বাসস দেশ-৭ : একুশে আগস্ট হামলার আলামত আদালতের অনুমতি ছাড়াই নষ্ট করা হয়েছে

135

বাসস দেশ-৭
২১ আগস্ট-মামলা-বিচার
একুশে আগস্ট হামলার আলামত আদালতের অনুমতি ছাড়াই নষ্ট করা হয়েছে
ঢাকা, ২৭ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনার আলামত আদালতের অনুমতি ছাড়াই নষ্ট ও ধ্বংস করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান আজ আসামী লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক পেশকালে আদালতে এ কথা বলেন।
সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, নিরস্ত্র মানুষের সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনা শুধু এশিয়া মহাদেশেই নয় পৃথিবীর ইতিহাসেও নেই।
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে। মামলায় এ পর্যন্ত ৪৪ আসামীর পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হয়েছে।
আজ ছিল এ মামলার যুক্তিতর্ক পেশ করার ১১০তম দিন।
বাবরের পক্ষে আজ ষষ্ঠ দিনের মতো মুক্তিতর্ক পেশ করেছেন তার আইনজীবী নজরুল ইসলাম। এ আসামীর যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হলে আসামীপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ সমাপ্ত হবে। আগামীকাল ২৮ ও পরদিন ২৯ আগস্টও মামলার তারিখ ধার্য রয়েছে।
আজ আসামী বাবরের পক্ষে তার আইনজীবী এ মামলার সাক্ষি আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম (পিডব্লিও-১৫৩), মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম (পিডব্লিও-১৫৪)-এর সাক্ষ্য থেকে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। এছাড়াও মামলার আসামী মুফতি হান্নান ও মাওলানা আবদুস সালামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে যুক্তিতর্ক তুলে ধরে আসামীপক্ষ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহ্হার আখন্দের (পিডব্লিও-২২৫) সাক্ষ্য থেকে যুক্তিতর্ক তুলে ধরছেন আইনজীবী নজরুল ইসলাম। এ যুক্তিতর্ক অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম কাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে।
আদালত আজ আসামী বাবরের আইনজীবীকে সাক্ষ্য ও জবানবন্দি থেকে প্রাসঙ্গিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে তাগিদ দিয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌসুঁলি সৈয়দ রেজাউর রহমান, বিশেষ পিপি মো. আবু আব্দুল্লাহ্ ভ্ুঁইয়া, আকরাম উদ্দিন শ্যামল. এডভোকেট ফারহানা রেজা, আমিনুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এডভোকেট আমিনুর রহমান বাসস’কে বলেন, ২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামীর সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে ৩ জন আসামীর অন্য মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ৩ আসামী হলেন- জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল। এখন ৪৯ আসামীর বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনো তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন পলাতক। বাবর, সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন আসামী কারাগারে ও ৮ জন জামিনে রয়েছেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামীপক্ষ সাক্ষিদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
বিচারের মূখোমূখি থাকা ৪৯ আসামির মধ্যে জামিনে রয়েছেন- বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম। মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
বাসস/এএসজি/ডিএ/১৬৫০/কেকে