মাগুরায় তথ্য প্রযুক্তি সেবার সুফল পাচ্ছে তৃণমূল মানুষ

1208

॥ দেলোয়ার হোসেন ॥
মাগুরা, ৩ মে, ২০২১ (বাসস) : জেলার ৩৬টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ও জেলা ই-সেবা কেন্দ্র চালুর পর হয়রানিমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত তথ্য প্রযুক্তি সেবা পাচ্ছে জেলার গ্রামীণ জনপদের মানুষ । এর ফলে জনসাধারণের জীবনযাত্রা অনেক সহজতর হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সুত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণের লক্ষ্যে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে দূর্নীতি ও হয়রানি মুক্ত সেবা দানের উদ্দেশ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিাল সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এ্যকসেস টু-ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প পরবর্তীতে সাপোর্ট টু ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সালের শেষ দিকে জেলার ৩৬টি ইউনিয়েনে পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়। পব বর্তীতে এটির নাম পরিবর্তন করে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার রাখা হয়। প্রায় একই সময়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা ই-সেবা কেন্দ্র চালু হয়।
জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য মতে, জেলার চার উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে অনলাইনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, কম্পিউটর কম্পোজ, বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরির আবেদন, ওয়ারিশ কায়েম সনদ, সকল প্রকার প্রত্যায়ন পত্র, ছবি তোলা, মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সকল প্রকার ই-মেল সেবা, অনলাইনে ভিসা ফরম পূরণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা,তথ্য,জীবন বীমা ও কৃষি তথ্য, সকল প্রকার পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, ফটোকপি এবং লেমিনেটিং, স্ক্যানিং,অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ধরণের তথ্য সেবার পাশাপাশি নানা সেবা পাচ্ছে। এছাড়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য প্রজেক্টর ভাড়া দেয়া হয়। ফলে গ্রামের মানুষ হয়রানিমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত তথ্য প্রযুক্তি সেবা পাচ্ছে।
লোকাল গর্ভন্যান্স সার্পোট প্রজেক্ট-২ ও ৩ (এলজিএসপি) প্রকল্পের মাধ্যমে ল্যাপটপ,স্ক্যানার,সোলার প্যানেল স্থাপন,প্রিন্ট মেশিন,লেমিনেটিং মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ সরবরাহ করায় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তরা সহজেই গ্রামের মানুষকে সেবা দিতে পারছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছর থেকে ২০২০-২০২১ অর্থ বছর পর্যন্ত জেলার ৩৬টি ইউনিয়নে এসব উপকরণ দেয়ায় সেবা দান কার্যক্রম আরো সহজতর হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
সরেজমিন শালিখা উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ও শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে কথা হয় উপকারভোগীদের সাথে। আড়পাড়া ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবা নিতে আসা আড়াপাড়া গ্রামের রাজিয়া খাতুন, রুপালী খাতুন জানান, এখানে জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই জন্ম সনদ পেয়েছেন তারা।
শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সেবা নিতে আসা বারাইপাড়া গ্রামের ইউনুস শেখ, দোশতিনা গ্রামের দুলি পারভীন, বরিশাট গ্রামের আব্দুল মালেক জানান, অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে জন্ম সদন পেয়েছেন । এছাড়াও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে এসে তারা বিভিন্ন ধরনের সনদ, কম্পোজ, প্রিন্ট, ফটোকপিসহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সেবা পাচ্ছেন সহজেই।
উপকারভোগীরা আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের পর থেকে হয়রানিমুক্ত ভাবে বিভিন্ন ধরনের সেবা নিচ্ছেন তারা । এতে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা সহজতর হওয়ার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি সেবার সুফল পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন এলাকার মানুষ।
আড়পাড়া ইউনিয়ন ও শ্রীকোল ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা নাসরিন সুলতানা ও আব্দুর রব জানান, শুরু থেকেই তারা এ দুটি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে কাজ করছেন । এখানে নানা ধরনের তথ্য প্রযুক্তি সেবা দিচ্ছেন তারা। এখানে গ্রামের মানুষকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক কম খরচে সেবা দেয়া হয়। এতে করে তাদের বেকারত্ব দূর হয়েছে। প্রতি মাসে তারা ৮ থেকে ১২ টাকা আয় করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে পারছেন।
অপরদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা ই-সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর এখান থেকে জনসাধারণ সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। এখান থেকে জনসাধারণ ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সল্প খরচে জমির পর্চার নকল তুলতে পারছেন। এর পাশাপাশি নাগরিক ও দাপ্তরিক সেবা পাচ্ছে নিয়মিতভাবে। আর এস ও এস এ পর্চার নকল তুলতে ২৪ টাকা এবং সিএস পর্চার জন্য ২৮ টাকা ফি দিতে হয়। ফি নেয়ার পর আবেদনকারি রশিদে উল্লেখিত তারিখ অনুযায়ী কেন্দ্রে এসে পর্চার নকল নিয়ে যাচ্ছেন। এতে সেবা গ্রহিতা হয়রানিমুক্তভাবে কম সময়ে সল্প খরচে সেবা নিচ্ছেন।
জেলা ই-সেবা কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা মহম্মদপুর উপজেলার আড়মাঝি গ্রামের ইরাক হোসেন, সদর উপজেলার বগিয়া গ্রামের আতিকুর রহমান, শহরের পূর্বপাড়া এলাকার শাহীন পারভেজ মিলন জানান, জেলা ই-সেবা কেন্দ্র চালুর পর থেকে এখানে সেবা নিতে আসা মানুষের হয়রানি অনেক কমেছে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে খরচ ও সময় কম লাগে। পর্চার নকলের জন্য এখন আর রেকর্ড রুমে যেতে হয় না। আবেদন করে রশিদে উল্লেখিত তারিখে কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই ই-সেবা কেন্দ্র থেকে পর্চার নকল সংগ্রহ করেছেন তারা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান জানান, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে লোকাল গর্ভন্যান্স সার্পোট প্রজেক্ট-২ ও ৩ (এলজিএসপি) এর মাধ্যমে ল্যাপটপ,স্কানার,সোলার প্যানেল স্থাপন,প্রিন্ট মেশিন,লেমিনেটিং মেশিনসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ সরবরাহ করা হয়। ফলে তৃণমূল জনগণের দোর গোড়ায় তথ্য প্রযুক্তি সেবা অব্যাহতভাবে প্রদাণ আরো সহজতর হয়েছে।
মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে জেলার ৩৬টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ও জেলা ই- সেবা কেন্দ্র স্থাপন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম একটি উদ্যোগ। এখান থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ সচ্ছতার সাথে নিয়মিতভাবে তথ্য প্রযুক্তি সেবা নিচ্ছেন। মানুষ এখন তথ্য প্রযুক্তির সুফল ভোগ করছেন। এতে করে হয়রানিমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্তভাবে সেবা পাওয়ার পাশাপাশি গ্রামীন জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানও সহজতর হয়েছে।