সিলেটে নির্মাণ হচ্ছে ৪৩টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

1119

॥ শুয়াইবুল ইসলাম ॥
সিলেট, ২৩ এপ্রিল ২০২১ (বাসস) : সিলেট বিভাগে ৪৩টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। এরই মধ্যে জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলা মসজিদের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।
ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রচারের পাশাপাশি সন্ত্রাস, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এমন উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব মসজিদ থেকে জঙ্গিবাদ ও মাদক বিরোধী, যৌতুক ও বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রচার করা হবে।
উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি মসজিদে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৪১ লাখ এবং জেলা পর্যায়ে মসজিদ নির্মাণ ব্যয় ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সিলেট বিভাগে ৪৩টি মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হবে ৫৮৫ কোটি ৭৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
প্রকল্প পরিচালক নজিবুর বাসসকে জানিয়েছেন, ‘সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ হবে। সিলেটে ৪৩টি মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে সিলেটের কয়েকটি মসজিদের কাজ শেষ হয়ে যাবে। রমজানের পরে নির্মাণ শেষ হওয়া কয়েকটি মসজিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন।’
সম্প্রতি সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় নির্মাণাধীন মডেল মসজিদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাইরে গ্রিল লাগানোর কাজ করছেন শ্রমিকরা। অনন্য স্থাপত্যশৈলির তিনতলা মসজিদটি নজর কাড়ছে সবার। মসজিদ দেখতে ভিড় করছেন মুসল্লিরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লাগোয়া ৪০ শতক জায়গার উপর তিন মসজিদের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে গণপূর্ত অধিদপ্তর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেটের পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, “ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রসারে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রথমধাপে যেসব মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা মসজিদ একটি।”
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র আরও জানায়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল এসব মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক ভবনে নারী ও পুরুষের আলাদা ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা থাকবে। থাকবে লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, কোরআন হিফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন। এছাড়া মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে। ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধাও রাখা হয়েছে মডেল মসজিদে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, সিলেটের প্রত্যেক উপজেলায় একটি ও জেলা সদরে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৪টি। ১৩ উপজেলায় ১৩টি এবং জেলা সদরে একটি। সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলাসহ ১২টি, হবিগঞ্জ জেলায় ৮ উপজেলাসহ ৯টি এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৭ উপজেলাসহ ৮টি মসজিদ নির্মাণ হবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী ইকবাল শিকদার জানান, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা মডেল মসজিদের নির্মাণ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা মডেল মসজিদের তৃতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বাকি সবগুলো মসজিদের নির্মাণ অগ্রগতি কাজ প্রায় ২৫ শতাংশ।
দক্ষিণ সুরমা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আলম বলেন, “দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তারই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামী শিক্ষার প্রসার ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে মডেল মসজিদ নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এটি বাংলাদশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা শাহ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে মুসলিম যুবক-যুবতীদের বিভ্রান্ত করা ও বিপথগামী করার ঘটনা এদেশে বহুবার ঘটেছে। সংখ্যাধিক্য মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে সরল বিশ্বাসের মানুষকে ভুল পথে পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।’
তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘দেশের এতোগুলো মডেল মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। মানুষ যেনো ইসলামের সঠিক ইতিহাস জানে ও সঠিক দিকনির্দেশনা পায় সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তবে, বিভ্রান্তকারীরা যেনো এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে।’
সিলেট মহানগর ইমাম সমিতির সভাপতি হাবিব আহমদ শিহাব বলেন, ‘সারাদেশে মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো মডেল মসজিদ ইসলামিক কালচার ও ধর্মীয় শিক্ষায় অনন্য ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।”
জানা গেছে, জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মানুষের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।
মসজিদ নির্মাণের পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এসব মসজিদ পরিচালিত হবে। মসজিদের খতিব, ইমাম, মোয়াজ্জেন, খাদেম সবাই সরকারি বেতনভুক্ত হবেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্র্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প নেওয়া হয়।
এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এই মসজিদগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ৯ বর্গমিটার।
বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার। সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার।
ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাস ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে এসব মসজিদ।