বাসস দেশ-১৫ : মুকসুদপুরের কদমপুর-সুরপি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির কার্যক্রম বদলে দিচ্ছে ৬ গ্রামের চিত্র

140

বাসস দেশ-১৫
পানি-ব্যবস্থাপনা-সমিতি
মুকসুদপুরের কদমপুর-সুরপি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির কার্যক্রম বদলে দিচ্ছে ৬ গ্রামের চিত্র
॥ হায়দার হোসেন ॥
গোপালগঞ্জ, ১৪ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : জেলার মুকসুদপুরের কদমপুর-সুরপি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির কার্যক্রমে দাশেরহাট, কদমপুর, সুরপি, পাথরাইল, রামচন্দ্রপুর ও সালিনাবক্স নিয়ে এই ৬টি গ্রাামের কৃষি জমিতে এবার ৩ ফসল ফলবে। খাল থেকে দেয়া যাবে সেচ। জলাবদ্ধতা হলে ওই সব জমি থেকে পানি বের করেও দেয়া যাবে। এছাড়া পাট কাটা ও জাগদেয়া সমস্যার সমাধান হবে।
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, কদমপুর-সুরপি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির কার্যক্রমে উপজেলায় দুই স্কিমে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হবে। এতে পাল্টে যাবে এলাকার আর্থ-সামাজিক চিত্র। ফলে সুবিধা পাবে কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, জেলে, ভূমিহীন, বর্গাচাষী, প্রান্তিক চাষী, কৃষি শ্রমিক, কায়িক শ্রমজীবী গোষ্ঠির সাড়ে ৫০০ পরিবার।
এই এলাকায় রয়েছে হাজার একর জমির বেশী। বৃষ্টিপাত বেশী হলে হয় জলাবদ্ধতা, বৃষ্টিপাত না হলে থাকে না সেচ সুবিধা। এলাকার প্রধান ফসল পাট। কিন্তু পাট বড় হলে তা জাগ দেওয়ার জন্য উš§ুক্ত জলা ভূমি, বা পানি দিয়ে টেনে নেয়ার মত অবস্থা থাকে না। ভালভাবে পাটজাগ না দিতে পারলে কৃষকের ভোগান্তি চরমে উঠে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছে এলাকার কৃষক, জমির মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে। কোন কিনারা না পেয়ে জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি তোলেন উপজেলা পরিষদে। সমস্যা শুনে সিদ্ধান্ত হয় পানি ব্যবস্থ্যপনার উন্নয়ন হলে সব সমস্যার সমাধান হবে, করতে হবে সমিতি।
এক দুই করে এই খালের দুপাশের জমির মালিকদের একত্রিত করে গড়ে তোলা হয় সমবায় সমিতি। নাম দেয়া হয় কদমপুর সুরপি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। এই সমিতির কর্ম এলাকা হবে দাশেরহাট, কদমপুর, সুরপি, পাথরাইল, রামচন্দ্রপুর, সালিনাবক্স। সদস্য সংখ্যা এক-দুই করতে করতে ৩১২তে পৌঁছায়। করতে হয় নির্বাহী কমিটি। এর পর প্রয়োজন হয় সমিতি নিবন্ধন করার জন্য। সকল নিয়ম কানুন মেনে জেলা সমবায় অফিসারের কাছে করা হয় সমিতি নিবন্ধন করার আবেদন। জেলা সমবায় অফিসার ফায়েকুজ্জামান ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদন করেন। এর পরে এই সমিতি দেখভালের দায়িত্ব নেন মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি।
মুকসুদপুর এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী সজল কুমার দত্ত বাসসকে জানান, কদমপুর-সুরপি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি নিবন্ধন পায়। পরে রাজধানী আগারগাঁওস্থ এলজিইডি ভবনে প্রকল্প পরিচালক শেখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম গত জানুয়ারি মাসে এই সমিতির আওতায় ৮ ধরনের উপ-প্রকল্প গ্রহণ করে তার প্রাক্কলন প্রাপ্তি সাপেক্ষে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। এই বরাদ্দে উন্নয়ন কাজ করার জন্য সর্বমোট ২০টি এলসিএস কমিটি গঠন করা হয়। ওই এলসিএস কমিটিগুলো দৈনিক ভিত্তিতে শ্রমের বিনিময়ে জেলা সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্দেশনামতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।
এজন্য উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলী রইচউদ্দীন, কমিনিউটি অর্গানাইজার বিজন কান্তি দত্ত, সাধারণ ফ্যাসিলেটেটর হিসেবে দ্বীন ইসলাম শেখ দায়িত্ব পালন করছেন।
সজল কুমার দত্ত আরও জানান, বর্তমান শুস্ক মৌসুম এবং বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই মাটির কাজগুলো করার জন্য এসসিএস কমিটিতে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খাল খনন কর্মসুচি শেষ হবে।
প্রকল্পের নিয়ম অনুয়ায়ী খালের পাশ দিয়ে নতুন কাটা মাটিতে গাছ রোপন করা হবে। এজন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা।
কদমপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং সাবেক ইউপি সদস্য আবু বক্কর জানান আমরা দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতাসহ নানাবিধ সমস্যায় ভুগছিলাম। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে আমাদের ক্ষেতের মাঠে আবার সোনা ফলবে। আমাদের প্রধান অর্থকরি ফসল পাট কাটা, জাগদেয়া যে মহাবিপদে কৃষককূল পড়তো সেই সমস্যার সমাধান হবে। কৃষি জমিতে এবার ৩ ফসল ফলবে। প্রয়োজনে খাল থেকে সেচ দেয়া যাবে। আবার জলাবদ্ধতা হলে ওই সব জমি থেকে পানি বের হয়ে যাবে।
কদমপুর সুরপি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সম্পাদক শাহ নেওয়াজ জানান, এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি পুরণ হতে চলেছে। এটা বাস্তবায়নের জন্য এলাকার সকল জমির মালিক, কৃষক শ্রমিক সম্মিলিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আপ্রাণ কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে এলাকার সকলের আর্থ-সামাজিক চিত্র পাল্টে যাবে।
সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান মিয়া জানান আমাদের সমিতির মোট সদস্য ৩১২জন। সবচেয়ে বড় সংযোগ হবে মুকসুদপুরের ঐতিহ্যবাহী দুটি বাওড়ের। আটাডাঙ্গা বাওড় ও মুকসুদপুর বাওড় এর সুস্বাদু মিঠা পানির মাছ এর যোগাযোগসহ নৌ-যোগাযাগ বাড়বে। সুবিধা পাবে সাড়ে ৫০০ পরিবার। পাল্টে যাবে আর্থ-সামাজিক অবস্থা।
বাসস/এনডি/বি.প্র./সংবাদদাতা/১৫০০/কেজিএ