বাসস দেশ-৪৮ : অসহায় কৃষকের ধান কেটে দিলেন লক্ষ্মীপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কুষ্টিয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা

142

বাসস দেশ-৪৮
ধান-স্বেচ্ছাসেবক লীগ-ছাত্রলীগ
অসহায় কৃষকের ধান কেটে দিলেন লক্ষ্মীপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কুষ্টিয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : চলতি বছর ধানের বাম্পার ফলন হলেও চলমান সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বহু কৃষক। আর্থিক ও শ্রমিক সংকটের কারণে মাঠের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না তারা। এমতাবস্থায় বিপদগ্রস্ত এসব কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে লক্ষ্মীপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা বিনাপারিশ্রমিকে ক্ষেতের পাকা ধান কেটে মাড়াই করে কৃষকের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা জানান, আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার আমানী লক্ষ্মীপুর গ্রামের একটি ফসলি মাঠে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের। তারা ওই গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক মো. মোহনের ৬০ শতাংশ জমির পাকা ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছিলেন।
এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক এম আলাউদ্দিন এবং চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে অন্তত ১২ জন নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
উপকারভোগী কৃষক মো. মোহন বলেন, ‘টাকা এবং শ্রমিকের অভাবে পাকা ধান গুলো ঘরে তোলা নিয়ে আমি বিপদে পড়ি। পরে একাই ধান কাটা শুরু করি। এক পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা খবর পেয়ে আমাকে সহযোগিতা করেন। তারা নিজে থেকে এসেই ধান কেটে এবং মাড়াই করে আমার ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। এতে আমার উপকার হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই মানবিক কাজটি আমার খুবই ভালো লেগেছে।’
চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক এম আলাউদ্দিন বলেন, চলমান লকডাউনে পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে বিপদে পড়া কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছি আমরা। আমাদের এ কর্মসূচি চন্দ্রগঞ্জ থানার এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নে চলমান রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. বেলাল হোসেন খান বাসসকে বলেন, এ বছর জেলায় ৩৫ হাজার ৭৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবছর প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে একদিনের কালবৈশাখী ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বাস্তবতা হলো- ফসল ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত ঝুঁকি থেকেই যায়।
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, লকডাউনে শ্রমিক সংকট ও অর্থ সংকটের কারণে দেড় বিঘা জমির পাকা ধান কাটতে পারছিলেন না কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক নুর মোহাম্মদ। ক্ষেতেই ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। খবর পেয়ে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক সেখানে ছুটে যান। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ছাত্রলীগের ৫০ জন নেতাকর্মী নিয়ে কৃষক নুর মোহাম্মদের দেড় বিঘা জমির ধান কেটে মাড়াই করে দেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পাকা ধান কেটে দেয়ায় কৃষক নুর মোহাম্মদ অনেকটাই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, অন্যের তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছেন। লকডাউনের মধ্যে ধান কাটার উপযুক্ত হয়। লকডাউনে শ্রমিক সংকটের কারণে পাকাধান কাটতে পারছিলাম না। এছাড়াও এলাকায় যে শ্রমিক পাওয়া যায় তাদের মজুরি খুব বেশি। ক্ষেতের ধান পাকার পরও তা কাটতে না পারায় কিছুটা ক্ষতির শঙ্কায় ছিলাম। আমার এমন অসহায়ত্বের কথা শুনে ছাত্রলীগ নেতা অনিক নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে এসে টাকা-পয়সা ছাড়াই আমার দেড় বিঘা ক্ষেতের ধান কেটে দেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যেভাবে আমার ধান কাটতে সাহায্য করেছেন তা কখনও ভুলব না। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, ধান কাটার প্রতি মৌসুমেই শ্রমিক সংকটে পড়ে কৃষকরা। এ সময় কুষ্টিয়া পৌর ছাত্রলীগের আহবায়ক হাসিব কুরাইশী, যুগ্ম আহ্বায়ক আলিফ,রাজ,আশিক, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লিমন, কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাবেক সহ-সভাপতি হিমেল,সাবেক সহ সম্পাদক এখলাস,সৌরভ খানসহ অন্তত অর্ধশতাধিক ছাত্র লীগের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বাসস/এনডি/সংবাদদাতা/২০১৫/কেজিএ