পিছিয়ে থেকেও পিএসজিকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে ম্যানসিটি

412

প্যারিস, ২৯ এপ্রিল ২০২১ (বাসস) : পিছিয়ে পড়েও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে প্যারিস সেন্ট জার্মেইকে (পিএসজি) ২-১ গোলে পরাজিত করে ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে ম্যানচেস্টার সিটি। পার্ক ডি প্রিন্সেসে এ্যাওয়ে গোলের সুবাদে ফিরতি লেগে ঘরের মাঠে সিটিজেনরা যে এগিয়ে থাকবে তা সহজেই অনুমেয়।
মারকুইনহোসের দারুন এক গোলে পিএসজি ম্যাচের শুরুতেই লিড পায়। কিন্তু কেভিন ডি ব্রুইনার ক্রস থেকে দ্বিতীয়ার্ধে সমতা ফেরানোর পর রিয়াদ মাহারেজের কার্লিং ফ্রি-কিকে সিটির জয় নিশ্চিত হয়। আগামী মঙ্গলবার ফিরতি লেগে পেপ গার্দিওলার দল বেশ স্বস্তি নিয়েই মাঠে নামবে।
ম্যাচ শেষে বিটি স্পোর্টসকে গার্দিওলা বলেছেন, ‘প্রথমার্ধের শেষ ১০ মিনিটে আমরা ম্যাচে ফিরে এসেছি এবং তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়ার্ধ দুর্দান্ত ছিল। আমরা দুটি এ্যাওয়ে গোল নিয়ে মাঠ ছেড়েছি যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মাত্র ছয়দিনে আবারো আরেকটি কঠিন ম্যাচে মাঠে নামতে হচ্ছে যা সকলের জন্যই কষ্টকর। সব মিলিয়ে পুরো পারফরমেন্স নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। কিন্তু এখনো অনেক পথ বাকি। এখনো আমাদের পিএসজিকে হারাতে ৯০ মিনিটের ম্যাচ বাকি রয়েছে, যেখানে যেকোন কিছুই হতে পারে।’
নিজেদের মাঠে একটি ভাল শুরুর পরেও পিএসজি হঠাৎ করেই ম্যাচে ছন্দ হারিয়ে ফেলে। ইকে গুনডোগানকে মধ্যমাঠে বাজে একটি ফাউলের কারনে ৭৭ মিনিটে সরাসরি লাল কার্ড দেখে বিদায় নেন পিএসজির সেনেগালিজ মিডফিল্ডার ইদ্রিসা গানা গুয়ে। যে কারনে আরো পিছিয়ে পড়ে পিএসজি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের মৌসুমে ইতোমধ্যেই প্যারিসের মাঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ব্যর্থতার প্রমান দিয়েছে পিএসজি। তারই ধারাবাহিকতায় টানা দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে খেলার পথে প্যারিসের জায়ান্টরা ইংল্যান্ডে আদৌ কিছু করতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ শঙ্কা রয়েই যায়।
সিটির এমিরাতি মালিক ও পিএসজির কাতারি মালিকের মধ্যে এটাই ছিল ইউরোপীয়ান আসরে প্রথম লড়াই। যে কারনে ম্যাচের বাইরে গিয়েও এই লড়াইটা মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশের মধ্যে একটি অলিখিত লড়াইয়ে পরিনত হয়েছিল। ২০১৬ সালের পর এটাই সিটি প্রথম সেমিফাইনালে খেলা। যে কারনে প্রথমবারের মত ফাইনালে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সিটিজেনরা নি:সন্দেহে নিজেদের সামর্থ্যরে শতভাগ উজাড় করে দিবে ।
যদিও গত দুই রাউন্ডে বার্সেলোনা ও বায়ার্নের বিপক্ষে এ্যাওয়ে পারফরমেন্সের ভিত্তিতে পিএসজি এবারও সিটির মাঠে ভাল কিছু করে দেখাতে বদ্ধপরিকর। পিএসজি কোচ মরিসিও পোচেত্তিনো আরো একবার গার্দিওলার থেকে ভাল কিছু করার আশা করছেন। ২০১৯ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে সিটিকে হারিয়ে তার দল টটেনহ্যাম হটস্পার যেভাবে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল ঠিক সেটারই পুনরাবৃত্তি চান পোচেত্তিনো।
ফরাসি ক্লাবটির পক্ষ থেকে প্রথম লেগের ম্যাচটির শুরুটাও দারুন হয়েছিল। বিশেষ করে নেইমার, এ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া ও গুয়ে দারুন ছন্দে থাকায় তা পুরো দলের উপর প্রভাব ফেলেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় রাইট উইং থেকে ডি মারিয়ার ক্রসে মারকুইনহোসের হেড ১৫ মিনিটেই পিএসজিকে এগিয়ে দেয়। বায়ার্নের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে পরাজিত হবার পর প্রথমবারের মত মূল একাদশে খেলতে নেমেছিলেন পিএসজির অধিনায়ক মারকুইনহোস। টানা দুই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স রিগের কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালের উভয় ম্যাচেই গোলের কৃতিত্ব দেখালেন এই ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। ৪২ মিনিট পর্যন্ত সফরকারী সিটিকে ভাল একটি সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয়। বার্নান্ডো সিলভার এসিস্টে ফিল ফোডেন শট কেইলর নাভাস রুখে দেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পিএসজি ব্যবধান দ্বিগুন করার সুযোগ হারায়। কিলিয়ান এমবাপ্পের লো ক্রসে মার্কো ভেরাত্তি সুযোগটি হাতছাড়া করেন। কিন্তু ততক্ষনে ম্যাচের ভাগ্য ঘুড়ে গিয়েছিল সিটির দিকে। ডি ব্রুইনার একটি শক্তিশালী ওভারহেড কিক অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৬৪ মিনিটে ডি ব্রুইনার ক্রস নাভাসসহ বেশ কয়েকজন ডিফেরন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে পোস্টে জড়ালে সমতায় ফিরে সিটি। ফোডেনকে ফাউল করায় ২৫ মিটার দুরে গুয়ের বিপক্ষে ফ্রি-কিক আদায় করে নেয় সফরকারীরা। নিখুঁত লো স্ট্রাইকে ৭১ মিনিটে মাহরেজ নাভাসকে পরাস্ত করলে সিটির জয় নিশ্চিত হয়।