প্রথম ক্লাসের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হচ্ছে আগামীকাল

386

সিরাজগঞ্জ ১৬ এপ্রিল২০১৮ (বাসস) : সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ-এর যাত্রা শুরু হচ্ছে আগামীকাল ১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে। দীর্ঘদিনের সভা-সমাবেশ, আন্দোলনের সংগ্রামের সুফল রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নœপূরণ হওয়ায় সিরাজগঞ্জ তথা শাহজাদপুরবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।
২০১০ সালের মে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘোষণার পরই কুষ্টিয়া ও শাহজাদপুরবাসী তাদের এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
কুষ্টিয়াতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় আঞ্চলিক বিবেচনায় শাহজাদপুরে স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সরকারি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সদস্যগণ একাধিকবার শাহজাদপুরের বিভিন্ন জায়গা পর্যবেক্ষন শেষে উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়া মৌজায় রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব গোচারণ ভূমিতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করেন। এ স্থান থেকে তিনশত একর ভূমি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
২০১৫ সালের ২৫ বৈশাখ শাহজাদপুরের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্ত্রীর জাতীয় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই জাতীয় সংসদে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’ নামে একটি আইন পাস করা হয়।
২০১৭ সালের ১১জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের প্রধান অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। উপাচার্য হিসেবে তিনি ১৫জুন যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল নিয়োগসহ সকল কাজকর্ম শুরু করেন। আটমাসের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও অবকাঠামো নির্মাণের জায়গা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেন।
নিজস্ব অবকাঠামো না থাকায় দ্রুত ক্লাস শুরু করার লক্ষ্যে স্থানীয় সাংসদ হাসিবুর রহমান স্বপনের প্রচেষ্টায় পৌরশহরের শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ, বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রী কলেজ ও মওলানা সাইফুদ্দিক এহিয়া ডিগ্রী কলেজ তিনটির নবনির্মিত একাডেমিক ভবনগুলোতে প্রশাসনিক কার্যালয় স্থাপন ও ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একাডেমিক ভবনসহ প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত বিনা ভাড়ায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করতে পারবে এ মর্মে চুক্তিও সম্পাদন করা হয়।
রবীন্দ্র অধ্যায়ন, সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন এবং অর্থনীতি এ তিনটি বিভাগে ১১৫জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য আবেদন গ্রহণ করার পর চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভর্তির লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ ও ২৫ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত ৫ এপ্রিল তিনটি বিভাগে ৯৭জন ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আগামীকাল ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবসে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করা হবে।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেহেলী লায়লা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনশত একর জমি বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে একশত একর জমির সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাদ বাকি জমিগুলোর প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এগুলো নিরসনের কাজ চলছে। নিরসন হলে আপাতত দুইশত একর ভূমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বাদ বাকী নির্ধারণ করতে একটু সময় লাগবে।
সংসদ হাসিবুর রহমান বলেন, শাহজাদপুরে রবীন্দ্রবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে শাহজাদপুরবাসীর দাবিছিল দীর্ঘদিনের। দাবি আদায়ের জন্য নানা কর্মসুচীও পালন করেছে শাহজাদপুরবাসী। প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় কবির রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন।
সবশেষে ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে শাহজাদপুর বাসীর প্রাণের দাবি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি উত্থাপন করা হলে তিনি শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী ২৫ বৈশাখ তিনি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সংসদ সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা রেখেছেন-শাহজাদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন। তার ঋণ শাহজাদপুরবাসী কোনদিন ভুলবেনা।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, প্রাথমিকভাবে শিক্ষক নিয়োগসহ অনান্য কর্মচারি নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তিনটি বিভাগে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে। তিনটি কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে। পর্যায়ক্রমে বিভাগের সংখ্যা বাড়বে। এজন্য তিনি শাহজাদপুরবাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।
অবকাঠামো নির্মাণের জন্য একশত একর ভূমি নির্ধারণ হয়েছে। কিন্তু এখনো জমি হস্তান্তর করা হয়নি। হস্তান্তর করা হলেও দরপত্রের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। অবকাঠামো নির্মাণের আগ পর্যন্ত তিনটি কলেজের একাডেমিক ভবনে বিনাভাড়ায় শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।