সূর্যমুখীর চাষে লাভবান হওয়ায় পীরগঞ্জের কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে

430

॥ মাজহারুল আলম মিলন ॥
রংপুর, ৩০ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : সূর্যমুখী চাষের পর এখন ফসল ঘরে উঠতে শুরু হওয়ায় সূর্যমুখীর হাসির মতো কৃষকের মুখেও হাসি ফুটেছে। অল্প সময়ে লাভজনক ফসল হিসেবে ইতোমধ্যে পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে সূর্যমুখী নিয়ে। বিগত বছরের তুলনায় চারগুণ কৃষক ও কৃষি জমিতে এ ফসল উৎপাদিত হয়েছে।
৯০-১১০দিনের মধ্যে উত্তোলন, বাজারে উচ্চ মুল্যের লাভজনক ফসল হওয়ায় জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা ২০২০ সালে সুর্যমুখী ফসল চাষে উৎসাহিত হয়েছিল।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার বাসসকে জানান, কৃষি বান্ধব সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচি ও কৃষক উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে এবছর পীরগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে ৬৭০ জন কৃষক সূর্যমুখী ফসলের চাষ করেছে। যা গতবছরের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি। ২০২০ সালের আগে এই উপজেলায় সূর্যমুখী ফসলের চাষ হয়নি। এ ধরণের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে একদিকে যেমন উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্যতেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে অন্যদিকে কৃষিকে একটি লাভজনক পেশায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। সূর্যমুখীতে উন্নতমানের তেল থাকে ও বীজে লিনোলিক এসিড বিদ্যমান। হৃদরোগীদের জন্য সূর্যমুখীর তেল খুবই উপকারী। এছাড়াও সূর্যমুখীর খৈল গরু ও মহিষের উৎকৃষ্টমানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর বীজ ছাড়ানোর পর মাথাগুলো গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গাছ ও পুষ্পস্তবক জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমরা প্রতিনিয়ত সম্পৃক্ত-অসম্পৃক্ত তেল ভোজ্য হিসেবে ব্যবহার করছি। অথচ সূর্যমূখীর তেলে কোস্টেরোল মাত্রা নেই, স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পন্ন তেল ব্যবহারে সুর্যমুখী উৎপাদন ও বাজার জাত করা দরকার।
বড়দরগাহ ইউনিয়নের পার্বতীপুর গ্রামের বাবলু মিয়া, ছোট মির্জাপুরের সনজিদুল ইসলাম, ভগবানপুরের শাহ আলম, কুমেদপুর ইউনিয়নের রসুলপুরের আনারুল ইসলাম, কুমেদপুরের আব্দুস সালেক, শরীফের পাড়ার মোন্নাফ, মোতালেব,শানেরহাট ইউনিয়নের ধল্লাকান্দির আতিকুর রহমান, পালানুসাহাপুরের আলতাব, দামোদরপুরের রহিমা বেগম, পৌর সভা এলাকার তুলারাম মজিদপুর গ্রামের ওবায়দুর রহমান, প্রজাপাড়া গ্রামের মমতাজ উদ্দিন ও ময়েন উদ্দিন, ওসমানপুর গ্রামের আব্দুল করিম, হামেদ মিয়া ও কাশেম মিয়া, রায়পুর ইউনিয়নের কাঞ্চনগাড়ী গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও ফারুক মিয়া, নখারপাড়া গ্রামের সুজন মিয়া ও বাদশা মিয়া, বাহাদুরপুর গ্রামের আবুল কাশেম ও লাভলু মিয়া, রায়পুর গ্রামের আব্দুল জলিল মিয়া, মদনখালি ইউনিয়নের জাফরপাড়া গ্রামের রুহুল আমিন ও মন্টু মিয়া, খেতাবেরপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম সূর্যমুখী চাষকৃত কৃষকদের সাথে কথা হলে বাসসকে জানান, নিজেরা সর্বনি¤œ ২৫ শতক থেকে সর্বোচ্চ ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফসল চাষ করেছেন। সূর্যমূখী ফসল চাষে ভাল মুনাফার সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা।
রংপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল বাসসকে জানান, সূর্যমুখী একটি উচ্চমূল্যের বাণিজ্যিক তেলজাতীয় ফসল, বিধায় কৃষিকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান ও শস্য বৈচিত্রকরণ বৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুর জেলা উক্ত ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করে যাচ্ছে।
রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ খন্দকার আব্দুল ওয়াহেদ বাসসকে জানান, সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল আমদানী করে থাকে। বর্তমানে দেশে চাষ উপযোগী সূর্যমুখী ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে উৎকৃষ্টমানের ভোজ্যতেল উৎপাদনের সুযোগ তৈরী হয়েছে। ফলে দেশের প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
স্থানীয় এমপি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বাসসকে জানান, কৃষি প্রণোদনা ও পুর্ণবাসন কার্যক্রমের আওতায় এই বছর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ৯ হাজার ৩০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে ভুট্টা, সুর্যমুখী, গম, সরিষা, মুগ ও পেঁয়াজের বীজ এবং প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার বিনামুল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে পীরগঞ্জে পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষে সম্প্রসারণ হবে। আশা করছি এতে একদিকে যেমন পানি সাশ্রয়ী পরিবেশ বান্ধব ফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে ওই সব ফসল বাজারজাতে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবে।