জাতিসংঘে বাংলাদেশ উত্থাপিত ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধ’ বিষয়ক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত

221

ঢাকা, ২৯ এপ্রিল ২০২১ (বাসস) : জাতিসংঘে বাংলাদেশ উত্থাপিত ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধ’ বিষয়ক প্রথম রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।
ঐতিহাসিক এ রেজুলেশন নিউইয়র্ক সময় অনুযায়ি গতকাল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ জানানো হয় প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে গৃহীত এই রেজুলেশনটি উত্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। রেজুলেশনটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুকে একটি ‘নীরব মহামারী’ হিসেবে হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এধরণের রেজুলেশন এটাই প্রথম। নীরব এই বৈশ্বিক মহামারীর বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ২০১৮ সালে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশের পাশাপাশি রেজুলেশনটিতে সহ-নেতৃত্ব দেয় আয়ারল্যান্ড আর এতে সহ-পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে ৮১ টি দেশ।
রেজুলেশনটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যু বিশ্বের প্রতিটি জাতিকেই ক্ষতিগ্রস্থ করছে বলে উলে¬খ করা হয়। পাশাপাশি অগ্রহণযোগ্য উচ্চহারের এই মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে এতে একটি কর্ম-কাঠামোও প্রদান করা হয়েছে।
রেজুলেশনটিতে আরো বলা হয়েছে, পানিতে ডুবে-মৃত্যুর মতো প্রতিরোধযোগ্য কারণেও বিভিন্ন্ দেশে শিশু ও কিশোর-কিশোরীগণ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। পানিতে ডুবে-মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, জাতীয় পদক্ষেপকে উৎসাহিত করা এবং এ বিষয়ক সর্বোত্তম অনুশীলন ও সমাধানসমূহ পারষ্পরিকভাবে ভাগ করে নেয়ার লক্ষ্যে ২৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব ডুবে-মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে সাধারণ পরিষদ।
রেজুলেশনটি উত্থাপনের প্রাক্কালে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বৃহত্তর বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যে একটি জাতিসংঘ রেজুলেশন গ্রহণের তাগিদ অনুভব করেছিল বাংলাদেশ। আর সে কারণেই এই প্রচেষ্টায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিতে পেরে সম্মানিত বোধ করছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাপী শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছি, আমরা যদি পানিতে ডুবে মৃত্যুহারকে শুণ্যের কোটায় না আনতে পারি তবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের সাফল্য অর্থাৎ এসডিজি-৩ অর্জন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।’
পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণের মতো ঘটনার ৯০ ভাগ সংঘটিত হচ্ছে নিন্ম ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে এবং এশিয়াতে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে উলে¬খ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। তিনি বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যু কেবল দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি বৈষম্য।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, যেহেতু পানিতে ডুবে-মৃত্যুর ঘটনাগুলো দরিদ্র পরিবারকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তাই, এটি প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপ এসডিজি-১সহ আরো কয়েকটি এসডিজি অর্জনেও ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৮ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণ করছে বলে উলে¬খ করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, আর যাতে কোনো মূল্যবান জীবনের পানিতে ডুবে মৃত্যু না হয় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে শিক্ষা, নারী ও শিশু, সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া এবং ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সসহ ১২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাস্কফোর্স পানিতে ডুবে মৃত্যু হ্রাস সংক্রান্ত জাতীয় কৌশল’ প্রণয়ণে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রতিবছর ২লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পানিতে
ডুবে মৃত্যু বরণ করছে। বিশ্বেও বেশ কয়েকটি দেশে পানিতে ডুবে মৃত্যু, শিশু মৃত্যু বিশেষ করে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।