বাসস দেশ-৩২ : রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও সন্ত্রাসের অপরাধে দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার দাবি : আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বক্তারা

416

বাসস দেশ-৩২
নির্মূল কমিটি-আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার
রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও সন্ত্রাসের অপরাধে দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার দাবি : আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বক্তারা
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : ‘জামায়াত-হেফাজত চক্রের বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা : সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও সন্ত্রাসের অপরাধে অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে হবে।
যারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বানচাল করার লক্ষে সারাদেশে তা-ব চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভবিষ্যতে তারা যেন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
আজ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের ‘জামায়াত-হেফাজত চক্রের বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা : সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
উক্ত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক।
নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি রাজনীতিবিদ হাসানুল হক ইনু এমপি, কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সমাজকর্মী রাশেক রহমান, ব্লগার এ- অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি ড. কানিজ আকলিমা সুলতানা, ওয়ান বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক রাশেদুল হাসান, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিজম তুরস্ক-এর সাধারণ সম্পাদক লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, গৌরব ’৭১-এর সাধারণ সম্পাদক এম শাহীন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ-এর সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল।
প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘হেফাজত-এ ইসলাম জামায়াতের মতো একই ধারায় ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে চায়Ñতা সুবর্ণজয়ন্তীতে হেফাজতের তা-ব ও কর্মকা-ে অত্যন্ত পরিস্কার। স্বাধীনতা মানে না বলেই তারা সুবর্ণজয়ন্তী বানচাল করার চেষ্টা করেছে। তাদের উদ্দেশ্যÑমুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করা ও বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করা। যারা জাতীয় সঙ্গীত মানে না, জাতির পিতাকে মানে না, সংবিধান মানে নাÑতাদের ছাড় দেয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর আগে আরও দু’বার বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন হেফাজতকে কোথাও দেখা যায় নি। এবার তারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বানচাল করার জন্যই মোদীর বিরোধিতার কথা বলে সারা দেশে তা-ব চালিয়েছে। বিলম্বে হলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা যেন ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করতে না পারে সে ব্যবস্থাই সরকার করবে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তা-বে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট। হেফাজতের বর্তমান আমির বাবুনগরী জামায়াতের প্রতিনিধি। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির পরেও কওমি মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। হেফাজতের নেতৃবৃন্দের বড় অংশ ১৯৭১-এ স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকা-ে অংশ নিয়েছিল। হেফাজতের বর্তমান কমিটির অধিকাংশ জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী রাজনীতিতে যুক্ত। মোদীবিরোধী বিক্ষোভ ছিল মূলত বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী নস্যাৎ করার চক্রান্ত। বিএনপি তাদেরকে মৌন সমর্থন দিয়েছে। তা-বের সাথে যুক্ত হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। ভবিষ্যতে তারা সকল ইসলামিক দলগুলোকে এক জায়গায় এনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেষ্টা করছে এবং বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। এসব বিষয়ে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, ‘হেফাজত ও জামায়াত ধর্মের লেবাসধারী পাকিপন্থার নব্য রাজাকারচক্রের সংগঠন। তারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দেয় ও তারা দ্বৈতনীতি অবলম্বন করে। তারা প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয় এবং গোপনে সশস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করে। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, দেশবিরোধীÑকখনও প্রকাশ্যে, কখনও সশস্ত্রভাবে রাষ্ট্রের বিরোধিতা করছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং সন্ত্রাসের জন্য দায়ী সকল নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে। সকল মাদ্রাসাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সকল মসজিদে রাজনৈতিক বক্তব্য নিষিদ্ধ করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ দূর করতে হবে।
কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বাউলদেরকে মূল্যায়ন না করে হেফাজতকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বাউলদের সম্প্রীতির গান ও তাদের আদর্শ জনগণের কাছে প্রচার করতে হবে। হেফাজত-এ ইসলাম এদেশের ভালো ও শক্তিশালী সবকিছুরই বিরোধিতা করে। পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ রোধ করতে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল সেগুলোর অধিকাংশই সরকার গ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সভাপতির সূচনা বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের মৌলবাদী সন্ত্রাসী রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধকরণের দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিনাশী সন্ত্রাসী উত্থানের পর থেকে আমরা ক্রমাগত বলছি জামায়াত ও হেফাজতকে পৃথক দল কিংবা পরস্পরবিরোধী মনে করার কোনও কারণ নেই। হেফাজতের ১৩ দফা জামায়াতেরই পুরনো দাবি। মুক্তিযুদ্ধকালে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতারা নেজামে ইসলামের নেতৃত্বে ছিলেন, যে দল এবং তাদের ঘাতক বাহিনী জামায়াতের চেয়ে কম নৃশংস ছিল না।
বাসস/সবি/এমএআর/২২৫০/আরজি