বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ সহায়তা বিতরণ শুরু প্রধানমন্ত্রীর

138

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-দ্বিতীয় পর্যায় -ত্রাণ বিতরণ
মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ সহায়তা বিতরণ শুরু প্রধানমন্ত্রীর

এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্থ ১ লাখ কৃষক পরিবারের মোবাইল ফোনে এই সাহায্য পৌঁছে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৪ এপ্রিল সংঘটিত ঝড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ৩৬টি জেলার ৩০ লাখ ৯৪ হাজার ২৪৯ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ১০ হাজার ৩০১ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ৫৯,৩২৬ হেক্টর ফসলি জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়। এতে, ১ লাখ কৃষক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা হারে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচেনার সুপারিশ করে কৃষি মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর করোনা মহামারীর কারণে যেসব নি¤œআয়ের লোকজন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং কর্মহীন হয়ে পড়েছিল তাদের সহায়তার জন্য ‘নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান’ কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ নি¤œআয়ের পরিবারকে পরিবারপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ৮৮০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি এই অর্থ দেওয়া হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা প্রতিদিন বক্তৃতা-বিবৃতি বা আন্দোলনের নামে জ্বালাও- পোড়াও করে যাচ্ছে, দুর্যোগে মানুষের পাশে কোথায় তারা? কয়জন দুর্গত মানুষের মুখে তারা খাবার তুলে দিয়েছে? কয়জন মানুষের পাশে তারা দাঁড়িয়েছে? কয়জন মানুষের কাফনের কাপড় তুলে দিয়েছে? কেউ নেই।’
তিনি বলেন, আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন তারা ঘরে বসে বসে বিবৃতিই দিয়ে যাচ্ছেন। আর আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, যখন তাদের বুদ্ধি খোলে কিংবা পরামর্শ দেন, তার আগেই কিন্তু আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে নেয়।
সরকার বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শের জন্য বসে না থেকে মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ, এই দেশটা আমাদের। এই দেশটা আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। রাজনীতি আমাদের জনগণের জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্য। এই কথাটা আমরা ভুলি না।’
শক্তিশালী বিরোধীদল গড়তে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যান্য রাজনৈতিক গোষ্ঠী, দল অথবা যারাই আছেন, প্রতিদিন কীভাবে সরকার উৎখাত করবেন সেই চিন্তা-ভাবনা করেন, তাদের এটা করতে হলে বা শক্তিশালী বিরোধীদল গড়তে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।
বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর তারা ভেবেছিল, আওয়ামী লীগ আর কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না। অপরাধ কী ছিল? আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। এটাই তো ছিল অপরাধ?’
আওয়ামী লীগ আবার সরকারে ফেরার পর এদেশের মানুষ আবার ‘সেবা পাচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এদেশের মানুষ যদি কিছু পেয়ে থাকে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই পেয়েছে। এদেশটার উন্নতি কীভাবে করতে হবে এটা আওয়ামী লীগ জানে, আওয়ামী লীগই করে যাচ্ছে।’
সরকার প্রধান বলেন, ঈদ উৎসব তো আছেই। এটা সবাই উদযাপন করবেন। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ঈদের আনন্দ করবেন। কিন্তু যারা মারা গেছে, তাদের কথাও ভাবুন। নিজের জীবন বিপন্ন করে উৎসব নয়। মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। গরম পানির ভাপ নেয়া, গরম পানি খাওয়ার মতো বিষয়গুলো যতœ সহকারে মানার জন্য তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাইরে থেকে ভাইরাস নিয়ে এসে নিজের পরিবারের ক্ষতি করবেন না। আমরা যে নির্দেশনাগুলো দিচ্ছি, সেগুলো মানতে হবে। কোয়ারেন্টাইনের বিষয়গুলো মানতে হবে। আপনারা সচেতন হোন, স্বাস্থ্যবিধি মানুন। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- আমরা সচল রাখার চেষ্টা চালাচ্ছি।
অর্থ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ যারা ভাসমান মানুষ, নির্মাণ শ্রমিক, গণপরিবহন শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, দিনমজুর, ঘাট শ্রমিক, নরসুন্দরসহ যারা দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে জীবিকা নির্বাহ করেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অসহায় মানুষ, তাদেরকে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে নগদ সহায়তা দিচ্ছি। এতে অন্য কেউ টাকা পয়সা এদিক ওদিক করতে পারবে না।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের ছোট ভুখন্ডে অধিক জনসংখ্যা। কিভাবে এই জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়া যায়, অপর দিকে তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা, তাদের জীবনটাকে সচল রাখার ব্যবস্থা, সেটা কিভাবে করা যায় আমরা সেই প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি। সেকারণে এই অসহায় বঞ্চিত মানুষের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি।’
তিনি এ সময় দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী ফেলে না রাখার এবং সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধিতে সকলকে মনোনিবেশ করারও আহ্বান জানান।
এবারের নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অর্থ বিভাগের বাজেটের অধীন ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় তহবিল’-এ বরাদ্দ অর্থ থেকে যোগান দেয়া হচ্ছে। উদ্বোধনের প্রথম দিনে ২২ হাজার ৮৯৫ পরিবার এই অর্থ সহায়তা পেয়েছেন।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬০৫/আরজি