প্রকৃতির অকৃত্রিম ভালোবাসায় শস্য-খাদ্য ভান্ডারে সমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চল

981

॥ একেএম খায়রুল বাশার বুলবুল ॥
বরগুনা, ১৩ মে, ২০২১ (বাসস) : বাংলাদেশে শস্য ও খাদ্য ভান্ডার হিসেবে উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চলের পরিচিতি বহু পুরানো। প্রাকৃতিক উর্বরতা ও প্রাপ্ততার সাথে সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ খাদ্য উৎপাদনে খুবই ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলে কৃষক, জেলে, উৎপাদনকারীসহ সাধারণ মানুষ মনে করছেন। বরগুনাসহ উপকূলীয় বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও আহরিত মাছ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশের চাহিদা পূরনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
খাদ্য, শস্য, ধান উৎপাদনে প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চল শীর্ষস্থানে রয়েছে। ভূ-প্রকৃতি, নদ-নদী, খাল-বিল ও অনুকূল আবহাওয়ার সুফল ভোগ করেন স্থানীয় মানুষেরা। সেই সাথে কৃষি, মৎস্য ক্ষেত্রে সরকারের পরামর্শ, আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা স্থানীয় মানুষকে খাদ্য উৎপাদনে আরও বেশী সফলতার মুখ দেখিয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উপকূলীয় বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ৭ লাখ ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি ফসলী জমি রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ২৩ লাখ টনের বেশী ধান উৎপাদিত হচ্ছে। ১৬ লাখ টনের আভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ৭ লাখ টনের মতো বাড়তি ধান দেশের চাহিদা মেটাতে এখান থেকে সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক বদরুল হোসেন জানিয়েছেন, ধানের মতো উপকূলীয় অঞ্চলের পেয়ারা, তরমুজ, মিষ্টিআলু এবং আমড়ার উৎপাদনের পরিমাণ ও মান ইতোমধ্যে দেশে সর্বজনবিদিত। এ বিভাগের তিন জেলা পিরোজপুর, ঝালকাটি ও বরিশাল এর ৫৬টি গ্রামে প্রতিবছর কয়েক লাখ টন পেয়ারার ফলন হয়। উপকূলের বরগুনা, পটুয়াখালীসহ প্রায় সর্বত্র উৎপাদিত তরমুজ, মিষ্টিআলু ও আমড়ার খ্যাতি এখন দেশ ব্যাপী।
২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের পরে সরকারের কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে বেসরকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ অঞ্চলের কৃষকদের দিয়ে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ শুরু করে। সূর্যমূখীর চাষও ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বলে সহযোগি সংস্থা ব্রাকের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন।
গত কয়েক বছরে বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায় গোলআলুর চাষ আশাতীত বেড়েছে। এ অঞ্চলে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ নারিকেল ও সুপারি উৎপাদিত হয়। পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলায় নারিকেলের ছোবড়া নির্ভর কুঠির শিল্পও গড়ে উঠছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী সুদূর চীনেও এ এলাকার সুপারি রফতানি হতো এক সময়ে।
মৎস্যখাতেও সম্ভাবনাময় উপকূলীয় বিভাগটি। বরগুনার পাথরঘাটা, তালতলী, পটুয়াখালীর আলীপুর-মহিপুর, কুয়াকাটা, গলাচিপা, ভোলা প্রভৃতি জায়গা থেকে প্রচুর পরিমান মিঠাপানি ও সামুদ্রিক মাছ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। জানিয়েছেন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ^জিত কুমার দেব ।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানিয়েছেন, পদ্মার ইলিশের পাশাপাশি বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন নদ-নদীর ইলিশ দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, বরিশাল অঞ্চলে কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হলে কৃষক-জেলেসহ সাধারণ প্রান্তিক মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।