বাসস দেশ-৪ : সিলেটে বোরো উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ

106

বাসস দেশ-৪
বোরো-উৎপাদন-রেকর্ড
সিলেটে বোরো উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ
সিলেট, ২২ মে, ২০২১ (বাসস) : সিলেটে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার চাল উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩০ হাজার টন বেশি উৎপাদন হয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সিলেট অঞ্চলে এ বছর ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৮ টন। উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৫ টন।
পরিমিত বৃষ্টি, শীত কম থাকা, উচ্চ ফলনশীল জাত আবাদ বেশি হওয়ার কারণে এবার ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। একইসঙ্গে ধান কাটার সময় আবহাওয়া অনুকুল থাকায় ফসলহানীও হয়নি। সব মিলিয়ে এবার বোরো আশাতীত ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুঁটেছে।
এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ০ গড়ে উৎপাদন হয় ১৯ লাখ ২৯ হাজার ২৩ টন চাল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর (২০১৯-২০) বোরো আবাদ হয় ৪ লাখ ৭৪ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১৮ লাখ ৬৪ হাজার টন চাল। গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় এক লাখ টান বেশি চাল উৎপাদন হয়েছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বোরোর আবাদ হয় ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮৬৯ হেক্টর। চাল উৎপাদেনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ১০৫ টন। উৎপাদন হয় ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৪ টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০৯ টন বেশি।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬১ হাজার জমিতে উৎপাদন হয় ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৯৭৩ টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৭ টন চাল।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ অঞ্চলে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হলেও আগাম ও আকষ্মিক বন্যায় অধিকাংশ হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। কৃষকদের মাথায় হাত পড়ে। এ বছর ১০ লাখ ৩২ টন চাল উৎপাদন হয়। হাওরাঞ্চলে শুরু হয় হাহাকার।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা) মো. কাজী মজিবর রহমান জানিয়েছেন, হাওরের ধান কাটা শতভাগ শেষ হয়েছে। নন হাওরেও প্রায় শেষের দিকে। নন হাওরে এরই মধ্যে ৯১ শতাংশ ধান কর্তন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত (২০ মে) ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৪ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।
এবার হাইব্রিজ জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানায়, সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় এবার ১ লাখ ২৬ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিজ জাতীয় ধান আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৭৬ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৭১১ টন চাল।
উফশী জাতীয় ধান আবাদ হয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৮২ হেক্টর জমিতে। ৩ দশমিক ৮৭ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৭২১ টন। স্থানীয় জাতের ৮ হাজার ১৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। ১ দশমিক ৮৪ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৭৪৩ টন চাল।
সিলেট জেলায় এই বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২ হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৮১ হাজার ৯শ হেক্টর জমি। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮২৯ টন নির্ধারণ করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮১ হাজার ৭শ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৩ লাখ ১৯ হাজার ১২০ টন চাল উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র সোম।
জেলায় উফশী ধানের আবাদ হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে। ৩ দশমিক ৯০ গড়ে মোট উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার ৫৭ টন। হাইব্রিজ জাতীয় ধান আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৭শ হেক্টর। ৪ দশমিক ৭৩ উৎপাদন হড়ে মোট ৬০ হাজার ৭১ টন এবং স্থানীয় ৪ হাজার ৫৭০ হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ২৭১ টন।
সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড়ে ৪ দশমিক ৯ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। সবমিলিয়ে উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ১৯ টন চাল।
জেলায় ৫৬ হাজার হেক্টরে হাইব্রিজ জাতীয় বোরো চাষাবাদ হয়েছে। গড়ে ৪ দশমিক ৮৬ গড়ে চাল উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ১৬০ টন। স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে সবচেয়ে কম। ১২ হাজার হেক্টরে ১ দশমিক ৮২ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার ৮৪০ টন। উফশী জাতের ধান উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে। ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ গড়ে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬০ টন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ জানান, মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হলেও কাক্সিক্ষত ফলন হয়েছে। গড় উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৯ টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
মৌলভীবাজারে হাওর এলাকা কম হলেও উৎপাদন হয়েছে ভালো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, জেলার সাতটি উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৬ হাজার ৩৩০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১৭ হাজার টন চাল। উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৯৬১ টন।
জেলায় হাইব্রিজ জাতীয় ধান চাষ হয়েছে ৮ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ৪ দশমিক ৮৮ টন। সবমিলিয়ে ৩৯ হাজার ৭২৩ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। উফশী জাতীয় ধান আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৪৩ হেক্টরে। ৩ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন গড়ে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৭ টন এবং স্থানীয় জাতের ধান চাষ হয়েছে মাত্র ৩৬২ হেক্টরে। উৎপাদন হয়েছে হেক্টর প্রতি ৫৬১ টন।
হবিগঞ্জে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৬৯০ হেক্টর। আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ১৮ হাজার ১৫১ টন। সেখানেও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
বাসস/এনডি/বি.প্র./সংবাদদাতা/১১৩৫/কেজিএ