বাসস দেশ-৪২ : প্রযুক্তি জনজীবনকে সহজ, স্বাভাবিক ও সাবলীল করেছে : মুরাদ

106

বাসস দেশ-৪২
বাসস-এটুআই-কর্মশালা
প্রযুক্তি জনজীবনকে সহজ, স্বাভাবিক ও সাবলীল করেছে : মুরাদ
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস): তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা মো মুরাদ হাসান বলেছেন, রূপকল্প ’ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর বাস্তবায়ন ও প্রযুক্তির ব্যাবহার জনজীবনকে সহজ, স্বাভাবিক ও সাবলীল করে দিয়েছে, যা সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সময় ও খরচ কমিয়ে দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুত ও পানির বিল দেয়ার জন্য এখন আর আমাদের ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করতে হয় না। কোনো বিষয় সম্পর্কে জানতে অথবা প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে হন্যে হয়ে কোথাও ঘুরতে হয় না। প্রযুক্তি এখন আমাদের জীবনকে সহজ, স্বাভাবিক ও সাবলীল করে দিয়েছে।’
ইউএএডিপি’র সহয়তায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ও এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই যৌথভাবে আয়োজিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে স্থানীয় সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যদান কালে তিনি একথা বলেন।
বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক ড. আব্দুল মান্নান। বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
অবাধ তথ্য প্রযুক্তির বহুমাত্রিক বিকাশ দেশের তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানে তৈরীতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করে মুরাদ হাসান বলেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তরুণরা ঘরে বসে বিশ্বের নানা প্রান্তে নানা দেশে ওয়েব ভিত্তিক নানা সমস্যা সমাধান করছে।
‘আমাদের তরুণরা এক্ষেত্রে অনেক দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে এবং সফটওয়ার রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণরা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে,’ তিনি যোগ করেন।
প্রযুক্তর এই সুবিধাকে শুধু শহর কেন্দ্রিক না রেখে, এর সুফল গ্রামীন জনপদে ছড়িয়ে দিতে সরকার প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করেছে বলেও উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, এখন সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রবেশ পত্র ও ফলাফল সংগ্রহ, ভিসা প্রসেসিং, বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল প্রদান, ছবি তোলা, ভিডিও কনফারেন্সে যোগাযোগ করাসহ সকল ধরনের সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতেই ঘরে পাচ্ছে। এর ফলে এসব সেবা পেতে আর গ্রামীন বাসিন্দাদের শহরে আসতে হয় না। ফলে, তাদের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে এবং বেঁচে যাওয়া সময় ও অর্থ অন্য কাজে লাগানোর মাধ্যমে দারিদ্র দূর করতে সহায়ক হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের শুরুর কথা উল্লেখ করে মুরাদ হাসান বলেন, তথ্য প্রযুক্তির হাতিয়ার সমূহ কাজে লাগিয়ে জনগণের ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র দূরীকরণের মাধমে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন সবার আগে দেখেছেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্কালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে শেখ হাসিনা একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের রূপরেখা বাঙ্গালী জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। এদেশের জনগণ তারই উপস্থাপিত রূপরেখার উপর আস্থা স্থাপন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছিল। সেই থেকে আমাদের দিন বদলের যাত্রা শুরু।
ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয় বরং এটি একটি অনিবার্য বাস্তবতা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদল বা যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, সেই অপশক্তি তখন অনেক সমালোচনা, হাসি, ঠাট্টা, তামাশা করেছে। তারা বলেছিলো যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ এটি একটি রাজনৈতিক একটি শব্দ। এটি কখনও বাংলাদেশে আওয়ামী লাীগ বিনির্মাণ করতে পারবে না।
‘তাদের ধারণাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে আমরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে বসবাস করছি। আমরা এখন সকল কিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করছি,’ তিনি যোগ করেন।
সাংবাদিকরা তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ কীভাবে গ্রামীণ মানুষের জীবনকে সহজ, স্বাভাবিক ও সাবলীল করছে, তা সবার সামনে তুলে ধরতে পারেন উল্লেখ করে মুরাদ হাসান বলেন, ‘গ্রামীন অর্থনীতিতে প্রযুক্তির প্রভাব, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ ও উত্তরণের উপায় দেশের মানুষের সামনে আপনারা তুলে ধরতে পারেন। প্রযুক্তি কীভাবে নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করে তৃণমূলের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারে, সে ব্যাপারে সাংকাদিকরা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে আমি বিশ্বাস করি।’
তথ্য প্রযুক্তির নতুন নতুন সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ধারাকে সমন্বিত করতে, তৃণমুল পর্যায়ের সাংবাদিকদের ভূমিকাকে আরো জোরদার করতে, এই প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এসময় তিনি করোনা প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করতে সাংবাদিকদের তাদের সক্রিয় ভূমিকা অব্যহত রাখার জন্য আহ্বান জানান মুরাদ হাসান।
সভাপতির বক্তব্যে বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা দিয়েছিলেন, তখন এটাকে নিয়ে অনেকে হাস্যরস করেছেন। কিন্ত এখন এটি আর স্বপ্ন নয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব।
তিনি বলেন ধর্মের নামে যারা এদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে, সেসব স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
এটুআই-এর কার্যক্রম তুলে ধরে প্রকল্প পরিচালক ড. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল গ্রামীণ মানুষকে ডিজিটাল সেবার আওতায় আনা। কিন্তু বর্তমানে সারাদেশে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ২৯০ টিরও বেশি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষকে সফলতার সাথেই ডিজিটাল সুবিধাগুলো দিচ্ছে।
কর্মশালার সমাপনী পর্বে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমান সমাপনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন।
সুরথ কুমার সরকার সাংবাদিকদেরকে ডিজিটাল বাংলাদেশের সফলতার গল্পগুলো দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য আহ্বান জানান, যাতে অন্যরাও এর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বেশি বেশি ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করে।
পাশাপশি, ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিভিন্ন অপপ্রচারের বিষয়ে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকার জন্যও আহ্বান জানান এবং প্রয়োজনে এ বিষয়ে সরকারকে অবহিত করতে বলেন।
বাসস’র সিটি এডিটর ও পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মধূসুধন মন্ডল, বাসস’র প্রধান বার্তা সম্পাদক (বাংলা) রুহুল গনি সরকার জ্যোতি, এটুআই’র কমিউনিকেশন অফিসার মামুনুর রহমান এবং এটুআই’র ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ও মিডিয়া আউটরিচ এবিএম আদনান ফয়সাল উদ্ভোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন।
বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি ও ইনফোটেইনমেন্ট ইনচার্জ মাহফুজা জেসমিন কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন।
বাসসে’র প্রধান বার্তা সম্পাদক এ জেড এম সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, এটুআই’র সার্ভিস স্পেশালিস্ট দৌলতুজ্জামান খান, বাসসের প্রধান প্রতিবেদক তারেক আল নাসের এবং এটুআই পলিসি স্পেশালিস্ট আফজাল হোসেন সারোয়ার রিসোর্সপার্সন হিসেবে কর্মশালায় অংশ নেন।
বাসসে’র ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ১৮ জন প্রতিনিধি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
বাসস/এএসজি/এসএএইচ/১৯৪৭/আরজি