কাঠমান্ডুতে বিমসটেক’র ৪র্থ শীর্ষ সম্মেলন শুরু

411

কাঠমান্ডু, ৩০ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : আজ দুপুরে এখানে চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক)-এর এবারের শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘টুওয়ার্ডস পিসফুল, প্রসপারাস অ্যান্ড সাসটেইনেবল বে অব বেঙ্গল রিজিয়ন।’
বিমসটেক’র বর্তমান চেয়ারপার্সন এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি স্থানীয় হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাত-জাতি আঞ্চলিক গ্রুপ নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভুটানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাশো সেরিং ওয়াংচুক, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুট চান-ও-চা এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন।
এই সম্মেলন উপলক্ষে কাঠমান্ডুকে সাত দেশের জাতীয় পতাকাসহ মনোরম সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। বিমসটেক নেতৃবৃন্দের বিশাল প্রতিকৃতিও এতে স্থাপন করা হয়েছে।
কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়, এই সম্মেলনের নিরাপত্তা রক্ষায় নেপালের সেনাবাহিনী, পুলিশ, সশ¯্র পুলিশ বাহিনী এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ৩০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানত যোগাযোগ, দারিদ্র্য বিমোচন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন, জলবায়ূ পরিবর্তন ও নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জের ওপর আলোকপাত করা হবে।
অন্যান্য আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে বিমসটেক সচিবালয়কে শক্তিশালী ও কার্যকর করা, বিমসটেক উন্নয়ন তহবিল গঠন, বুড্ডিস্ট সার্কিট-এর আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপন, বিমসটেক সনদ গ্রহণ ও অগ্রাধিকার ক্ষেত্রসমূহের যৌক্তিকীকরণ।
শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে জ্বালানি বাণিজ্যের পথ সুগম করার লক্ষ্যে বিমসটেক গ্রিড আন্তঃসংযোগ স্থাপনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।
বিমসটেক নেতৃবৃন্দ একটি ৩১ আগস্ট শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী দিনে শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ ও টেকসই বঙ্গোপসাগর অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন ঘোষণা গ্রহণ করবেন।
শীর্ষ সম্মেলনে বিভিন্ন বৈঠকে বিমসটেক অঞ্চলের সার্বিক প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে গৃহীত অগ্রাধিকার ক্ষেত্রসমূহের আওতায় বেশকিছু উদ্যোগ পর্যালোচনা করা হবে।
শুক্রবার দু’দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী পর্বে বর্তমান চেয়ার নেপাল শ্রীলংকার কাছে বিমসটেকের চেয়ারম্যানশিপ হস্তান্তর করবে।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাঠমান্ডু শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, শীর্ষ সম্মেলনে এ অঞ্চলে অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ এবং তদন্ত পরিচালনায় পারস্পরিক সহযোগিতা উন্নয়নের লক্ষ্যে ফৌজদারি বিষয়াদিকে পারস্পরিক আইনি সহযোগিতা সংক্রান্ত বিমসটেক কনভেনশন স্বাক্ষরিত হবে।
তিনি বলেন, বিমসটেক গ্রিড আন্তঃসংযোগ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে সকল সদস্য রাষ্ট্র সম্মত হয়েছে।
উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বিমসটেক ১৯৯৭ সালের ৬ জুন ব্যাংকক ঘোষণার মাধ্যমে অস্তিত্ব লাভ করে। এর সদস্য সংখ্যা ৭। এর মধ্যে ৫টি দক্ষিণ এশিয়ার- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকা এবং দুটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার- মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড।
প্রাথমিকভাবে এ অর্থনৈতিক ব্লকটি চারটি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হয়েছিল। তখন এর নাম ছিলো বিস্ট-এক (বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ড অর্থনৈতিক সহযোগিতা)।
১৯৯৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ব্যাংককে একটি বিশেষ মন্ত্রিপর্যায়ের সভায় মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্তির মধ্যদিয়ে গ্রুপটির পুনঃনামকরণ করা হয় বিমসটেক (বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ড অর্থনৈতিক সহযোগিতা)।
২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে থাইল্যান্ডে ৬ষ্ঠ মন্ত্রিপর্র্যায়ের সভায় নেপাল ও ভুটানকে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্যদিয়ে গ্রুপটির নাম পরিবর্তন করে ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনোমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক)’ রাখা হয়।
গ্রুপটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিলো বিশ্বায়নের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রশমিত করে এবং আঞ্চলিক সম্পদ ও ভৌগোলিক সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অংশীদারিত্বমূলক ও বর্ধিত প্রবৃদ্ধি অর্জন।
২০১৪ সালে মিয়ানমারের নে পি দো-তে তৃতীয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং ২০১৬ সালে ভারতের গোয়ায় বিমসটেক নেতৃবৃন্দের সমাবেশ এবং ব্রিকস অ্যান্ড বিমসটেক আউটরিচ সামিট অনুষ্ঠিত হয়।