বরগুনা, ১৪ মে, ২০২১ (বাসস) : উপকূলীয় এই জেলায় প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আবাদি এবং অনাবাদি জমি, বনরাজি এবং পর্যটন কেন্দ্র সোনাকাটা, হরিণঘাটা। এখানে বসবাস করে ঐতিহ্যবাহী রাখাইন সম্প্রদায়। জেলার ৬ টি উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের ছোট এবং মাঝারি শিল্প, কল-কারখানা গড়ে ওঠার উপযোগিতা রয়েছে।
জেলাটি কৃষি নির্ভর হলেও এখানে মৎস্যজীবিদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। এখানে রয়েছে ৪০ হাজার জেলে। এখানকার জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরের ও খর¯্রােতা নদীগুলো থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ শিকার করে। বেশীরভাগ সময়েই পঁচে যাওয়ার ভয়ে স্বল্প মূল্যে আহরিত মাছ জেলেরা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য অন্য এলাকায় পাঠাতে হয়। ঢাকা, যশোর, খুলনা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আড়ৎ মালিকরা প্রক্রিয়াজাত করনের জন্য এখানকার মাছ কিনে নিয়ে যায়। এ জেলার পাথরঘাটায় একটি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র থাকলেও আমতলী ও তালতলীতে প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপন ও বরফকলের প্রয়োজনীয়তা বহু দিনের, জানিয়েছেন জেলে ও আড়তদাররা।
তালতলীর উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি উল হক জানান, তালতলী উপজেলার সাগর পাড়ের আশার চরে রয়েছে শুঁটকি পল্লী। কয়েক হাজার মানুষ শুটকি পল্লীতে কর্মরত। দেশের বিভিন্ন পোলট্রি ও ফিস ফিডের কারখানাগুলো তালতলী থেকে কাঁচামাল হিসেবে শুুঁটকি সংগ্রহ করে ট্রলার ও ট্্রাক ভর্তি করে নিয়ে যায়। শুঁটকিকে কেন্দ্র করে এখানে পোল্ট্রি ও ফিস ফিড শিল্প গড়ে উঠতে পারে।
বরগুনার পায়রা, বিশখালী নদী থেকে আহরণ করা হয় গলদা ও বাগদা রেনু পোনা। বাগের হাট, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের চিংড়ি ঘেরগুলোতে রেনু পোনা রপ্তানী করা হয়। চিংড়ির রেনু পোনা উৎপাদনের জন্য মৎস্য হ্যাচারী এবং বাণিজ্যিক চাষের জন্য ঘের শিল্প গড়ে তোলা খুবই সহজ, আলাপ কালে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ^জিত কুমার দেব।
কৃষি বিভাগের সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ জেলার জলাভূমিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে শামুক পাওয়া যায়। চুন তৈরীর উপকরণ ও মাছের খাদ্য হিসেবে সেগুলি চালান হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। শামুককে কেন্দ্র করে কুটির বা ছোট শিল্প গড়ে তোলা স্বল্প বিনিয়োগের ব্যাপার।
স্থানীয় চাষীরা ধান, বাদাম, ডাল, মিষ্টি কুমড়ো, আলু, তরমুজ, বাঙ্গিসহ নানা জাতের ফসল উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু সংরক্ষণের জন্য এখানে অদ্যাবদি কোন হিমাগার গড়ে ওঠেনি।
জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বদরুল হোসেন জানিয়েছেন, এখানকার জমিতে আউস, আমন, ইরি, বোরোসহ নানা জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরে উৎপাদিত ধান দিনাজপুর, মুন্সিগঞ্জ, মদনগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে চালান করা হয়। সেখানে যন্ত্রের মাধ্যমে সাধারণ ধান থেকে বাহারী নামের ও আকৃতির চালে রুপান্তর ঘটিয়ে কয়েকগুন বেশী দামে আবার এই অঞ্চলেই বিক্রি করা হচ্ছে। ধানের প্রাচুর্যতার উপর ভিত্তি করে জেলার সকল উজেলাতেই একাধিক করে আধুনিক রাইস মিল গড়ে উঠতে পারে।
বরগুনার সদরের বালিয়াতলী এবং তালতলী উপজেলায় রয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস। এ দু’টি স্থানে রাখাইনদের নিজস্ব তাঁত শিল্প রয়েছে। তাদের প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
তালতলী, সোনাকাটা, আশারচর, ফকিরহাট, বরগুনার বালিয়াতলী, বেতাগীর বিবিচিনি, পাথরঘাটার হরিণঘাটসহ বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পটকে কেন্দ্র করেও পর্যটন শিল্পের অমিয় সম্ভাবনা রয়েছে।