অবশেষে ঘরের মাঠের অনুভূতি পেতে যাচ্ছেন কোর্তোয়া

211

মাদ্রিদ, ৪ মে ২০২১ (বাসস) : ২০১৮ সালে চেলসি যখন থিবো কোর্তায়াকে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ছেড়ে দিয়েছিল তখন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই গোলরক্ষকের সামনে মিশ্র এক উপলব্ধি উপস্থিত হয়েছিল। একদিকে চেলসির মত ক্লাব ছেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে মাদ্রিদের মত তারকাসমৃদ্ধ ক্লাবে যোগ দেয়া। উভয় অনুভূতিই দীর্ঘদিন ভাবিয়েছে এই বেলজিয়ান গোলরক্ষককে।
প্রাক মৌসুম অনুশীলনে রিপোর্ট করতে অস্বীকৃতি জানানোয় চেলসি সমর্থকদের সাথে কুর্তোয়ার সর্ম্পকটা শীতল হতে থাকে। একইসাথে ঐ সময় চেলসি বস মরিজিও সারির সাথে তিনি আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
মাদ্রিদে পৌঁছানোর পর কুর্তোয়া সব তিক্ততাকে পিছনে ফেলে নতুন একটি জীবন শুরু করতে চেয়েছেন। বিশেষ করে নতুন একটি পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়া এবং জাতীয় দল ও চেলসির সতীর্থ তারকা খেলোয়াড় এডেন হ্যাজার্ডের কয়েকদিনের মধ্যে রিয়ালে যোগদান, সবকিছুই কোর্তোয়াকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
যদিও রিয়ালে স্বাগতটা চেলসির বিদায়ের মত ততটা উষ্ণ হয়নি। কোর্তায়া এমন একটি ক্লাবে এসে পড়েছিলেন যেখানে গোলরক্ষকই তাদের সমর্থকদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। বিশেষ করে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ে মাদ্রিদ সমর্থকরা তাদের গোলরক্ষকের ভূমিকাকেই সর্বাগ্রে রেখেছিল।
কোর্তোয়ার আগমনের কিছুদিনের মধ্যে কেইলর নাভাসকে দল ছাড়তে হয়েছিল। কোর্তোয়া আসার এক বছরের মধ্যে মাদ্রিদ ছেড়ে নাভাস পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন। নাভাসের বিদায়ে দলের এক নম্বর গোলরক্ষক হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ক্লাব ব্রাগার বিপক্ষে খেলতে নেমে সমর্থকদের তোপের মুখে বিরতির সময় মাঠ ছাড়তে হয়েছিল কোর্তোয়াকে। এর একমাস পর এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের সমর্থকরাও উত্তেজিত হয়ে তাদের সাবেক গোলরক্ষকের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
বুধবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল স্বাগতিক চেলসির মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে অবশ্য এই ধরনের অযাচিত পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছেনা কোর্তোয়াকে। করোনা পরিস্থিতিতে দর্শকশুন্যই থাকছে লন্ডনের স্টেডিয়ামটির গ্যালারিগুলো। প্রথম লেগে ১-১ গোলে ড্র হবার পর আট বছরে পঞ্চমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পৌঁছানোর লক্ষ্যে মাঠে নামবে গ্যালাকটিকোরা। এই ম্যাচের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সফল সময় কাটানো এই মাঠে আবারো খেলতে নামছেন হ্যাজার্ডও। যে কারনে কোর্তোয়া ও হ্যাজার্ডের জন্য কালকের ম্যাচটি অন্য এক অনুভূতি নিয়েই উপস্থিত হচ্ছে।
মাদ্রিদের সময়টাতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমলোচনার স্বীকার হতে হয়েছে কোর্তোয়াকে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি স্প্যানিশ গণমাধ্যম আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিলেও আমি সবসময়ই সেরাটা দিতে চেষ্টা করেছি। মাদ্রিদে আমি সুনামির মধ্যেও বেঁচে ছিলাম। রোমেলু লুকাকুকে বেলজিয়ামের বাইরে খেলা বর্ষসেরা খেলোয়াড় হিসেবে অনেকেই বিবেচনা করছে। যে কারনে আমার মনে হয় বেলজিয়ামের থেকে স্পেনেই আমি বেশী প্রশংসা কুড়িয়েছি।’
শুধুমাত্র কুর্তোয়ই নন মাঠের বাইরের এই সমালোচনা থেকে রক্ষা পাননি করিম বেনজেমা, টনি ক্রুস, সার্জিও রামোসের মত তারকারাও। কিন্তু সবকিছু পাশ কাটিয়ে তারা ঠিকই দীর্ঘদিন মাদ্রিদেই নিজেদের ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়ে গেছেন। কোর্তোয়াও আগামী দশকে মাদ্রিদের সেরা গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রমানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইতোমধ্যেই তিনি ছয় বছরের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। মাদ্রিদের পশ্চিমাঞ্চলে বোয়াডিয়া ডেল মন্টেতে জমিও কিনেছেন। তিনি তার দুই সন্তানের সাথে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেন। এখন শুধু একটাই লক্ষ্য প্রথম দুই বছরের পারফরমেন্স থেকে শিক্ষা নিয়ে কোচ জিনেদিন জিদানের আস্থার মধ্যে নিজেকে ধরে রাখা।