাম, ফ্যাট-০.২ গ্রাম, প্রোটিন-১.৩ গ্রাম, থায়ামিন-০.০৬ মি.গ্রাম, লোহা- ০.৬ মি.গ্রাম, আঁশ-০.৮ গ্রাম, নিকোটিনিক অ্যাসিড-০.৭ মি.গ্রাম, ক্যালসিয়াম-৫০ মি.গ্রাম, ফসফরাস-৩৪ মি.গ্রাম, পটাশিয়াম-১৯৩ মি.গ্রাম ও ভিটামিন ‘এ’-৪৩৪ মি.গ্রাম।