বাসস দেশ-৫২ : সারাদেশে লকডাউনের প্রথম দিন : বিভিন্নস্থানে জরিমানা

99

বাসস দেশ-৫২
লকডাউন-সারাদেশ
সারাদেশে লকডাউনের প্রথম দিন : বিভিন্নস্থানে জরিমানা
ঢাকা, ১৪ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন আজ থেকে শুরু হয়েছে। সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ ও ‘লকডাউন’ কার্যকর করতে এবং সরকার ঘোষিত লকডাউনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে লকডাউনের প্রথম দিনে সারাদেশে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
বাসস-এর সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে জানা যায়-
কেরানীগঞ্জ : ঢাকার কেরানীগঞ্জে আজ বুধবার সকাল থেকেই আইন শৃংখলা বাহিনী রাজধানীর প্রবেশ মুখে হাসনাবাদ এলাকায় প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু,কদমতলী এলাকায় দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু এবং ঘাটারচর এলাকায় বছিলা সেতুতে বেরিকেড বসিয়েছেন। এসময় তারা শুধু পণ্যবাহী যানবাহন, বিভিন্ন রোগী বহনকারী গাড়ি ও জরুরী সেবাদানকারী যানবাহন ছাড়া অন্যান্য কোন গাড়ি রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেয়নি এবং রাজধানী থেকে কোন গাড়ি কেরানীগঞ্জে প্রবেশ করতে দেয়নি। লক ডাউন চলাকালীন সময়ে রিকসাসহ তেমন কোন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। সরকার অনুমোদিত বাজার ছাড়া অন্য সকল দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। রাস্তাঘাটে ও প্রয়োজন ছাড়া তেমন কোন লোক জনের দেখা মেলিনি। ব্যাংক গুলো খোলা থাকলেও সেখানে গ্রাহকের উপস্থিতর সংখ্যা ছিল খুবই কম।
হবিগঞ্জ : জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে ১৭ জনকে ২ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক কুমার মন্ডল। অপর এক অভিযানে ৬ জনকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব দাস পুরকায়স্থ। জেলার মাধবপুর বাজারে সরকারি নির্দেশনা না মানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫টি মামলায় ২ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ-জোহরা এই অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি জনগণকে সচেতন করেন এবং ফ্রি মাস্ক বিতরণ করেন।
সাতক্ষীরা : সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিনে সাতক্ষীরায় জরুরী প্রয়োজন ছাড়া খুব বেশী কাউকে বাইরে দেখা যাচ্ছে না। সকাল থেকে শহরের অধিকাংশ সড়ক ফাঁকা দেখা গেছে। শহরব্যাপী লোক চলাচল অন্যদিনের তুলনায় অনেক কম রয়েছে। শহরের প্রানকেন্দ্রগুলিতে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবে, ওষুধের দোকান খোলা রয়েছে। সকাল থেকে সাতক্ষীরা শহরে ভ্যান ও ইজিবাই ছাড়া অন্যন্য যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে প্রশাসনকে যথেষ্ট তৎপর থাকতে দেখা গেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ কারণ ছাড়া যাতে মানুষ রাস্তায় না নামে ও গাড়ি ব্যবহার না করে সেজন্য মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেক পোস্ট বসিয়েছে। বুধবার পরিচালিত মোট ১৭ টি মোবাইল কোর্ট অভিযানে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে মোট ৯০ টি মামলায় অর্থদন্ডের মাধ্যমে ৮৫ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া ২৯ মার্চ ২০২১ তারিখে জারিকৃত ‘প্রজ্ঞাপন’ এর পর থেকে আজ পর্যন্ত পরিচালিত মোট ১২৭ টি মোবাইল কোর্ট অভিযানে ৭৪০ টি মামলায় অর্থদন্ডের মাধ্যমে মোট ৭ লাখ ৮৯ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
জয়পুরহাট : করোনার ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লকডাউনে মানুষের ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ থাকলেও নিম্ন আয়ের মানুষ অনেকে রাস্তায় নেমেছেন। ভারি যানবাহন না থাকলেও সড়কে বেশকিছু রিকশা-ভ্যান ও মোটরসাইকেল চোখে পড়েছে। আবার অনেক মানুষকে পায়ে হেঁটে নিজ-নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা যায়। সরকারের ঘোষিত লকডাউনকে সমর্থন জানিয়ে জেলা শহরের দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কাঁচাবাজারগুলো খোলা জায়গায় স্থানান্তরের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে কাঁচাবাজার গুলোতে স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নাই। বেলা ১২টায় শহরের জিরো পয়েন্ট পাঁচুর মোড় ও বাসটার্মিনাল এলাকায় পুলিশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। যানবাহন বন্ধ থাকায় রিকশা-ভ্যানে করে যেসব মানুষ প্রয়োজনীয় কাজে যাচ্ছে। পুলিশ তাদের থামিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন। মুভমেন্ট পাস না থাকায় অনেককেই রিকশা থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দোকানপাট খোলা রাখার দায়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করতে দেখা গেছে। জেলা প্রশাসক শরিফুল ইসলাম জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার এই লকডাউন ঘোষণা করেছে। তাই সকলকে অন্তত পক্ষে নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থে লকডাউন মেনে চলার আহবান জানান। পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা জানান, দেশকে করেনার হাত থেকে রক্ষার স্বার্থে সরকারের নির্দেশে সারাদেশে লকডাউন চলছে। যে কোন ভাবেই হোক সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পুলিশ বাহিনীরা সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
ঝিনাইদহ : লকডাউন কার্যকরে কঠোর ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন ও পুলিশ। সকাল থেকে শহরের পোস্ট অফিস মোড়, বাস টার্মিনাল এলাকা, আরাপপুর, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। শহরের চলাচলকারীদের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। এদিকে কঠোর লকডাউনের মাঝেও পণ্যবাহী ট্রাকের লুকিয়ে যাতায়াত করছে মানুষ। সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সাতক্ষীরা গামী একটি ট্রাকে পাওয়া যায় ৪৩ জন যাত্রীকে।।
শেরপুর : জেলা সদর সহ পাচটি উপজেলায় সকাল থেকে সকল প্রকার দোকানপাট বন্ধ,যানবাহন চলাচল করছে না। শহর জনশূন্য হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব জানান, লকডাউনের বিধিনিষেধ কড়াকড়িভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইতিমধ্যে শেরপুর সদর সহ পাচটি উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনী দ্বারা টহল জোরদার করা হয়েছে। তিনি জনসাধারণকে প্রয়োজন ছাড়া ঘর বের না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে এই ব্যাপারে জনগণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
রাঙ্গামাটি : লকডাউন নিশ্চিত করাসহ রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান। বাজার মনিটরিং করতে লকডাউনের প্রথম দিন সকাল ১০টা দুপুর পর্যন্ত শহরের বনরুপা, রিজার্ভবাজার, তবলছড়ি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ পুলিশ প্রশাসন এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। জেলা প্রশাসক শহরের বিভিন্ন দোকানে বাজার দর মনিটরিং করে ব্যবসায়িদের সর্তক করে দেন।
ঝালকাঠি : কঠোর লকডাউনের মধ্যেই বাজার ও রাস্তাঘাটে জনসাধারণের ভিড় জমেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ঘর থেকে বের হচ্ছে মানুষ। বুধবার সকাল থেকে শহরের বাজারগুলোতে গাদাগাদি করে কেনাকাটা করছে জনসাধারণ। কারো মুখে মাস্ক আছে, আবার কারো নেই। সামাজিক দূরত্ব মানছেন না মানুষ। জেলা শহরের প্রধান বাজার ও চাঁদকাঠি চৌমাথা বাজার, সাধনার মোড়, ফায়ার সার্ভিস মোড়, কলেজ মোড় ও লঞ্চঘাট এলাকায় মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে পুলিশ ও র‌্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ অবস্থান নিয়ে একাধিক যাত্রী বহন করলে যানবাহন থেকে নামিয়ে দিচ্ছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আহমেদ হাছান বলেন, শহরের বাজারগুলো উন্মুক্ত স্থানে সরানোর ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে মানুষকে সচেতন করার জন্য আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে আছে। কেউ আইন না মানলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাসস/এনডি/সংবাদদাতা/২০১৫/কেজিএ