রাঙ্গামাটির পাহাড়ী এলাকায় কলার বাম্পার ফলন

505

রাঙ্গামাটি, ৫ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : জেলায় এবার কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলার পাহাড়ী এলাকা গুলোতে ও কলার ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা কৃষি বিভাগ। কলার বাম্পার ফলনের পাশাপাশি এবার দাম বেশী হওয়াতে খুশি কৃষক।
পাহাড়ে উৎপাদিত এসব কলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় রাঙ্গামাটি থেকে সংগ্রহ করে পাইকাররা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে। পাহাড়ে সাধারণত বাংলা কলা বা কাট্টলি কলা,চাঁপা কলা। তবে ক্ষেত্র বিশেষে বিভিন্ন এলাকায় স্বল্প পরিসরে সূর্যমূখী কলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির কলার চাষ হয়ে থাকে।
পাহাড়ে জুমচাষের পাশাপাশি কৃষক একই সাথে পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির কলার চাষ করে থাকেন। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় অবস্থিত বিভিন্ন পাহাড়ে এসব কলার বাগানগুলো চোখে পড়ে।
মূলত ঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ের মাটি ভেদে বিভিন্ন জাতের কলার আবাদ করা হয়। এ এলাকায় কলা আবাদে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বলেলই চলে। রাঙ্গামাটি পার্বত্যজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোরম পরিবেশের পাহাড়ে দুই জাতের কলা বেশি দেখা যায়। একটি বাংলা কলা অপরটি চাঁপা কলা। পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় চাপা কলার চেয়ে দ্বিগুন দামে বিক্রি হয় পাহাড়ে উৎপাদিত বাংলা বা কাট্টলি কলা।পার্বত্য চট্টগ্রামে সারা বছরই কলা উৎপাদন হলেও বছরে এ সময়ে কলার উৎপাদন বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
পাহাড়ে উৎপাদিত এসব কলা রাঙ্গামাটির পৌরসভা ট্রাক টার্মিনাল, বনরুপা সমতা ঘাট বাজার,তবলছড়ি বাজার, রিজার্ভ বাজার শুটকি পট্টি এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন কৃষকরা। তবে রাঙ্গামাটি শহরে সাপ্তাহিক বাজার শনিবার ও বুধবারে প্রচুর কলাসহ বিভিন্ন উৎপাদিত ফসলের সমারোহ ঘটে।
পাহাড়ী এলাকায় উৎপাদিত এসব কলার ছড়ি বর্তমানে ক্ষেত্র বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৬০০টাকায়। আবার আকারে কলার ছড়ি বড় হলে তা আরো বেশী দামে বিক্রি করছেন কৃষক।
পাহাড়ে উৎপাদিত এসব কলা সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আড়তদাররা এসে রাঙ্গামাটি জেলা শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজার এলাকা থেকে কলা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়।
সাপ্তাহিক হাটের দিনই রাঙ্গামাটিতে সবচেয়ে বেশী বেচা-কেনা হয় লক্ষ লক্ষ টাকার কলা। দূর্গম পাহাড়ী এলাকা থেকে রাঙ্গামাটিতে আজ বুধবার সাপ্তাহিক বাজারে কলা বিক্রি করতে আসা কৃষক শুভ্র তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এবার তার কলা বাগানে কলার ভালো ফলন হয়েছে। তিনি জানান, গত সপ্তাহে ৬ ছড়া কলা ভালো দামে বিক্রি করেছেন। তাই আবারো বাজারে বিক্রির জন্য আরো ২০ ছড়ি কলা নিয়ে এসেছেন। ২০ছড়ি কলা বেপারীরা ১০হাজার টাকায় চেয়েছেন কিন্তু তিনি ১৩ হজার টাকা হলে বিক্রি করবেন। আশা করছেন আজকের মধ্যেই তার কলা বিক্রি হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার উপ-কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হারুনুর রশীদ ভুইঞা বলেন, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় এবার পাহাড়ে কলার ফলন ভালো হয়েছে। তিনি জানান, পাহাড়ে কৃষকেরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি প্রায় সকলেই কলার চাষ করে থাকে। পাহাড়ের মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী হওয়াতে এখানে কৃষক কলা চাষে অত্যন্ত আগ্রহী। তিনি বলেন, আমরা কৃষকদের অন্যান্য ফসল চাষে পরামর্শ ও সহায়তার পাশাপাশি পাহাড়ে কলা চাষের বিষয়ে ও বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করি। বাজারে এবার কলার দাম বেশী হওয়াতে কৃষক লাভবান হবে বলে আশা করছেন এ কৃষি কর্মকর্তা।
খবর নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য উপজেলার চেয়ে এবার রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলীতে কলার ব্যাপক ফলন হয়েছে। বর্তমানে বাজার গুলোতে উঠেছে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির কলা। এখন কলার দাম বেশী থাকায় কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে রাজস্থলী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশগত কারণে পাহাড়ের মাটি কলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তিনি জানান, অন্যান্য উপজেলার মতো রাজস্থলীতে বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে এখানকার কৃষকেরা এখন আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তিতে কলার চাষ করছে এবং এবারো রাজস্থলীতে কলার বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার কলার দাম বেশী হওয়াতে কৃষক স্থানীয় বাজারসহ অন্যান্য পাইকারদের কাছে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।
একই অবস্থা জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া বাজার, চাঞোরি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়। তাছাড়া লংগদু,কাপ্তাই,বিলাইছড়ি, জুরাছড়িসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোর বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় কলার ফলন ভালো হয়েছে।
তবে পাহাড়ে উৎপাদিত কলাসহ অন্যান্য ফসল সংরক্ষণের জন্য রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে কোল্ড স্টোরেজ বা হিমাগার না থাকায় অনেক সময় কৃষক পাহাড়ে উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ করতে পারেনা। ফলে কৃষকের ফসল পাইকারদের সস্তায় বিক্রি করতে হয় এবং অনেক সময় ফসল সংরক্ষণের অভাবে তা পচেঁ নষ্ট হয়ে যায়। তাই পাহাড়ে উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের জন্য রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন কৃষক ও স্থানীয়রা।