মামুনুল আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করেছে : জান্নাত

525

নারায়ণগঞ্জ, ৩০ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : হেফাজতের সদ্য বিল্লুপ্ত কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের দাবি করা দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা বলেছেন, ‘আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে সে আমার সর্বনাশ করেছে। মামুনুল হক একজন প্রতারক। আমি রাষ্ট্রের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় জান্নাত আরা ঝর্ণা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়েরের পর সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানান।
রিসোর্টকা-ের পর পরিচিতদের বাসায় জোরপূর্বক আটকে রাখার অভিযোগ করে মামলার এজাহারে ঝর্ণা বলেন, এ সময় তাকে তার বাবা-মার সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। পরে সন্তানের সহায়তায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করেছে।
এজাহারে ঝর্ণা উল্লেখ করেন, ২০০৫ সালে মামুনুলের সঙ্গে পরিচয় হয়। ‘মামুনুল আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে তোলেন। এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের ১০ আগষ্ট মামনুলের পরামর্শে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
জান্নাত আরা ঝর্ণা মামলায় আরো বলেন, বিচ্ছেদের পর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে অসহায় হয়ে পরি। এ সময় মামুনুল আমাকে খুলনা থেকে ঢাকায় আসার জন্য কুমন্ত্রনা দেয়। আমি তাকে ভরসা করে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় আসার পর মামুনুল আমাকে তার অনুসারীদের বাসায় রাখেন। সেখানে নানাভাবে আমাকে কুপ্রস্তাব দেন। এক পর্যায়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিতে বাধ্য হই। এরপর তিনি উত্তর ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের ২৩/৩ নম্বর বাসায় আমাকে সাবলেট রাখেন। একটি বিউটি পার্লারে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। ঢাকায় থাকার খরচ মামুনুলই দিচ্ছিলেন। ২ বছর ধরে আমাকে ঢাকা ও ঢাকার পার্শ^বর্তী বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করে মামুনুল হক। বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে নিয়ে যায় হোটেল ও রিসোর্টে। সেখানে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার যৌন লালসা চরিতার্থ করে। এক পর্যায়ে সে আমাকে বিয়ের কথা বলে কালক্ষেপন করে।
জান্নাত আরা ঝর্ণা অভিযোগে বলেন, গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল হক নিয়ে যান। সেখানে ওই রিসোর্টের পঞ্চম তলার ৫০১ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাশবিক নির্যাতন করে। সেখানে অবস্থানকালে কিছু স্থানীয় জনগন আমাদের আকস্মিক আটক করে ফেলে এবং আমাদের পরিচয় জানতে চায়। আমরা কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় স্থানীয় জনতার রোষানলে পড়ি। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের বাসায় ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের ২৩/৩ নম্বরে যেতে না দিয়ে তার পরিচিত একজনের বাসায় জোর করে আটকে রাখে। সে আমাকে আমার সন্তানসহ পরিবারের সাথে যোগাযোগও করতে দেয়নি।
জান্নাত মামলায় আরও বলেন, আমি আমার বড় ছেলে আবদুর রহমানকে (১৭) আমার দুরাবস্থার কথা জানাই এবং আমাকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকে উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানিয়েছেন, হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মামুনুলকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন জান্নাত আরা ঝর্ণার দায়ের করা মামলায় তাকে শ্যোন এরেষ্ট দেখানো হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু জানান,শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে জান্নাত আরা ঝর্ণার মেডিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ।
তিনি জানান, পাশবিক নির্যাতন মামলার তদন্তে ডাক্তারী পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।
উল্লেখ্য,গত ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। দুই নারীর সাথে তিনি চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক করেন বলে স্বীকার করেন। মামুনুল হক বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় পুলিশের রিমান্ডে রয়েছেন। তার সাথে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তার ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি টাকারও বেশি অর্থের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।