এবারও ঢাকাবাসীকে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম হবো : মেয়র তাপস

203

ঢাকা, ১৯ মে, ২০২১ (বাসস) : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, গতবারের মতো এবারও ঢাকাবাসীকে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম হবো। মশক নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশন যে সক্ষম সে বিষয়ে জনগণের মাঝে আমরা আস্থা সঞ্চার করতে পেরেছি।
দায়িত্ব গ্রহণের ১ বছর উপলক্ষে আজ সিটি কর্পোরেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, ‘আমাদের কর্মপরিকল্পনায় প্রথমেই জনগণের মৌলিক সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করি এবং করোনা মহামারির মাঝেই যাতে নগরবাসীকে ডেঙ্গুর পীড়াদায়ক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে না হয় সেজন্য শুরু থেকেই মশক নিয়ন্ত্রণের উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি এবং মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছি। আল্লাহর রহমতে সফলতাও পেয়েছি। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোন প্রাণহানি হয়নি। এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কিউলেক্স মশকের উপদ্রব কিছুটা বাড়লেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি।’
মেয়র এ সময় সিটি কর্পোরেশনের বিগত ১ বছরের কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও আধুনিক ঢাকার রূপরেখাকে সাদরে গ্রহণ করে ঢাকাবাসী আমাকে তাদের সেবা করার সুযোগ দেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর উন্নত ঢাকা গড়ে তুলতে আমি যখন পরিকল্পনা সুনির্দিষ্ট করছিলাম। গত বছর ১৬ মে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করি এবং করোনা মহামারির মাঝেই সামগ্রিক কার্যক্রম চালু করার প্রচেষ্টা নেই।’
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানো হয়েছে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, দায়িত্ব গ্রহণকালে বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র ছিলো ২১টি। আমার দায়িত্ব পালনকালে নতুন ৬টি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে আরও নতুন ১৪টি বর্জ্য স্থানান্তর নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। ২০২১ সালের মধ্যেই ৭৫টি ওয়ার্ডে ৭৫টি বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
নতুন ১৮টি এলাকার কিছু অংশ বাদে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পুরো এলাকায় এখন সড়কবাতি জ্বলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়ক বাতি নিয়ে এখন আর কোনো অভিযোগ নেই।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ড এবং ৮টি সংসদীয় এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। যা বর্তমান অর্থবছরে সমাপ্ত হবে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ছোটখাটো সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে মেয়র জানান।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নগরীর দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত এক মানবিক সমস্যা। সামান্য বৃষ্টিতেই আমাদের প্রিয় এই নগরী পানির নিচে তলিয়ে যেত। কিন্তু কেউ কখনো এই সমস্যার গভীরে যাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ওয়াসার কাছ থেকে খাল ও বক্স কালভার্টগুলো সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দায়িত্ব পেয়েই দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ২ জানুয়ারি থেকে ২টি বক্স কালভার্ট ও ৪টি খাল থেকে বর্জ্য ও পলি অপসারণ কার্যক্রম শুরু করে। একইসাথে সেসব খালের সীমানা নির্ধারণ এবং অবৈধ দখলে থাকা জায়গা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে অধ্যবদি নিজস্ব অর্থায়নেই সেসব খাল ও বক্স কালভার্টের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও খনন কার্য সম্পাদন করা হয়েছে। সার্বিক কর্মকান্ডের ফলে এই বর্ষায় আমরা ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতার কবল হতে বহুলাংশে মুক্তি দিতে পারব বলে আমি আশাবাদী।
তিনি জানান, বিগত ১ বছরে প্রায় ১২০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার ও উন্নয়ন, ৯০ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ ও উন্নয়ন, ৪৫ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নসহ ৩টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ২টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, ৩টি সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণ, ৩টি কবরস্থান ও ১টি শশ্মানঘাট উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া জিরানি খাল, মান্ডা খাল, কালুনগর খাল, কাজলা খাল ও শ্যামপুর খালের পুনরুদ্ধারকৃত জমির প্রায় ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে সীমানা পিলার/ফেন্সিং কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় ১৭টি নতুন গণশৌচাগার নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।