চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত ৫২ হাজার ছাড়িয়েছে

197

চট্টগ্রাম, ১৯ মে, ২০২১ (বাসস) : চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫২ হাজার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১২৬ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সংক্রমণ হার ১১ দশমিক ০৬ শতাংশ। এ সময়ে করোনায় ১ জনের মৃত্যু হয়। সুস্থ হয়েছেন ১৩৫ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে জানা যায়, নগরীর আটটি ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের ১ হাজার ১৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নতুন শনাক্ত ১২৬ জনের মধ্যে শহরের ৮৮ ও এগারো উপজেলার ৩৮ জন। জেলায় করোনাভাইরাসে মোট শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ৫২ হাজার ২৩ জন। সংক্রমিতদের মধ্যে শহরের ৪১ হাজার ৬১০ও গ্রামের ১০ হাজার ৪১৩ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে হাটহাজারীতে সর্বোচ্চ ১৩, রাউজানে ৮, আনোয়ারায় ৪, বোয়ালখালীতে ৩, সন্দ্বীপ, বাঁশখালী ও লোহাগাড়ায় ২ জন করে এবং মিররসরাই, ফটিকছড়ি, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ায় ১ জন করে রয়েছেন।
গতকাল করোনায় এক রোগির মৃত্যু হয়। মৃতের সংখ্যা বেড়ে এখন ৫৮৮ জন। এতে শহরের ৪৩১ ও গ্রামের ১৫৭ জন। সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছেন নতুন ১৩৫ জন। মোট আরোগ্যলাভকারীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩৫২ জনে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ হাজার ৪২৬ জন এবং ঘরে থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হন ৩২ হাজার ৯২৬ জন। হোম কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে নতুন যুক্ত হন ৩০ জন। ছাড়পত্র নেন ৪৯ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১ হাজার ৪৪০ জন।
উল্লেখ্য, গতকালের ১ জনসহ চলতি মে মাসের প্রথম ১৮ দিনে চট্টগ্রামে ৬৪ করোনা রোগির মৃত্যু হলো। সবচেয়ে বেশি ৮ জনের মৃত্যু হয় ৮ মে। গতকালও আক্রান্তের তুলনায় আরোগ্যলাভকারী রোগির সংখ্যা ছিল বেশি।
এদিকে, এবার এগারো দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার পূর্ণ হয়েছে। সর্বশেষ ৭ মে ১৩৬ জনের সংক্রমণের মধ্য দিয়ে সাত দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার পূর্ণ হয়ে ৫১ হাজার অতিক্রম করে। ৩০ এপ্রিল ১৮৫ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হলে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ৯০ জনে। এর আগে ৪৯ হাজার অতিক্রম করে চার দিনে। এদিন চট্টগ্রামে ২০৮ জনের নমুনায় ভাইরাস শনাক্ত হয়ে মোট আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৯৫ জনে। ২১ এপ্রিল ২৭৮ জনের নমুনায় ভাইরাস শনাক্ত হলে করোনা রোগির সংখ্যা তিন দিনে ৪৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১৮ এপ্রিল ৪৭ হাজার অতিক্রম করে চার দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে। দুই দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে মোট আক্রান্ত ৪৬ হাজার ছাড়িয়ে যায় ১৪ এপ্রিল। তিন দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে ১২ এপ্রিল জেলায় করোনা রোগির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ২৯১ জনে। এর আগে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করেছিল ৯ এপ্রিল। এ সময়ে পরপর পাঁচবার তিনদিনে করোনা রোগির হাজার পূর্ণ হয়। ৪৩ হাজার পার হয় ৭ এপ্রিল ও ৪২ হাজার অতিক্রম করে ৫ এপ্রিল। ২ এপ্রিল ৪০ থেকে ৪১ হাজারে যেতেও সময় লাগে ৩ দিন। অথচ, ৪০ হাজার পূর্ণ হয়েছিল ৩১ মার্চ। ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছিল ২৬ মার্চ, তাও পাঁচ দিনে। এর আগে ৩৮ হাজার পূর্ণ হয় ২২ মার্চ। ৩৭ হাজার পূর্ণ হয় ১৭ মার্চ। ৩৬ হাজার পূর্ণ হয় ১০ মার্চ। এর আগে ১ মার্চ ৩৫ হাজার পূর্ণ হয়। সে সময় এক হাজার পূর্ণ হতে ১৪ দিন লেগেছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩৪ হাজার অতিক্রম করার সময় ১ হাজার পূর্ণ হয় ১৫ দিনে। ৩১ জানুয়ারি ১৬ দিনে ১ হাজার পূর্ণ হয়ে ৩৩ হাজার অতিক্রম করে।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, গতকাল সবচেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি শেভরনে। এখানে ২৮০ জনের নমুনা পরীক্ষায় চন্দনাইশের ১ ও লোহাগাড়ার ২ জনসহ ১৫ জন জীবাণুবাহক পাওয়া যায়। ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ল্যাবে ২৭১টি নমুনার মধ্যে মিরসরাইয়ের ১ ও সন্দ্বীপের ২টিসহ ৮টির পজিটিভ রেজাল্ট আসে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ২৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে শহরের ১০ও গ্রামের ১৪ জনের দেহে ভাইরাস থাকার প্রমাণ মিলে। গ্রামের ১৪ জনের মধ্যে হাটহাজারীর ১২, রাউজানের ৮, আনোয়ারার ৩ ও সাতকানিয়ার ১ জন। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১১৪টি নমুনায় ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী ও বাঁশখালীর ১টি করে ৩টিসহ ১৯টিতে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব চিহ্নিত হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৫৪ জনের নমুনার মধ্যে বোয়ালখালীর ১ জনসহ ১০ জন করোনায় আক্রান্ত হন। নগরীর একমাত্র বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএল-এ ৩৬টি নমুনা পরীক্ষায় হাটহাজারীর ১ জনসহ ১৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৬৮টি নমুনায় বোয়ালখালী ও আনোয়ারার ২টিসহ ১৬টি এবং মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ১৯টি নমুনা পরীক্ষা করে শহরের ৬টিতে ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলে। এদিন চট্টগ্রামের ২৬ জনের নমুনা কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় বাঁশখালীর একজনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তবে নতুন যুক্ত দুই ল্যাব মেডিকেল সেন্টার ও পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে শেভরনে ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ, বিআইটিআইডি’তে ২ দশমিক ৯৫, চবিতে ১২ দশমিক ৫৪, সিভাসু’তে ১৬ দশমিক ৬৬, চমেকে ১৮ দশমিক ৫২, আরটিআরএলে ৪৭ দশমিক ২২, ইম্পেরিয়ালে ২৩ দশমিক ৫৩, মা ও শিশু হাসপাতালে ৩১ দশমিক ৫৮ এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।