বাজিস-৫ : নানা দিক থেকে নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটি অনেক সম্ভাবনাময়

159

বাজিস-৫
নাকুগাঁও-ইমিগ্রেশন
নানা দিক থেকে নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটি অনেক সম্ভাবনাময়
শেরপুর, ২৮ আগস্ট ২০১৮ (বাসস) : জেলার একমাত্র নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটি পর্যটন ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক সম্ভাবনাময়। ভারতের পশ্চিম বঙ্গের একাংশসহ মেঘালয়, আসাম, অরুনাচল, মিজোরাম এবং নেপাল ও ভূটানে ভ্রমণ পিপাসুদের সহজ রুট হওয়ায় দিন দিন লোকসমাগম বাড়তে শুরু করেছে এ ইমিগ্রেশন চেক পোস্টে।
জানা গেছে, প্রথমে ১৯৪৮ সালে জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্ত এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার বারাঙ্গাপাড়া থানাধিন ডালু সীমান্ত দিয়ে দু’দেশের জনসাধাণের পারাপারের জন্য ইমিগ্রেশন চেক পোস্ট চালু হলেও নানা কারণে তা কিছু দিন পর বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৯৭ সালে আবারও চালু হয় ইমিগ্রেশন চেক পোস্টটি। এছাড়া ২০০৪ সালে এখানে চালু হয় শুল্ক স্টেশন এবং ২০১৪ সালে এই শুল্ক স্টেশনটি পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দরে রূপান্তরিত হয় । বর্তমানে স্থল বন্দরটি দু’দেশের ব্যবসা মন্দার কারণে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়লেও ইমিগ্রেশন চেক পোস্ট দিয়ে দু’দেশের লোক যাতায়াত ক্রমেই বাড়তে শুরু করেছে।
এ চেকপোস্ট দিয়ে চলাচলরত ভারত এবং বাংলাদেশের ভ্রমণকারী এবং ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানাগেছে, ভারতের মেঘালয়ের শিলং, আসামের গোহাটি, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিংসহ মিজোরাম ও অরুনাচলের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মানুষের জন্য সহজ হয়ে উঠেছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে এ চেকপোস্ট দিয়ে লোক যাতায়াত। মাত্র ৪/৫ বছর আগেও ভারত এবং বাংলাদেশ সীমান্তের দু’পাশেই সড়ক যোগাযোগ ছিল খুবই নাজুক। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ থেকে শেরপুরের নকলা হয়ে নালিতাবাড়ি উপজেলা সদর হয়ে নাকুগাঁও সীমান্ত পর্যন্ত প্রশ্বস্থ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
অপরদিকে ভারতের ডালু সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার উত্তরে তুরা শহরের রাস্তা নির্মাণ এবং তুরা থেকে আসামের গোহাটি হয়ে শিলং পর্যন্ত কোথাও ছয় লেন এবং কোথাও চার লেনে উনীœত হওয়ায় প্রকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, গোহাটি, শিলংসহ নেপাল ও ভুটানে ভ্রমণের জন্য সহজ রুট তৈরি হয়েছে। এ কারণে নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটি গুরুত্ব পাচ্ছে।
ভারতের তুরা শহরের উপকন্ঠে একটি বিমান বন্দর নির্মানাধীন রয়েছে বলে স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে। ওই বিমান বন্দরটি চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষকে আর অনেক ঘুরে বেনাপোল হয়ে কোলকাতা বা ভারতের অন্য রাজ্যে যেতে হবে না। নাকুগাঁও-ডালু হয়ে তুরা শহর থেকেই বিমান পথে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাতায়াত করা যাবে খুব সহজেই। এছাড়া তুরা থেকে শিলং বা আসামের গৌহাটিসহ অন্য যে কোন স্থানে দ্রুত ও সহজ যাতায়াতের জন্য প্রাইভেট হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানা গেছে।
কিন্তু ভারত এবং বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে পুরোপুরি অনলাইন চালু না হওয়া, ভ্রমণ কর জমা দেয়ার জন্য কোন ব্যাংক না থাকা এবং বৈদেশিক মূদ্রা বদলানোর জন্য মানি চেঞ্জার না থাকায় ভ্রমণকারীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। ইমিগ্রেশন ভবনটি পুরাতন টিন সেড ঘরে প্রতিষ্ঠা হওয়ায় যাত্রীদের বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এবং টয়েলেটের সুবিধা নেই।
ভ্রমনকারীদের সূত্রে জানাযায়, বাংলাদেশের কাস্টমস এর অবকাঠামো তৈরী এবং লোকবল থাকলেও সেখানে এখনও স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়নি। ফলে বাংলাদেশ থেকে বর্হিগমন এবং ভারত থেকে আগমন যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি করতে হয় হাত দিয়েই।
ভারত সীমান্তের ডালু চেকপোস্টেরও একই অবস্থা। সেখানেও কোন ব্যাংক নেই। নেই মানিচেঞ্জার। সেখানে কাস্টমস ভবন তৈরী হলেও ইমিগ্রেশন ও বিএসএফ চৌকিতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা তৈরী হয়নি। এছাড়া সেখানে ইমিগ্রেশন করতে হয় সীমান্ত থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার অদুরে ছইপানি ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে।
নালিতাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফসিহুর রহমান জানান, ইমিগ্রেশন অফিসের অবস্থা নাজুক থাকলেও সম্প্রতি ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন হওয়া ৬ তলা ভবানে কাজ যে কোন সময় শুরু হবে। এছাড়া ভবন নির্মাণ শেষ হলে ইমিগ্রেশনে ভ্রমণকারীদের আর কোন সমস্যা থাকবে না।
কাস্টমস, একসাইজ ও ভ্যাট অফিসের রাজস্ব কর্মকর্তা ইমাম হোসেন জানান, এ সীমান্ত পথে ভারতের চমৎকার দর্শনীয় স্থান রয়েছে। কাস্টমস বিভাগে সকল অবকাঠামো এবং যতেষ্ট লোকবল রয়েছে। এখানে ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার অফিস হলে আর কোন সমস্যা হবে না ভ্রমাণকারীদের।
কাস্টমস বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এ পথে বহির্গমন ছিল ১৩৭৮ জন এবং আগমন ৯১৯ জন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বর্হিগমন ছিল ২০৯৪ জন এবং আগমন ৮২১, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বর্হিগমন ৩০০১ জন এবং আগমন ১২৯০ জন। চলতি অর্থ জুলাই মাসে বহির্গমন হয়েছে ২০০ জন এবং আগমন করেছে ৪৮ জন মানুষ।
বাসস/সংবাদদাতা/১৬৫৭/মরপা