সিলেট অঞ্চলে ধান কাটার ৪৫৯ মেশিন পাচ্ছেন কৃষকরা

1298

সিলেট, ১৪ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : সিলেট অঞ্চলে বোরো ধান কাটার জন্য কৃষকদের ২৭১টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ১৫০ রিপার ও ৩৮ টি রাইস ট্রানসপ্লান্টার মেশিন বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ধান কাটায় শ্রমিক সংকট সমাধানে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে এইসব যন্ত্র কৃষকদের প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
ডিএই সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী জানান, ভর্তুকির মাধ্যমে এসব কৃষিযন্ত্র এরই মধ্যে বিতরণ শুরু করার ফলে ধান কাটা অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক নির্ভর ধান কাটাও কমে যাচ্ছে।
সিলেট বিভাগে ইতোমধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। ১৫ দিন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বন্যা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ধান কাটা শেষ হয়ে যাবেÑ এমনটা আশা এই কৃষি কর্মকর্তার।
তবে কৃষি বিভাগ আরও জানিয়েছে, এসব যন্ত্রের চাহিদা আরও বেশি। সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ৬০৬টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ৬৯১টি রিপার ও ৩৮টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টের চাহিদা ছিল। হাওর এলাকার কৃষকরা ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে এবং সমতল এলাকার কৃষকরা ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে এইসব মেশিন পাচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, সিলেট জেলায় সবমিলিয়ে ৭৬টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ৪৭টি রিপার ও ১৮টি রাইস ট্রান্স প্লান্টার, মৌলভীবাজার জেলায় মোট ২১টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ২৫টি রিপার ও একটি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, সুনামগঞ্জ জেলায় ১০৭টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ৩৮টি রিপার ও আটটি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার এবং হবিগঞ্জ জেলায় ৬৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ৪০টি রিপার ও ১১টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কম্বাইন্ড হারভেস্টার বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইছাকলস ইউনিয়নের রজব আলী জানান, ভর্তুকিতে মেশিন বরাদ্দ পেয়ে তিনি খুশি। এরই মাধ্যমে নিজের জমির ধান কাটার পাশাপাশি অন্যের জমিরও ধান কাটতে পারবেন। এর ফলে তার বিকল্প আয়েরও একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, হবিগঞ্জে ৯ উপজেলায় ধান কাটার যন্ত্রগুলো বিতরণ শুরু হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তমিজ উদ্দিন খান জানান, কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই একসঙ্গে হয়। এতে কৃষকের অনেক সময় বেচে যাবে। ধান কাটায় শ্রমিক কম লাগবে, খরচও বাচবে।
প্রসঙ্গত, এই বছর বোরো মৌসুমে সিলেট অঞ্চলে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৮ হেক্টর জমি। এর মধ্যে হাওরে ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৩৫ হেক্টর। মোট আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৭৮ মেট্রিক টন।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় অনায়াসে এক একর জমির ধান কিংবা গম কাটা যাবে। একদিনে কাটা যাবে ৮ একর। এতে ৬১ শতাংশ খরচ কমবে, শ্রম বাঁচবে ৭০ শতাংশ। উন্নত এই কৃষি যন্ত্র ধান কাটা, একই সঙ্গে মাড়াই ও বস্তাবন্দির কাজও করবে।
গত কয়েক বছর ধরেই হাওরগুলোতে এই কম্বাইন্ড হারভেস্টার দেখা যায়। সরকারি উদ্যোগের ফলে এবার প্রায় সব হাওরেই এই কৃষি যন্ত্র ব্যবহার বেড়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টারের দাম ৩২ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। কৃষক ৩০ শতাংশ টাকা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ডাউন পেমেন্ট দিয়ে কিস্তিতে ক্রয় করতে পারছেন এ মেশিন। রিপার মেশিনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। তবে এই মেশিনের দাম সর্বোচ্চ ২ লাখ ১০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা। এই মেশিন দিয়ে শুধু ধান কাটা যায়, অন্য কিছু করা যায় না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী বলেন, সিলেটে এই বছর বোরো আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। হারভেস্টার ও রিপার মেশিন বিতরণের পাশাপাশি কিভাবে সঠিক উপায়ে ধান কাটা ও মাড়াই করা যায় সেই কৌশলও শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে কৃষকদের।