বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : ঘৃণা নয় কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত নারীদের সচেতনতার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে

118

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
কুষ্ঠরোগ-নারী
ঘৃণা নয় কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত নারীদের সচেতনতার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : সিরাজগঞ্জ জেলায় রহিমা খাতুনের (ছদ্মনাম) ৮ বছর বয়সে কুষ্ঠরোগ ধরা পড়ে। সময়মত চিকিৎসা নেয়ায় তিনি এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পেয়েছিলেন। শুধু রহিমা খাতুন নয়, আরও অনেক কুষ্ঠরোগী আছেন, যারা সময়মত সঠিকভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন তারা এখন সুস্থ আছেন।
বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে এই রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। রোগটি নিরাময় যোগ্য এবং বিনামূল্যে এর চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে। শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবেই এই রোগে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও পুরুষের তুলনায় নারীরা কম আক্রান্ত হচ্ছে, তারপরও নারীরাই বেশি ভুক্তভোগী।
ন্যাশনাল লেপ্রসি এলিমিনেশন প্রোগ্রাম (এনএলইপি) এবং দ্য লেপ্রসি মিশন ইন্টারন্যাশনাল-বাংলাদেশ (টিএলএমআই-বি)এর মতে, সা¤প্রতিক বছরগুলোতে এ দেশে গড়ে ৪০০০ নতুন কুষ্ঠরোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
এই রোগটি মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রে নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণের কারণে হয়ে থাকে এবং ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। সময়মত চিকিৎসা করা না হলে এটি স্নায়ু, ত্বক, চোখ, নাকের মধ্যে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে বলে জানিয়েছেন (টিএলএমআই-বি)-এর সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. বিলিওম এ. সাংমা।
টিএলএমআই-বি-এর প্রোগ্রাম সাপোর্ট কো-অর্ডিনেটর জিপথা বৈরাগী বলেন, নারী কুষ্ঠ রোগীরা আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেন। তাছাড়া অপরের কাছ থেকে ঘৃণার পাত্র হতে পারে-এমনটা ভেবেও অনেক সময় লোক চক্ষুর আড়ালে থাকতে চায়। এক্ষেত্রে নি¤œবিত্তের নারীরা লিঙ্গ বৈষম্যেরও শিকার হয়। এছাড়া অশিক্ষা ও দারিদ্র্যতা এই অনীহার অন্যতম কারণ। নি¤œবিত্তের নারীরা সঠিক তথ্যের অভাবে সঠিক নিয়ম মেনে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে না, ফলে সমাজে কুষ্ঠরোগের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণের আশংকা থেকে যাচ্ছে, তাই এটি নির্মুল হচ্ছে না।
কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত নারীদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকে তাই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে পারেন না! এমনকি পরিবারের সদস্যদের সাথেও মিশতে সংকোচ বোধ করেন।
বিশেষ করে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে এবং গৃহস্থালি কর্মকান্ডেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখা যায়।
যদি সময়মত সঠিক নিয়ম মেনে এই রোগের চিকিৎসা নেয়া না হয়, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেরে উঠতে দেরী হয় এবং এতে রোগী তার মন ও শরীরের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে।
এনএলইপি-র জাতীয় প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, গতবছর ৩৭৯৯ জন কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়েছিলো, যার মধ্যে ১৬০১ জন ছিল নারী।
কুষ্ঠরোগ এবং এর চিকিৎসা সেবাগুলোর বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করে ডা: শফিক বলেন, সরকার কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তি পেতে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। এনজিওদের সহযোগিতায় সরকার জাতীয় কুষ্ঠরোগ দূরীকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।
২০১১ সালে ২৪ নভেম্বর সংসদে ‘লেপ্রস অ্যাক্ট-১৮৯৫’ বাতিল করেছে এবং এর সাথে অসঙ্গিতপূর্ণ অনেক ধারা সংশোধন করেছে। এর ফলে কুষ্ঠরোগীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা কোথায় থাকবে তারা সেটিও বেছে নিতে পারবে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/সুঘো/মহ/১০৩০-/স্বব